” বন্দিদশার জীবন ও ভালোবাসা”
সপ্তশ্রী কর্মকার
সব ভালোবাসাগুলি প্রকাশিত হয় না কোনো সোস্যাল মিডিয়ার ভীড়ে। কারণ একটু আলতো ছোঁয়ার পরশে সবার ভালোবাসার স্বাদটা আলাদা। রোজদিন সেই ব্যস্ত সিডিউল, কিন্তু মাসের হাতেগোনা চারটা রবিবার খুব আলাদাভাবে কাঁটে সবার কাছে। কেউ বাড়িতে কাটায়, কেউ বা বন্ধুদের সাথে আগরতলার কোন রাস্তার ধারের টিফিনের দোকানে গিয়ে খাওয়া, বা ঘুরতে যাওয়া, বা হয়তো দুপুরে কব্জি ডুবানো পাঁঠার ঝোল দিয়ে বিরিয়ানীর লুটোপুটি খাওয়া আর শেষপাতে “রসগোল্লা” । সারাদিনটা কাঁটে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে। আর বিকেলটা কাটে লং ড্রাইভে হাতে হাত ধরে ঘুরতে যাওয়া (আগরতলা) “গল্ফের” মাঠে বা “রাজবাড়ির” ঐ ভীড় পার্কে।
রোজদিনের সেই সাপ্তাহিক ছুটির অবসান আবার সপ্তাহ শুরু “সোমবার” দিয়ে। যে যার যার কাজে ব্যস্ত ঘরে ফেরা সেই “বেলাশেষে”। কফির চুমুকে সন্ধ্যাটা কাটিয়ে রাতের অন্ধকারে যখন ক্লান্তহীন চোখে আর ঘুম আসে না তখন অনুভূতিগুলো জেগে উঠে ‘শৈরিক’ চেতনার ভারে। কখনো অক্ষিগোলক ঘুমিয়ে বা লেইটনাইট ফোন কনভারসেশনে।
আজ লকডাউনের চতুর্থ পর্যায় । চারিদিকে চলছে দুর্বিষহ মহামারী, ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের ধারা সারা বিশ্বে।
ভাবতেও অবাক লাগে চারিদিকে ভয় আর লক্ষাধিক মৃত্যু মিছিলের যাত্রা। ডাক্তার আর স্বাস্থ্য কর্মীদের করুণ অবস্থা, যা ভাবলেও গা শিউরে ওঠে। পরিবারের সবাই যেন
“অ-কেজো” ভারপ্রাপ্ত মনে দায়সাড়া কাজ। সাবধানতার জেরে কঠিন লকডাউনে জীবনযাপন সেনিটাইজার আর মাস্কে দমবন্ধ নিয়ম।
সবার মা-বাবা বড্ড চিন্তায়, সন্তান যেন সুস্থ থাকে, আমিও তদ্রূপ বাবা-মা কে নিয়ে। এদিকে শুনশান রাজপথ ও চারিদিকে যেন বসন্ত বিদায়ের কাঁদন গিয়ে কালবৈশাখীর ঝড়কে “আমফান ” হঠাৎ তছনছ করে দিলো। “মালতী” চা বাগানের রাস্তায় কেউ আর প্রাতঃ ভ্রমণে যায় না, সবাই লকবন্দি জীবনে রিমোট হাতে টিভি চ্যানেল ঘোরাচ্ছে বিভিন্ন নিউজ চ্যানেলে আর খবরের কাগজ পড়তে ব্যস্ত, এদিকে চোখ ধাঁধাচ্ছে মোবাইল।
বাড়ির সামনের রাস্তায় আর বাইক-গাড়ির হর্ণ পাওয়া যায় না, নিঝুম দুপুর কাটে খা-খা রোদে আর ধূলিতলে। কিন্তু ব্যাক্তিগত দৃষ্টিগোচরে দেখলাম, প্রকৃতির এক নতূন রূপ, নীলাভ আকাশে তুলোর মতো মেঘ, পাখিদের কিচিরমিচির, রাস্তার ধারে গজানো দূর্বা। কিন্তু বিকেলে আর কোনো আড্ডা নেই পাড়ার মোড়ে, শব্দ বলতে সন্ধ্যায় আর পূজোর সময়ে ঘন্টা আর কাসরের আওয়াজ। সব যেন একনিমিষে থমকে গেল। সৎসঙ্গের সেই প্রার্থনা আর হয় না, ঘড়ির কাঁটা থমকে গেছে মনে হয়। দুপুরটা এখন কাঁটে আমার ‘নেটফ্লিক্স’ও অনুগল্পের বই এর চরিত্র উদ্ঘাটন নিয়ে।
ভালো আর লাগে না – – – মনে ঘোর ঘনঘটা চলছে,
“হয় না দেখা হয় না কথা”—ভাবনার অন্তরালে জমে আছে হাজারো অনুভূতি। যা ভিডিও কলের মুহূর্তেও হয় না পূর্ণ । বেঁচে থাকার আশা পূরণে শত আকাঙ্ক্ষায় চোখ ভরা স্বপ্ন ছলছল করছে আগামীর অপেক্ষায় । মনে চিন্তা থাকলেও কপালের ভাঁজ কে অদৃশ্য বোঝাতে, বাড়ির সবাইকে অচিন্ত্য বোঝাতে ব্যস্ত মন ও প্রিয় তোমাকে।
“প্রেমিক তুমি আজ আমার মনের নিজনপুরে”,
“নিঝুম রাতে ফিসফিস করো ফোনে ব্যথার সুরে”।
কোয়ারেন্টাইনের নীরব নিশীথ রাতে,
শুধু জল আসে আঁখিপাতে।
আমার উড়নার ঐ তৃষিত আকাশে,
কাঁদে বিদায়ী বসন্তের চাতক আকুল পিয়াসে।
আমার আমিত্বের ঐ মহুলের বনে তুমি মিলন কাঙ্ক্ষার শ্যাম,,
অমানিশার ঘোর দুর্যোগ কাটিয়ে উদ্ভাসিত হোক পূর্ণিমার চাঁদ অভিরাম।