হঠাৎ পৃষ্ঠা উল্টানো থেমে গেল।পৃষ্ঠার উপর চোখ পড়তেই আঁতকে উঠল হিমাদ্রি!অস্পষ্ট স্বরে বলে উঠলো,একি!!! সাহিত্যের অন্যতম সারথি লাকী ফ্লোরেন্স কোড়াইয়া এর ধারাবাহিক রহস্যময় ভৌতিক গল্পের ১ম পর্ব ”ছায়া মানবী”

930

” ছায়া মানবী ”

                 লাকী ফ্লোরেন্স কোড়াইয়া

হঠাৎ দমকা হাওয়ায় টেবিলের উপর রাখা পানির গ্লাসটা পরে গেল!কাগজগুলোও ঝরা পাতার মত উড়ে মেঝেতে ছড়িয়ে পড়ল।দুর ছাই বলে জানালাটা দিকে তাকাতেই চমকে উঠলো হিমাদ্রি!একটা মুখ যেন সরে গেল জানালা থেকে!খুব পরিচিতি একটা মুখ!কোথায় দেখেছে মনে করতে পারল না!এগিয়ে গেল জানালার ধারে।কেউ তো ছিল এখানে! সন্দেহ প্রবণ মন,কে কে বলে চিৎকার করতেই পাশের ঘর সাংবাদিকের বউয়ের বিরক্ত কন্ঠে হুশিয়ারি বানী-অনেক হইছে,আজ বুঝি পেটে একটু বেশিই পরছে;এবার ঘুমাও…. বেশি পরেছে মানে?কি বেশি পরল!কিছুই মনে করতে পরছে না।কি হল আজ?কি বলছে মিশা এসব।নিশ্চয়ই আবার স্বপ্ন দেখা শুরু করেছে। ভাবল এখনো আমাকে ভালভাবে হয়তো বুঝে উঠতে পারেনি।জানালার দিকে তাকআতেই গেটের কোনায় হালকা আলো চোখে পরল।এগিয়ে গেল জানালার কাছে।নিশ্চয়ই দারোয়ান গাঁজা টানছে।
এই নাও তোমার কফি,
পিছনে ঘুরে দেখল হাতে দু’মগ কফি নিয়ে মিশা দাঁড়িয়ে।
কফি দেখে মনটা ফুরফুরে হয়ে গেল।তুমি আমার ঘুম থেকে উঠে এলে কেন?ধমক ও দিলে আবার কফি ও নিয়ে এলে,বাহ!
উঠে এলাম কি গো?আমি তো টিভি দেখছিলাম।আর ধমক দিলাম কখন?অবাক হয়ে জানতে চাইল মিশা।
একটু আগে তুমি যে আমায় ধমক দিয়ে ঘুমাতে বললে!
হা হা হা শব্দে হেসে উঠল মিশা।হাসিটা কেমন যেন অপরিচিত মনে হল হিমাদ্রির কাছে।আজ মিশাকে অন্য রকম সুন্দর লাগছে!হালকা গোলাপি নাইটি পরেছে মিশা।চুলগুলো কাঁধের এক পাশ দিয়ে সামনে টেনে রেখেছে।হাসি থামিয়ে যা বলল মিশা,তাতে হিমাদ্রি সাংবাদিক না হলে মাথা ঘুরে পরে যেত!হিমাদ্রির আরেকটা পরিচয় আছে,অসাধারণ লিখে।সাংবাদিকতার পাশাপাশি লেখক হিসাবে ও বেশ নাম ডাক আছে।
হাসি থামিয়ে মিশা বলল,আরে কি একটা ভুতের মুভি দেখছিলাম।ইঠাৎ জোরে বাতাস এসে নায়কের স্টাডি রুমের টেবিলের পানির গ্লাস ফেলে দিল,কাগজ সব মেঝেতে পরে গেল।আর জানালায় কি দেখে লেখক নায়ক কে কে বলে চিৎকার করতেই পাশের ঘর থেকে বউয়ের সেই ধমক খেল।অনেক হইছে,আজ বুঝি পেটে একটু বেশিই পরেছে,;এবার ঘুমাও!এমন বলে দিল।আর তুমি বলছ,আমি তোমাকে ধমক দিয়েছি, বলেই আবার হাসতে লাগল মিশা।
এটা কি করে সম্ভব?একই ঘটনা টিভিতে আর বাস্তবে নিজের সাথে কীভাবে মিলে গেল?কিন্তু মিশাকে কিছুই বলল না।মাত্র সপ্তাহ খানেক হয় এই বাড়িতে নতুন এসেছে,কিনা আবার ভয় পেয়ে সকালে উঠেই বাড়িতে চলে যেতে চাইবে, ভেবে বলল,ও তাই বল!চল ঘুমাতে যাই।খালি মগটা মিশার হাতে দিল।মিশা ঘর থেকে বের হতেই হিমাদ্রি ফিরে তাকালো জানালার দিকে।বাইরের বাগান টা এখন স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।আকাশের মন ভাল হতে লাগল আর অন্ধকার যেন কোথায় হারিয়ে যেতে লাগল।আধো আলো আর আঁধারের সংমিশ্রণে এক মায়াবী পরিবেশ যেন হাতছানিতে ডাকছে এমন মনে হল হিমাদ্রির।দ্রুত ঘর থেকে বেড়িয়ে এল।
সকালে অফিসে যাবার সময় মনের মধ্যে কিছু প্রশ্ন যেন দানা বাঁধতে লাগল।সপ্তাহ দুয়েক হল এখানে নতুন এসেছে,কাউকে তেমন চিনে ও না।মিশাকে একা রেখে যেতে মন চাইছে না যেন।পরক্ষণেই মনে হল আরে দুর কি ভাবছি এসব?দারোয়ান আছে,নাইট গার্ড আছে তো এত্ত ভাবার কি আছে?দুই সপ্তাহ তো এমন ভাবিনি,তবে এমন কি ঘটল যে ভেবে বয়স বাড়তে হবে?
আরে কি ভাবছো?শুধু কফিই খাচ্ছো,এত্ত কষ্ট আলু পরোটা করলাম কার জন্য শুনি?কফির মগ নিয়ে পাশে বসে মিশা শাসনের স্বরে বলল।
বাপরে,তুমি কখন এসব করলে?মিশার কথাতে টেবিলের উপর চোখ পড়ল হিমাদ্রির।গরম গরম আলু পরোটা, সবজি ভাজি,ডিম ভাজি!বাব্বা,তুমি তো পাক্কা গৃহিণী হয়ে গেলে সুন্দরী মিশা!বলেই হা হা হা শব্দে হেসে ফেলল হিমাদ্রি।
আরে ভাই সাংবাদিক, বিয়ের তিন মাসে একদিন ও কি ঠিক মত ঘরে নাস্তা করেছেন সকালে বা বিকালে?বুঝবে কি করে আমি কি পারি আর পারিনা!হুম?চোখের ভ্রু নাচালো মিশা!
গত তিন মাসে এমন দৃশ্য দেখেনি হিমাদ্রি। মিশা মাধুরি দীক্ষিতের মত ভ্রু নাচাতে পারে?তাকিয়ে রইল প্রিয়তমা স্রীর দিকে!
কি হল?জানতে চাইল মিশা।
সুন্দরের প্রতিমা তুমি
দেখিনি তো আগে,
কী রূপ লয়ে এলে গো তুমি
আমায় ডুবালে ভাবনার মাঝে!কেমন হল? হুম?বাম হাত দিয়ে ভ্রু টা উপরের দিকে টেনে জিজ্ঞেস করল হিমাদ্রি।
অসাধারণ! কখন লিখলে?
লিখিনি,এখনই বললাম।তবে বাকিটুকু লিখে ফেলব তোমাকে ভেবে!এখন বের হব।আজ কিন্তু ঘরে লাঞ্চ করব পাক্কা।তাড়াতাড়ি ফিরব বুঝলে সুন্দরী! বেড়িয়ে গেল হিমাদ্রি।দরজায় হাত দিয়ে তাকিয়ে রইল মিশা যতক্ষণ পর্যন্ত হিমাদ্রি গেটের কাছে না গেল।
গেটের কাছে গিয়ে দারোয়ান মিজানের কাছে নাইট গার্ডের খোঁজ করতেই মিজান ঝট করে প্রশ্ন করল,কেন স্যার?কোন সমস্যা?রাইতে কি…কথা শেষ হবার আগেই ফোন বেজে উঠল, এর ড্রাইভার গ্যারেজ থেকে গাড়ি বের করে এনে দরজা খুলে দিল।দারোয়ানের উদ্দেশ্যে হাত নেড়ে হিমাদ্রি গাড়িতে উঠে পড়ল।গাড়ি বের হতেই মিজান গেট বন্ধ করে দিল।মুখটা খুবই চিন্তিত দেখালো।
মিজান ভাই,নিজের নাম শুনে চমকে উঠলো মিজান।অন্যমনস্ক থাকার কারণে খেয়াল করতে পারেনি কোন দিক থেকে শব্দটা এসেছে?তাই চমকে গিয়ে গ্যারেজর দিকে তাকালো।
এই যে এই দিকে মিজান ভাই,বাসার বারান্দা থেকে হাত নেড়ে মিশা ইশারা করল।
গেট থেকে বাসার দুরত্ব মাত্র দুই মিনিটের,তবুও মিজানের মনে হল যেন কত দুর থেকে মিশা তাকে ডাকছে!কত পরিচিত কন্ঠ যেন!এসব কি ভাবছে?এগিয়ে গেল,আপা,কেমন আছেন?শুকনো হাসি দিয়ে জিজ্ঞেস করল।
বেশ আছি তো!মিষ্টি হাসি দিয়ে মিশা উত্তর দিল।কিন্তু আপনার মুখটা এমন দেখাচ্ছে কেন?
কই না তো, কিছু বলবেন আপা?
হুম,এই লিস্টটা ধরুন,আপনার স্যার আজ দুপুরে বাসায় খাবে,আমাকে এই বাজারগুলো এনে দিন।পারবেন তো?
কি যে বলেন আপা,আপনার যা দরকার পড়বে, বলবেন,আমি কইরা দিব।টাকা নিয়ে মিজান চলে গেল।
ঘরে ঢুকতেই মোবাইলটা বেজে উঠল।মিনু দি নামটা ভাসছে মোবাইল স্কিনে। হ্যালো বলতেই ওপাশ থেকে কিছু একটা বলল।ওপাশের কথা শেষ হতেই মিশা বলল,মিনু দি,তুমি শুধু দশ মিনিটের জন্য এসো।তোমার স্যার আজ বাসায় খাবে গো!ওপাশ থেকে কিছু একটা বলা হল। আচ্ছা,এসো।মোবাইলটা রেখে ঘরের চারিদিকে তাকিয়ে ঝট ফট দরজা -জানালার পর্দাগুলো খুলে নতুন পর্দা ঝুলিয়ে দিল।হঠাৎ কলিং বেলের শব্দে চমকে উঠলো!এত তাড়াতাড়ি তো মিজান বা মিনুদির কারোরই আসার কথা না!তবে কি হিমাদ্রি…দৌঁড়ে গেল দরজায় দিকে।

কাকে চাচ্ছেন?
দরজায় দাঁড়ানো অপরিচিত সুন্দরী মহিলা উত্তর দিলেন,শুনেছি আপনাদের দোতালাটা ভাড়া হবে?তাই দেখতে এলাম।
বাড়ি ভাড়ার কথা শুনে মিশা খুবই অবাক হল।মুখে বলল,কই না তো,এমন তো শুনিনি।আমরা তো সপ্তাহ দুয়েক মাত্র আগে এলাম।
এত্ত বড় বাড়ি,অথচ শুধু একতালাটাই ভাড়া?যেন নিজেকেই প্রশ্ন করলেন ভদ্র মহিলা!
আমি ও তাই ভাবছিলাম।কিন্তু শহরের বাইরে কে ই বা ভাড়া থাকতে চায় বলুন?ঘরের ভিতর থেকে মোবাইল বেজে উঠার শব্দ হল।
আচ্ছা,ধন্যবাদ।আপনার মোবাইল বাজছে,পরে না হয় একদিন এসে আবার খোঁজ নিব।ভদ্রমহিলার মুখে লেগে থাকা নির্মল হাসির আভা পড়ল সারা সকাল জুড়ে।দরজা বন্ধ করে আসতে কল কেটে গেল। মোবাইলটা হাতে নিয়ে মিশার চোখ ছানা ভরা,কোন কল-ই আসেনি।অথচ বাইরে থেকে ফোন বাজার শব্দ স্পষ্ট শুনেছে!গেট খোলার শব্দ জানালা দিয়ে তাকাতেই দেখতে পেল মিজান আর মিনু দি ঢুকছে।তাড়াতাড়ি দরজা খুলে দিল।কিন্তু ভদ্র মহিলাকে বের হতে দেখল না। মিশাকে কপাল কুঁচকে গেটের দিকে তাকাতে দেখে মিজান জিজ্ঞেস করল,আপা,কি হল?কেউ কি আসবে?
না,না,আপনারা ভিতরে ঢুকলেন,কিন্তু উনাকে তো বের হতে দেখলাম না?এত দ্রুত কিভাবে চলে গেলেন?মিশা উত্তর দিল।
কি বলেন আপা,কে আইছিল?আমরা তো কাউকে দেখিনি।আর আমি যাওয়ার সময় তো আমার ছেলেরে গেটের বাইরে রাইখ্যা গেছিলাম।হে ও তো কিছু কয় নাই!মিজান যেন মিশার কথা বিশ্বাস ই করতে পারল না।
তোমার ছেলে ছোড মানু,হইতে পারে পাড়ার পুলাপাইনদের সাথে খেলতে ছিল,তাই খেয়াল করে নাই,হাতের বাজার রান্না ঘরে রেখে বলল মিনু।মিশাকে কাজে সাহায্য করে মিনু।যাকে বলে ছুটা বুয়া।মিনুদির সাথে ভালোই সময় কাটে মিশার।
তাই হবে হয়তো।মিশা বলল।মিজান ভাই,এখানে আলু পরোটা,ডিম ভাজি আর সবজি আছে,ছেলেকে নিয়ে খেয়ে নিবেন আর দুপুরে এসে খাবার নিয়ে যাবেন।মনে থাকবে তো?
মিজানের মনটা কেমন যেন অস্থির হল।কত বছর পর এমন আপন করে কেউ ডাকল।
স্নান সেরে বের হয়ে কি মনে হতেই আলমারি খুলে সুতির হালকা নীল আর সাদা পাড়ের শাড়িটা বের করল।এই গরমের সময় এমন শাড়িই দারুণ উপযোগী। হাঠাৎ মনে হল হ্যা,তাই তো,সকালে যিনি এসেছিলেন তিনি ও এমনই শাড়ি পড়েছিলেন।দারুণ লেগেছিল!ওকে ফাইনাল হল,এটাই পড়ব।বিড়বিড় করে বলল মিশা।অপেক্ষা বড্ড বাজে ব্যাপার! মোবাইলটা হাতে নিতে যাবে,তখনই গাড়ির শব্দ শুনতে পেল।দরজা খুলে দাঁড়ালো একপাশে।ড্রাইভার দরজা খুলে দিতেই নেমে এল হিমাদ্রি।বাম হাতের নিচে চেপে রেখেছিল দুটো ফাইল,মিশাকে দেখে বাম হাত নাড়াতেই টপটপ করে নিচে পড়ে গেল!ড্রাইভার উঠিয়ে দিল। ফাইলগুলো মিশার হাতে দিতেই মিশার কড়া আদেশ,সোজা গোসলে চলে যান স্যার,পেটে আগ্নেয়গিরি জ্বলছে কিন্তু!
আগে তো ঘরে ঢুকতে দাও মহারানী, তা না হলে এখনই বসে পরতে হবে টেবিলে,দারুণ সুগন্ধ পাচ্ছি!কথা শেষ না হতেই স্নানঘরে অদৃশ্য হয়ে গেল হিমাদ্রি। কাঁটায় কাঁটায় পনের মিনিট পর বের হয়ে এল।মিশা খাবার সাজিয়ে যেন মাতা অন্নপূর্ণার মত বসে আছে।খিচুড়ি, মাছ ভুনা,গরুর মাংস ভুনা,বেগুন ভাজা,সালাদ, পায়েস।জয় মাতা অন্নপূর্ণা! বলে দুই হাত করজোড়ে করে কপালে তুলে মুখোমুখি চেয়ারে বসে পরল।
মিশা আজ খুব খুশি। অনেক দিন পর গল্প করে অনেক সময় নিয়ে লাঞ্চ করল।
খাওয়া শেষ হলে মিশা বলল,তুমি কি ঘুমাবে এখন?
ঘুমাবো বলে তো তাড়াতাড়ি আসিনি ডার্লিং!
সেই ভালো।খাওয়ার সাথে সাথে ঘুম ভাল না।অনেক গল্প করব বুঝলে?হিমাদ্রির পাশে খাটে হেলান বসল মিশা।
হিমাদ্রি লক্ষ্য করল মিশা সেজেছে কিনা।না,সাজেনি,তবুও হালকা নীল শাড়িতে অসম্ভব সুন্দর লাগছে!এই শাড়িটা বিয়ের পর প্রথম শপিং এ গিয়ে কিনেছিলে,তাই না?শাড়ির আঁচলটা হাতে নিয়ে জিজ্ঞেস করল হিমাদ্রি।
ইয়েস স্যার।তখন বলেছিলেন,এই শাড়িতে আমায় বুড়ি বুড়ি দেখাবে।মনে আছে?
তা মনে নেই,কিন্তু এখন যে মাধুরি দীক্ষিতের মত লাগছে,সেটা বলতে পারি, বলেই হা হা হা শব্দে হেসে উঠল হিমাদ্রি!
বাপরে,কড়া সাংবাদিক আবার হাসতেও পারে দেখছি!চালিয়ে যান,চালিয়ে যান- আশীর্বাদ করি,হিমাদ্রির মাথার উপর ডান হাত উঠলো।
হিমাদ্রি মিশার হাতটা ধরে টান দিয়ে বলল,মাতাজী,আশীর্বাদ দুরে থেকে নয়,কাছে থেকে করতে হয়!সাথে সাথে দু’জনেই শব্দ করে হেসে ফেলল।মনে হল সেই শব্দ ঘরের চার দেওয়াল পার করে বাগানের শেষ সীমানা অতিক্রম করেছে।বাইরে দেওয়ালের উপর দুটো কাক বসে ছিল।সম্ভবত হাসির শব্দে ভয় পেয়ে কা কা শব্দে প্রতিবাদ করে উড়ে গেল।
রাতে ডিনারের পর বরাবরের মত হিমাদ্রি স্টাডি চলে গেল।মিশা কফি নিয়ে এল।তুমি কি ঘুমাবে এখন?
দুর,এখন ঘুমাবো না।ভাল একটা বই দাও,পড়ি।
তুমি নিয়ে নাও সেলফ থেকে।
মিশা খুঁজে খুঁজে একটা বই বের করল, হুমায়ুন আহমেদ এর “দাঁড় কাকের সংসার কিংবা মাঝে মাঝে তব দেখা পাই”।
মিশার হাতে বইটি দেখে হাসল হিমাদ্রি। বলল,গুড চয়েজ বেবি।আজকে তোমার জন্য দারুণ উপাদেয় খাদ্য হবে বইটি!
কেন?কি আছে এতে?এগিয়ে এল মিশা।
আমার মত এক রসিক বুড়ো আর তোমার মত এক রোমান্টিক ছুড়ির প্রেম-বিয়ে এইসব কাহিনী!
ইস,যেন তোমার সাথে আমার প্রেম করে বিয়ে হয়েছে!হিমাদ্রির চুলে মৃদু টান দিয়ে বলল মিশা।
হয়নি তো কি?এখন তো হচ্ছে!
হুম,নিজের কাজ কর।আমি তোমার এই বেডে বসেই পড়ব আর হাসি পেলে হাসব।বুঝলে?
হাসো,তবে দুপুরের মত নয়,এখন কিনা আবার নিশাচর দেবীরা জেগে উঠতে পারে!আবার ও হেসে উঠল হিমাদ্রি।
মিশা মনোযোগ দিয়ে বই পড়তে লাগল।বিয়ের পর বই পড়ার একটা ভাল অভ্যাস হয়েছে।
বাগান থেকে হাস্নাহেনার গন্ধ ভেসে আসছে।হিমাদ্রির স্টাডি রুমের সামনেই বাগান।রুমের পাশে হাঁটাচলার জন্য সিমেন্ট বাঁধানো সুন্দর রাস্তা।মিশাকে নিয়ে একটু ঘুরে আসা যায় বাগান থেকে!মিশা,মিশা,ডেকে সাড়া না পেয়ে ঘুরে দেখল ঘুমের জগতে পাড়ি জমিয়েছে বেচারা।ঘুমন্ত মিশাকে অদ্ভুত সুন্দর লাগছে।যেন sleeping beauty!কিছু চুল এলোমেলো ভাবে লেপ্টে আছে বাম গালে।টেবিলের উপর খস খস শব্দ হতেই দেখল জানালা দিয়ে আসা ঝিরিঝিরি বাতাসে ফাইলের পাতাগুলো উল্টে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে কেউ বুঝি হাতের আঙুল দিয়ে উল্টে দিচ্ছে!হাস্নাহেনার গন্ধ যেন অনেক বেড়ে গেল।হঠাৎ বইয়ের পাতা উল্টানো থেমে গেল।খোলা পাতার উপর চোখ পড়তেই আঁতকে উঠল হিমাদ্রি!অস্পষ্ট স্বরে বলে উঠলো,একি!!!

লেখক  সাহিত্যের অন্যতম সারথি লাকী ফ্লোরেন্স কোড়াইয়া

1 COMMENT

  1. লাকী, তোমার লেখাটা পড়ে খুব ভাল লাগলো। খুব সুন্দর লিখতে পার, তাই না? চালিয়ে যাও আর মনের ভাব প্রকাশের এই মাত্রাটিকে মুক্ত করে অনেক মানুষের মনের কাছে পৌছে দিও।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here