“আমি করোনা পজিটিভ ” কবিতাটি লিখেছেন সভ্যতা গড়ার অন্যতম সারথি কবি-রোজী নাথ ।

525
কবি-রোজী নাথ ।

আমি করোনা পজিটিভ

                                      রোজী নাথ

সারা দেশ জুড়ে যখন লকডাউনের শুনশান নীরবতা , আমার ঘরে তখন দেয়ালে দেয়ালে লেগে থাকা ক্ষুধা।
নিত্য খেটে খাওয়া যার জন্মকালেরই ভাগ্যের লিখন তার কাছে আর কতটুকুই গাঁটের সঞ্চয় থাকতে পারে বলো?
হতভাগা এক দিনমজুর পরিবারের কি আর জমিজমার সুখের কপাল হয়?

নুন আনতে পান্তা ফুরানো এই গৃহলক্ষীর সকাল সন্ধ্যে গতর খাটা না হলে যে বাড়ির উঠানে অমাবশ্যার নিশ্ছিদ্র আঁধারটাও ঠিকমত তার আঁচল ফেলে না।
ঘরে নিষ্পাপ একটা দুধের শিশু আজও তার মায়ের গন্ধের সাথে ঠিকমতো পরিচয় সেরে উঠতে পারেনি ;
অসুস্থ স্বামীর অসহায় চোখে সোহাগের ছায়া যেনো অস্তমিত এক সূর্যের করুন অশ্রু।

বৃদ্ধা শ্বাশুড়ি আর অন্ধ শ্বশুর আমার ঘরের বেঁচে থাকা সাবেক ছাদ , তাই পাঁচ বাড়ি ছুটতেই হয় আমাকে কাজের তাগিদে।
বাবুদের গৃহসুখ মসৃণ করতে গিয়ে কোন চোরা সময়ের শিকার হলাম আমি , কে জানে?
আমিও নাকি অসুস্থ , তাই গৃহবন্দী ; মাথার উপর ভেঙ্গে পড়া একটা আকাশের নির্জন সাক্ষী এখন আমি।

আমার এই আষ্টেপৃষ্ঠে জড়ানো প্রিয় ঘরটার এখন উনুন জ্বলবে কি করে ? কি করেই বা সংসারের প্রদীপ জ্বলবে?
পরশিরা এগিয়ে এলেও ক’দিন বলো বর্ষা থাকবে?
অজানা এক আশঙ্কার কুলে আমি ঘুমিয়ে বিস্তর দুঃস্বপ্নের ধূধূ মাঠে পায়চারি করি।

করোনা পজিটিভ আমি । আমি তো বেঁচেই গেলাম ,
কিন্তু আমার সেই গৃহস্থ চেহারা গুলো চৌদ্দ দিনের নির্বাসনে ডাক্তার আর নার্সের চোখের মণিতে মণিতে তাঁদের আদরের গৃহলক্ষীকে খুঁজবে না তো?
আমার সেই আদরের চাদরে জড়ানো শিশুটির জানো কতদিন ধরে খোলা আকাশের নিচে পাখি দেখা হয় না।
জানি না কবে সে সুস্থ হয়ে ঘরে ফিরে তার আদরের মামণিকে খুঁজবে, সকল কষ্ট ভুলে যাওয়ার জন্য।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here