সুবর্ণ জয়ন্তী
নাসরিন জাহান মাধুরী
ছাব্বিশ মার্চ তুমি এলেই আমার অনেক কথা মনে পড়ে যায়…
যে শৈশবের কথা মনে থাকার কথা নয় তাও মনে পড়ে যায়….
হয়তো এতোবার শুনেছি, শুনতে শুনতে যে দৃশ্য এঁকেছি কল্পনায়
তাই ভেসেভেসে আসে ফিরে আসে মনের কোণে পঁচিশ মার্চ কালো রাত্রির কথা…
৩ মার্চ পল্টন ময়দানে স্বাধীনতার ইশতেহার
জাতীয় সংগীত ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি’।
বজ্রকন্ঠে ৭ মার্চ।
জাতির পিতার কালজয়ী ভাষণ,
‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’।
উদবুদ্ধ বাঙালির অসহযোগ আন্দোলন প্রবল রোষে
যুদ্ধের প্রস্তুতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারা বাংলাদেশে।
হতচকিত পাকিস্তনি ফুঁসে ওঠে যেন বিষধর নাগিনী..
২৫ মার্চের সেই ভয়াল কালো রাতে নিরস্ত্র অসহায় মানুষের ওপর ঝাঁপিয়ে পরে হিংস্র পাক বাহিনী..
ঢাকার বুকে আকস্মিক আঘাত
অপারেশন সার্চ লাইট…
দাউদাউ জ্বলছে পলাশীর বস্তি
পিলখানায় ইপিআর
কেঁপে কেঁপে ওঠে শহর প্রাণের ঢাকা আমার
বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলে আগুন
আতংকিত ছাত্রীদের হল থেকে বের হওয়ার মুখেই ব্রাশফায়ারে খুন…
জগন্নাত হল,জহরুল হক হলে চলে নির্বিচারে হত্যা…
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিক্ষক পড়ে আছে লাশের স্তুপ রক্তের স্রোতে
নিভতে থাকে একে একে প্রাণের বাতি
গুলি, আগুন – জ্বলছে শহর, মরছে মানুষ
আহারে মানুষ! পশুওকেও কেউ মারে না এভাবে তাদের স্বজাতি...
ভয়ে আতংকে সবাই অন্ধকারে লুকায়
আপন জনেরা জড়িয়ে থাকে একে অন্যকে
বুকের ধুকপুকানি শোনা যায়..
ভোরের প্রতিক্ষা…
এতো লম্বা রাত! হয় না কেন ভোর…
এ শহর আমার! আমি কেন ছাড়বো এ শহর!
বাঁচতে হবে আগে করতে হবে জন্ম ভূমিকে রক্ষা..
ভোরের আজান ভেসে আসে
পদ্মা মেঘনা যমুনায় রক্তের স্রোতে লাশ ভাসে
আহারে মানুষ…
২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা..
তাইতো ২৬শে মার্চ স্বাধীনতা দিবস।
স্বাধীনতার প্রত্যয়ে দেশজুড়ে শুরু হয় প্রতিরোধযুদ্ধ..
সমগ্র বাঙালি জাতির সম্মিলিত স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে দেশ বিক্ষুদ্ধ
৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ
কত প্রাণহানি আর ধ্বংসযজ্ঞ
১৬ ডিসেম্বর উদিত হয় স্বাধীনতার সূর্য..
সেই বিজয় নিশান উড়ে
বাংলাদেশ দাঁড়িয়ে আজ পঞ্চাশ বছরে..
বাংলাদেশ রয়ে যাবে ততোদিন যতোদিন থাকবে এ ধরা
সাথে রয়ে যাবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের বজ্রকন্ঠ সেরা..