একশো টাকায় বিয়ে
চৈতালী দাসমজুমদার
===============
দিনটা আমার ঠিক মনে নেই তবে হঠাৎই পুকুরের এক প্রান্তে গ্রামের কিছু মানুষকে জড়ো হয়ে কিছু আলোচনা করতে দেখলাম দূর থেকে ,আমি আমার বারান্দাতেই ছিলাম। সেখান থেকেই ওদেরকে লক্ষ্য রাখছিলাম দেখে মনে হচ্ছিল ওরা খুব উত্তেজিত হয়ে আছে। জানিনা কেন আমার বিষয়টা খুব জানতে ইচ্ছে হলো এছাড়াও চিন্তা ও হচ্ছিল পাড়ার কারোর কিছু হলো নাতো?
যাই হোক এসব সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে এগিয়ে গেলাম মোড়ের দিকে যেখানে সবাই জড়ো হয়েছিল। ওদের কাছে গিয়ে যেটা জানতে পারলাম , লাবণ্যের ছেলেটাকে নাকি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না, বয়স আর কত হবে উনিশ কুড়ি। লাবণ্য কে জিজ্ঞেস করলাম কখন থেকে খুঁজে পাচ্ছো না তুমি ছেলেকে? লাবণ্য বলল সকাল থেকেই ,কতবার ফোন করছি দেখনা চৈতালি দি ফোনও রিসিভ করছে না, এখন রাত্রি দশটা বাজে এখনো এলো না ।ও তো কখনো বাইরে যায় না ঘরে বসেই কাজ করে ।নিজের কাছে অনেক টাকাও নেই হয়তো একশো টাকা মতো হবে।
এতবার ফোন করছি কিছুতেই ফোন তুলছে না বলে কাঁদতে লাগলো। আমি শান্তনা দিয়ে বললাম কেঁদোনা, বন্ধু বান্ধব কে ফোন করো যদি কেউ কিছু বলতে পারে। ছেলেটাকে নিয়ে সারারাত টানাপোড়েন চলল। আমিও ছিলাম ওদের সাথে অনেক রাত অব্দি লাবণ্যর বাড়িতে। তখন রাত দুটো হবে আমি বাড়ি ফিরে শুয়ে পড়লাম।
সেদিন সকাল বেলা উঠতে একটু দেরি হয়েছিল। ঘুম থেকে উঠে স্নান করে তিনতলায় ঠাকুর ঘরে গেলাম পূজা সারতে। আমার ঠাকুর ঘর থেকে লাবণ্যর বাড়িটা দেখা যায় হঠাৎ দেখি ওর বাড়ির দোড়গোড়ায় অনেক ভিড়। ভয় পেয়ে গেলাম ভাবলাম অঘটন কিছু ঘটেনি তো? কোনরকমে পূজো সেরে দৌড়ালাম ওদের বাড়িতে। সামনে পৌঁছে দেখি বাচ্চা একটা মেয়ে লাল টুকটুকে শাড়ি পড়ে মাথায় ভর্তি সিঁদুর লাবণ্য ছেলের পাশে দাঁড়িয়ে আছে। লাবণ্য দেখি মুখ গোমরা করে এক কোণে দাঁড়িয়ে আমি লাবণ্য কে ডেকে বললাম লাবণ্য বরণ করো উলু দাও নতুন বউ এসেছে বাড়িতে।
আমি লাবণ্যর ছেলেকে জিজ্ঞাসা করলাম এসব কি করে করলি? তোর মা তো বলল টাকাও ছিল না কাছে? ছেলেটা হাসতে হাসতে বলল একশো টাকা কাছে ছিল পুরোহিতকে দিলাম সে বিয়ে দিয়ে দিল। আমি হাসতে হাসতে বললাম বাহ খুব ভালো । একশো টাকায় বিয়ে হয়ে গেল ।লাবণ্যকে বললাম একশো টাকায় ছেলের বিয়ে হয়ে গেল এবার আমাদেরকে তুমি মিষ্টি খাওয়াও।
Copyright১২৩৪@chaitalidas.