সাম্য দর্শনের লেখক- শাহিদা ইসলাম এর সাধারণ মানুষের জীবন ঘনিষ্ঠ লিখা গল্প ২য় পর্ব “জীবনের গল্প ”

538
সাম্য দর্শনের লেখক- শাহিদা ইসলাম এর সাধারণ মানুষের জীবন ঘনিষ্ঠ লিখা গল্প ২য় পর্ব “জীবনের গল্প ”

“জীবনের গল্প”

পর্ব (২)

শাহিদা ইসলাম

রুনু বাবার এমন প্রতিক্রিয়া দেখে বিষন্ন হয়ে গেল,রাজন আর রুনুর মধ্যে পার্থক্য কি রাজন ছেলে,রুনু মেয়ে,এই তো।বাবার আদর্শ, শিক্ষায়, দারিদ্র্যতার মাঝেও মাথা উঁচু করে চলতে শিখেছে।
বাবার অবসরের পর রাজনই সংসারের হাল ধরেছে,বাবার পেনশনের টাকা মায়ের চিকিৎসায় ব্যয় হয়েছে।আজ মা নেই,দুনিয়া অন্ধকার। এই পরিবার আনন্দ উৎসব আর নেই।
করোনা কালিন সময়ে রাজনের অফিস বন্ধ ঘোষণা হল।
মালিক পক্ষ এতটা সদয় না যে ডেকে বেতন পরিশোধ করবে। এদিকে বাড়ি ভাড়া দুই মাসের বাকি পড়েছে। এই মাসে লাষ্ট ওয়ার্নিং ভাড়া না দিলে ঘরের জিনিসপত্র রেখে তালা বন্ধ করে দেবে ঘরের দরজা।
বাড়ির মালিক তাই বলে গেছে, ডাক্তার চাচা রুনুর জন্য একটা চাকরির ব্যবস্থা করেছে,
এটা আসলে চুক্তি ভিত্তিক চাকরি।
স্বামী, বাচ্চা পরিচালনা করতে হবে অভিনয়ের মাধ্যমে, তাতে রুনু যা চাইবে সব পাবে।
এই কথার পরিপ্রেক্ষিতে বাবা বিষ খেতে চেয়েছে।অভাবের তাড়নায় বিয়ের যোগ্য মেয়ে দিয়ে বিয়ের অভিনয় করাতে হবে,সেই টাকায় বাবার ওষুধ, বাড়িভাড়া খাওয়ার খরচ চলবে,এর চেয়ে মরণ ভাল।
এরই মাঝে রুনু বাবাকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছে,বাবা ধরে নাও এটা চাকরির একটা পার্ট,
আজ রুনুর প্রথম ডিউটি,, ভোরে উঠে বাবা, রাজনের জন্য রান্না করেছে এক সপ্তাহের। ফ্রিজে রেখে খাবে,এক সপ্তাহে ছুটি শুধু Friday।
ফ্রেস হয়ে মায়ের একটা অফ হোয়াইট শাড়ি হলুদ চওড়া পাড়,
আর ফুল স্লিভ ব্লাউজ পরে নিল,
মুখে হাল্কা পাউডার পাফের ছোঁয়া দিয়ে নিল,ঠোঁটে গোলাপ ফুলের পাপড়ির মত হাল্কা লিপস্টিক দিয়ে চোখের নিচে কাজল সরু করে টেনে দিল। নাস্তা খেয়ে বাবাকে সালাম করে বের হবার জন্য আগে ডান পা বাড়িয়ে দিল,বাবা বলে উঠলেন ফি আমা লিল্লাহ।
বাবার মুখে হাসি নেই,আছে আতংকের ছায়া,একটা রিক্সা নিয়ে সোজা হাসপাতালে, ডাক্তার চাচার চেম্বারে ঢুকে রানু দেখল চেয়ারে কোট ঝুলছে,চাচা রুমে নেই,সিস্টার বলে গেল, স্যার রাউন্ডে আছেন,আপনি বসেন আমি খবর দিচ্ছি।জানতে চাইল রুনু,আমাকে বলেন উনি কোন ডিপার্টমেন্টে আছেন আমি যাই,অনকোলজি বিভাগে,শুনেই বুকের ভেতর চিনচিন করে উঠল,ক্যান্সার হয়েছিল মায়ের, বাবার চেষ্টার কোন ত্রুটি ছিল না,কই ধরে রাখতে তো পারলাম না। এগিয়ে যেতে পারলাম না।ডাক্তার চাচা এলেন How are you? my sweet baby?এই টাই ডাক্তার সাহেবের প্রথম ওয়ার্ড।
এই চাচার বড় ভাইয়ের সাথে কিভাবে অভিনয় করবে ভাবছে রুনু।
ডাক্তার চাচা বললেন are you ok? Let’s go, ড্রাইভার গাড়ি নিয়ে এল,দুজনা গাড়িতে উঠল,রুনু পিছনের সিটে বসেছে,মুখে মাস্ক পরা, কারণ চারিদিকে শুধু করোনার প্রকোপ, চাচা বলতে শুরু করলেন এক সময় দেশে কলেরা মহামারি তে গ্রামের পর গ্রাম শেষ হয়ে যেতো ,বিনা চিকিৎসায়,মানুষ বলতো উলা বিবির আগমন হয়েছে,বিশেষ করে হিন্দু ধর্মে পুজা অর্চনা হতো এই রোগের জন্য,তার পরে এক সময় স্যালাইন আবিষ্কার হল,মানুষের মৃত্যুর হার কমে গেল,এই করোনার ভ্যাক্সিন বের হবে,একদিন সবার মাঝে ছড়িয়ে পড়বে,মানুষের হাতের নাগালের মধ্যে আসবে।
রুনু চুপ করে ডাক্তার চাচার কথা শুনল,কথা বলা শেষ না হতেই বাড়ির গেটে গাড়ি হর্ন বাজাল,দারোয়ান লম্বা সালাম দিয়ে গেটের পাল্লা খুলে দিল।গাড়ি থেকে রুনুর ব্যাগ নামিয়ে দিল ড্রাইভার, পা চলছে না,বুকের ভেতর ধুকপুক করছে।
এসো মা রুনু,ডাক্তার চাচার মা আমি আর যাচ্ছি ভাইয়ের বউয়ের অভিনয়ে এই কথা ভেবে রুনুর চোখ দিয়ে দুফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ল।

চলবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here