বিকাশ চন্দ’র
চারটি কবিতা
১- চিত্রপট
=====
মানুষ জানে স্বস্তি কাল আসে,
সকলি গচ্ছিত প্রত্ন ঘরে আলো ফেলে চাঁদ —
একদিন সকল মাটির ঘরে পবিত্র গম্বুজ জাগে
ঋজুময় জ্যোতি ফেলেছে ফুল পাখি গাছ ঘরে,
প্রেম লেগেছে বাতাসে নিঃশ্বাসে —
এ গ্রীষ্মের অন্তরে মেঘ কালো দিন নেই আজ
সান্ধ্য প্রহরে আকাশ গঙ্গায় চাঁদ হেসেছে।
অতল স্পর্শ চিরন্তন মায়া কাজল ভিজেছে একাকী —
করতলে অর্ঘ্য ছিলো কি আঁচল ঘেরা,
কাজলা দিঘির ঘাটের শ্যাওলায় অমৃত জল ছায়া—
চমকে দেবে রাত পাখিদের ঘরে ফেরা তাড়া,
এখন উজ্জ্বলতা কেবল বিরলতম প্রাণের পরশ
এক হৃদয়ে সকল হৃদয় ছোঁয়া।
বাবলা ঘেরা হলুদ রাঙা মুক্ত আকাশ ছোঁবে —
ঝুমকোলতা কৃষ্ণচূড়ায় আঁকা বেনারসি বাহারি
দোসর আমার চতুর্পাশের এক ধমনীর টান,
একফালি চাঁদ উজ্জ্বলতা আগলে আলোর দেশ
উবুড় সে এক চিত্রপটে হৃদকমলটি আঁকা।
২-রক্তমুখে জন্ম অসুখ
==============
জাত দিচ্ছি ধর্ম দিচ্ছি ঘৃণিত অন্ধকার
বন ভোজনে দিচ্ছি গণ্ডূষ গণ্ডূষ রক্ত,
যদি পড়তে জানো তবে খোঁজ ভাষা
মনে রেখো ভালো গাছেরা জানে পাতায় জয়ের উৎসব,
মোহময় জয় তোরণের তলায় মাথা মুড়িয়ে চলে গেছে
বন্দী দশার বোবা সৈনিক আর ক্রীতদাস সন্ন্যাসী।
অভাগীর দগ্ধ দেহের যন্ত্রণায় মৃত্যু ও কেঁদেছিল—
ঠোঁটের ডোগায় লজ্জায় থমকে খিলখিল হাসি,
মেঘদূত ভুলে গেছে মেঘবৃষ্টির সংলাপ।
অনাবৃত চেহারায় ঘুরে বেড়াচ্ছে অসহিষ্ণু যোগী—
কয়লা কালো সিঁড়ি বেয়ে স্বর্গ স্থপতি
সোনালী সাপের মতো শরীর ঢেকে ঝক ঝকে নীলে।
মাঠ ময়দান জনপদ খোঁজে চেনা গাছের সেই নিজস্ব ফুল—
বোবা রত্নাকর দেখে আবারও প্রত্ন কক্ষে গোপন কৌশল,
আবারও ধূসর গহ্বরে উল্কি কথা—
জন্ম নেবে অচেনা নক্সিকাঁথা।
গাঁইতি শাবলের ঠোক্করে নির্বাক লক্ষকোটি বেকারের মুখ
নিঃসাড় কবরের ঘুম ভাঙে কোথাও কি ছিল মৃত্যু চুম্বন,
গোপনে আবারও ভুলপথে ঘোরে অন্য ভূবন দেখে—
বিষাক্ত ধূলোয় আলো হীন বুকে রক্ত মুখে জন্মের অসুখ।
৩-উঠোন
=====
জন্ম ভিটের প্রাচী পত্রের শব্দমালা জানে—
দেয়ালে দেয়ালে শ্যাওলা মাখে আলোর ইস্তাহার,
স্বর্গ আলোর ঈশারায় হাসে
নীল আকাশের শরীরে তখন চন্দ্র কলার শুরু—
অক্ষত চিরকাল আলো অক্ষর দয়াময়,
মরণ প্রহর কালে ফুল পাখি গাছেদের হাওয়া
মহান স্থপতি ও প্রার্থনা রত অবিনশ্বর ক্ষমায়।
বাতাসে ভেসেছে আজ চেনা আয়ু ঘ্রাণ—
অকাল বৈশাখী লুকোচুরি মেঘ রোদ,
চেনাস্বরে কথা বলে চাতক দোয়েল কোকিল
আহ্নিক বেলায় সমুদ্র বাতাসে তখন আজানের ডাক।
প্রাণে প্রাণ তখন কোমল ব্যাকুলতা প্রার্থনা ঘরে
হাজারো হাসির ভেতর স্বপ্নেরা আলো মাখে
তবুও দলা পাকিয়ে থাকে কান্নার ডাক।
মায়াময় চেনা কণ্ঠস্বর ভাসে আলোয় ছায়ায়।
আঁজলা ভরে সকল অঙ্গীকার উজাড় আঁচলে —
কোন অনুধ্যান মহাশূন্যে জাগে বিষ্ময় কাল,
রূদ্ধবাক সময় দাঁড়িয়ে প্রার্থনা প্রহর —
একাকী অচেনা সময় উঠোনে আলোর মানুষ।
৪-জীবন্ত পাথরের অন্ধ থাবায়
====================
ঘুমহীন চোখের তারায় প্রতিদিন
নেমে আসে দুখি চাঁদ শোকাহত কলা,
কয়লা কালো রূপের ভেতর আলোর খয়রাতি।
সব হারা দু’চোখে উপচানো রক্ত বিন্দু—
আবারও মগ্ন লীলা পিছলে যায় সাপের মতো,
রাতারাতি প্রেমালাপ জমে যায়
পোশাকের আড়ালে পাথুরে শ্লেটে কাটাকুটি।
দিব্যি ছিলো ছিপছিপে শরীর উড়ে যায় দেশ বিদেশ
শাদা পাতায় জ্যামিতি ত্রিকোণমিতি বীজগণিত পাটিগণিত
বর্ষার আকাশ ও লজ্জানত কালো ইশারায় স্থির,
যদিও বৃষ্টি ধোবেনা কলঙ্কিত সিংহাসন।
জীবন্ত সোনায় সোহাগা তরলিত দুধে কি অমৃত,
কী রোম্যান্টিক রাত জাগে কৃষ্ণ সোহাগ
এপারের মাটি ছুঁয়ে বেগবতী ইছামতী।
দিব্যি ঊষা লগ্ন জানে ওপারের গোধূলি বৈতরণি
এপারের ধর্মের জিরাফ দেখে ওপারের মেঘ পরী।
এপারে কাতরায় বহুস্বর জীবন্ত ক্ষিদে সিংহের মতো
জল আলো মাটি পথ জানে শিক্ষার অসহনীয় দশা,
সকল অস্তিত্ব ভাসে ভাসায় ছিন্ন করে জানে আনপড় রাজা —
মহামতি সরীসৃপ বেপথু জীবন্ত পাথরের অন্ধ থাবায়।