পথের শেষে
আনজানা ডালিয়া
কলমিলতাকে ঠকাতে গিয়ে প্রেম,বিয়ে অস্বীকার করে মোহন ভেবেছিলো সে জিতে গেছে। জীবনের হারজিত খেলা কি এতোই সহজ? কলমিলতা বারবার বলতো দেখিস এমন একটা দিন আসবে কথা বলার জন্যও কাউকে পাবিনা। তোর এমন বন্ধু ডাকা,স্যার ডাকা,আঙ্কেল ডাকা হুরপরীরা কেউ থাকবে নারে।সেদিন এই কলমিলতাও থাকবেনা, সে অন্য কারো হয়ে যাবে একদিন তাকেও পাবিনা। মোহন গায়ে মাখতোনা এসব কথা।দীর্ঘ পনের বছর পর দেখা কলমিলতা আর মোহনের।কলমিলতা নিয়ম করে বাড়ির পাশের রাস্তায় হাটে প্রায়।এ বয়সে একটু না হাটলে সুস্থ থাকবেনা এটাই কলমিলতার বিশ্বাস।হঠাৎ দূরে ঘাটে বসে থাকা মানুষটাকে চেনা লাগলো তাই এগিয়ে গেলো। হায় এ কোন মোহন? বিশ্বাস হলোনা এ কি অবস্থা। ধীর পায়ে কিছু দুরত্বে গিয়ে বসলো কলমিলতা। অনেকক্ষন তাকিয়ে থাকলো ওই মুখপানে। মোহনের কোন দিকে খেয়াল নেই, এক মনে কি যেন ভেবেই যাচ্ছে। কলমিলতাই কথা বলে উঠলো, তুমি এখানে কি করে? কেমন আছো? চোখ তুলে তাকিয়েই ক’সেকেন্ডে চোখ নামিয়ে নিলো মোহন। রাজ্যের হতাশা আর কেমন যেন অপরাধী চোখ দুটো। এক কথা আধ কথায় ওদের কথা চলতে থাকলো। পিতৃ পরিচয়ের দাবী নিয়ে সিমিতা,মৌমিতারা বাড়ি এসে উঠলে বৌ মোহনকে বাড়ি থেকে বের করে দিতে চেয়েছিলো,অনেক অনুনয় বিনয় করে শুধু বাজার বুড়োর পোষ্টটা দিয়ে পেটে ভাতে তাকে বাড়িতে থাকতে দয়া করেছিলো সেদিন মোহনের বৌ। মেয়েটা কোথায় যেন উধাও হয়েছে। আর ছেলেটা বাবার অহংকারের বলী হয়েছে, বাবা,ইয়াবা আরো কত ধরনের নেশা নেয় তার হিসেব কে রাখে আর। অহংকারী,নীতিহীন, শত সুন্দরী চারপাশে ঘিরে থাকা মোহনের পাশে আজ কেউ নেই।
নিঃস্ব, অবহেলিত,ভাঙ্গাচোরা এক মোহন। যে মোহন মেয়েদের মন নিয়ে খেলেছিলো।যে মোহন মেয়েদের মন ভেঙ্গে, মুচড়ে উল্লাসে হাসতো, আর বলতো আমার পেছনে কত সুন্দরী লাইন দিয়ে দাড়ায় দেখবি সেই মোহন আজ জীবনের সুন্দরী প্রেমিকার হিসেব মেলায় নির্জনে জীর্ণতায়। কত মেয়ের মন ভেঙ্গে গুড়িয়েছে তার হিসেব মেলায় আবছা রঙ্গীন জীবনের শেষ প্রান্তে এসে। কলমিলতা উঠে দাড়ায় ধীরধীরে ফিরতে থাকে। মোহন পেছন থেকে ডাকে কলমি, তোর কথাই সত্য হলোরে আজ আমার কথা বলার, খোঁজ নেয়ার কেউ নেই,জানিস আজ আমি হিসেব মেলাতে না পারলেও উপরে একজন বসেবসে সঠিক হিসেব রেখেছেন, আজ আমি বিন্দুতে এসে দাড়িয়েছি। কলমিলতা সেই পনের বছর আগের মতো নীরবে সামনে এগিয়ে গেছে তাঁর উপচে পড়া সুখের বাগানে। শুধু বিড়বিড় করে বলে চলতে লাগলো এমনটাই তো হবার ছিলোরে ,পথের শেষে এসে বুঝলি মোহন।