সাহিত্যের অন্যতম সারথি সৈয়দা কামরুন্নাহার শিল্পী এর ধারাবাহিক রোমান্টিক গল্প “অশ্রুমতি ”এর ১ম পর্ব

604
সৈয়দা কামরুন্নাহার শিল্পী এর ধারাবাহিক রোমান্টিক গল্প “অশ্রুমতি ”এর ১ম পর্ব
প্রথম পর্ব।।

অশ্রুমতি

সৈয়দা কামরুন্নাহার শিল্পী

অশান্ত দুপুর চারধারে কাঠফাটা রোদ। না বৈশাখ নয় ফাগুনের টান ।মনের ভেতর হুহু করে কেঁদে উঠছে ,বার বার মনে হচ্ছে আমি কি ভুল করেছি ?
না ,নিজেকেই সান্তনা দিচ্ছি ।

না কোন ভুল নয় ,তুমি কথা দিয়েছিলে সে কথা রাখতে
পারেনি ।আমি আমার দোষ বা ভুল বলে কিছু দেখছিনা।

তার পরেও মনের অজান্তেই বনলতার চোখ বেয়ে ঝর ঝর করে ঝরতে থাকে শ্রাবনের বারিধারা শব্দহীন এক নীরবতায় নিস্তব্ধতায় অঝোর ধারায়।
চোখের পানিতে নিজের মনটাকে হালকা করতে পারল না বরং বেড়েই চলেছে ।
আজ কেন বার বার এত মনে পড়ছে তাকে! সে তো এসেছিল মাত্র কয়েকটা বছরের জন্য!
এসে আমার জীবনটা এলোমেলো করে গেল আমার ভাবনাগুলো ভাববার আগে বুঝবার আগেই ভেঙেচুরে একাকার করে গেল।
কেন স্বপ্ন দেখালে সে আমায় কেন ভালোবাসার মানে বুঝালো!
সে তো বলে গেল না ভালোবাসা কষ্টের ।পাওয়ার চেয়ে না পাওয়ার মাঝেই ভালোবাসা বেঁচে থাকে।

কেন, কেন সে কথা আমায় না বুঝিয়ে হারিয়ে গেল ! আমার জীবন থেকে ।আবির বল কোথায় তুমি?

এমনি এক ফাগুনের বিকেলে বাগানবাড়িতে আবির আমার দু ‘হাত ধরে বলেছিলে, খুব জোরে নিশ্বাস নাও চোখ বন্ধ করে ।

সে কথা আমি ভীষণ হেসেছিলাম ।বলেছিলাম দুষ্টুমি করোনা ,আমাকে ছেড়ে দাও।
যতোবার বলেছি, ততোবার আবির আমার হাতটা চেপে চেপে ধরেছে আরও বেশি।

বলেছিলাম দেখবে একদৌড়ে আমি ওই যে পুকুর পাড়ে মস্ত বড় আম গাছ আছে ,সে আম গাছে দোলনা আছে ।ওখানে গিয়ে দোল খাব ,যাবে তুমি আমার সঙ্গে ?
আর অমনি আবির রাজি হয়ে গেল ,বললাম তবে তুমি দোল দেবে আমায় ,দেবে তো!

অবাক হয়ে আবির হাসিমাখা মুখে আমার দিকে চেয়ে চেয়ে দেখছিল।
আমার গালে পড়া দুষ্ট হাসির টোল দেখছিল ।
এমন সময় বলেছিলাম, এ করে কি দেখছ ?
কেন তোমাকে ?

আমাকে আবার দেখার কি হল?
আমি তো কোন জন্তু নই !আমি তো মানুষ তোমার মতই।

না ,না কখনো না তুমি অনেক সুন্দর মায়াবতি দুষ্ট মানুষ! মোটেও আমার মতো নয়, তাই তোমাকে খুঁটিয়ে-খুঁটিয়ে দেখছি।

বনলতা বলে আর কি দেখছ? দেখছি ,তোমার ওই মায়া হরিণী দুচোখ কত সুন্দর! কতো কথা বলে মিষ্টি মিষ্টি চাহনি তার!

তারপর আর কি দেখছ?
বলবোনা, অনেক বলে ফেলেছি।

কেন বলবে না ?
এইজন্য বলব না ,তুমি এখনো অনেক ছোট আর আমার একটুও কথা তুমি ঠিক ভাবে শোনো না ।

কেন কোন কথা তোমার শুনিনি? আমবাগানে আসতে বললে, চলে এলাম ।আমি যে তোমার আম বাগানে এসে দু হাত ধরে বললাম চোখ বন্ধ করো তুমি তো করলে না ।

বেশ তো এবার করি ঠিক আছে!
বনলতা, চোখ বন্ধ করলো। আবির বনলতা দুহাত পিছন থেকে এসে ধরে বলল ,এবার জোরে নিশ্বাস নাও ।দেখো তো কিসের গন্ধ পাচ্ছো ?
বনলতার বলে, কিসের আবার আমের মুকুলের গন্ধ পাচ্ছি।
আর কোন কিছু না পাচ্ছি না।
তবে পাচ্ছি একটা গন্ধ তা তোমাকে বলব না ।

কেন বলবে না ?
বলা যাবেনা জন্য। এমনি করেই বয়ে যাচ্ছিল দিনগুলো আমাদের। কখনো কখনো পড়াতে ,পড়ার ফাঁকে ছোট ছোট প্রশ্ন গল্প ।কখনো অংক কষতে চলে যেতাম আবিরের কাছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here