ওপার বাংলার কলমযোদ্ধা শুক্লা ভৌমিক এর জীবন ছোঁয়া অসাধারণ গদ‍্য কবিতা “মায়ের অন্তরেই আছি”

662

মায়ের অন্তরেই আছি 

                                   শুক্লা ভৌমিক

মাগো !
যেদিন আমি এসেছিলাম তোমার কোলে,আমাকে দেখতে আসা সকলে বলেছিলো নিশ্চই !
“মেয়ে হয়েছে গো !
পরের ধন ! ”
আমি কি তোমার পর ?
আমি জানি, তুমি আমাকে তোমার অংশই ভেবেছ ।
তাই তো স্নেহআঁচলে জড়িয়ে ,দু-হাতের আদরমাখা উষ্ণতায় বড়ো করেছ।
মাগো!
যেদিন আমি তোমার হাত ধরে প্রথম গিয়েছিলাম স্কুলে,পড়শীরা বলেছিল নিশ্চই !
“মেয়ে মানুষ তো !
অক্ষর জ্ঞানটুকু হলেই হল !
যাবে তো সেই পরের বাড়ি , তোমাকে পর করে !”
আমি কি তোমার পর ?
আমি জানি তুমি সে কথা শুনেও শোনোনি।
তাই তো সন্ধ্যার পর একচালা রান্নাঘরে হাজারো ব্যস্ততার মধ্যে তোমার শেখাটুকু দিয়ে আমাকে সাধ্যমত শেখানোর চেষ্টা করেছ।
মাগো !
যেদিন আমি তোমার আঁচল ছেড়ে গেলাম এক অচেনা পৃথিবীতে,আশেপাশে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষ গুলি বলেছিল নিশ্চই !
“আজ থেকে পর হল তোমার মেয়ে !”
সত্যি বল তো মা !
আমি কি তোমার পর ?
আমি জানি ,আমার আড়ালে তুমি আমার বালিশটাকে দেখে আমার কথা মনে করেছ।
আমার প্রিয় খাবারটা রান্না হলে ,আমার কথা ভেবেছ।
আমার ফেলে আসা জামাকাপড় গুলোকে গুছিয়ে রেখেছো, আমি আবার এসে সেগুলি পড়ব একথা ভেবে।
আমার আসার কথা শুনলে তুমি অপেক্ষা করে বসে থাকো।
আমি জানি ,শরীরের উদ্বেগগুলি তোমাকে খুব কষ্ট দেয়।
তুমি হয়ত চাও ,তোমার পাশে থাকি।
পরিস্থিতি হাত-পা বেঁধে রাখে,যাওয়া হয়না তোমার কাছে।
খুব ইচ্ছে হয় ,তোমার গায়ের কাছে বসে ,তোমার শাড়ীর আঁচলটা মুখের কাছে চেপে মা..মা..গন্ধটা শুঁকি।
খুব ইচ্ছে হয় তোমার ঘুমের সময় তোমার মাথায় একটু হাত বুলিয়ে দিই।
সত্যি ! বড় অসহায় পরিস্থিতির কাছে।
তাই যাওয়ার কথা ভেবে ,গলার কাছটা কষ্টে দলা পাকিয়ে উঠলেও, যেতে পারি না।
হাত-পা বাঁধা।
তবুও জানি দূরে থেকেও আমি তোমার পর নই।খুবই আপন ,খুবই কাছের।
কারণ ! আমি তোমার অন্তরেই যে আছি।
——

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here