তারুণ্যের লেখক আবির হাসান সায়েম এর আত্ম অভিজ্ঞতা থেকে লেখা গল্প “একদিন বৃষ্টিতে দু’জনে ”

397
তারুণ্যের লেখক আবির হাসান সায়েম এর আত্ম অভিজ্ঞতা থেকে লেখা গল্প “একদিন বৃষ্টিতে দু'জনে ”

একদিন বৃষ্টিতে দু’জনে

আবির হাসান সায়েম

একদিন কোনো এক কারণে তোমার মনটা খারাপ। একটু বেশিই খারাপ। বাসায় বসে আছো নিরিবিলি। কাজের মাঝে খানিক সময় পাই আমি। ফোন দেই তোমায়। প্রথমবার ফোন ধরো না , দ্বিতীয়বারে সফল হই। ফোন ধরে তুমি বললে,
” হ্যালো।”
“হ্যালো” – এই কথাটুকু শুনেই বুঝে ফেললাম মনের অবস্থা। আপন মানুষগুলোর কন্ঠস্বর শুনেই মনের অবস্থা আঁচ করা যায়। আমি বললাম,
” শুনো, তোমাকে নিয়ে একটা জায়গায় যাবো। আধঘন্টার মধ্যে তোমাকে পিক করবো। তৈরী হয়ে নাও।”
তুমি খানিক্ষন চুপ করে থেকে উত্তর দিলে,
” নাহ, আজ ইচ্ছে করছে না। অন্যদিন যাবো।”
” প্লিজ? ”
তুমি আবার খানিক্ষণ চুপ করে রইলে তারপর বললে,
” আচ্ছা। ”
কখনো আমার অনুরোধ ফেলতে পারো না তুমি, আমি জানি। সুযোগের হালকা স্বদব্যবহার করলাম।
তোমাকে নিয়ে গেলাম শীতলক্ষ্যা নদীর পাড়ে। চারপাশ নিঃস্তব্দ। নদীর ঘাটে কয়েকটা নৌকা বাঁধা। জেলেদের কি না বোঝা গেলো না। গাছের ছায়ায় ঝিমুতে থাকা ঘাটে বসলাম আমরা দু’জন। কিছুক্ষণ কোনো কথা হলো না। দু’জনই তাকিয়ে রইলাম শান্ত নদীর দিকে। একটু পরপর বালু উঠানোর স্টিমার যাচ্ছে সেখান দিয়ে। আকাশে রোদ নেই। অল্প মেঘ করেছে। থেমে থেমে বাতাস দিচ্ছে। নিঃস্তব্ধতা ভেঙে আমি বললাম,
“তোমার জন্য একটা জিনিস এনেছি। তোমার খুব পছন্দের। ”
” কি জিনিস?”
আমি ব্যাগ হাত দিয়ে বেলী ফুল বের করে তোমার হাতে দিলাম আর বললাম,
” আজ সকালে বারান্দায় গিয়ে দেখি এগুলো ফুটেছে। ভাবলাম তোমার এতো পছন্দ বেলী, তোমার জন্য আনলে খুশি হবে। তাছাড়া একটা অদ্ভুত দৃশ্যও দেখা যাবে। ”
” কি অদ্ভুত দৃশ্য?”
“এই যে একটা ফুল অন্য ফুলকে হাতে নিয়ে বসে আছে, এই দৃশ্য।”
” তাই না? তুমি পারোও খুব… “,তুমি খিলখিল করে হেসে উঠলে।
আমি মুগ্ধ চোখে তোমার হাসি দেখলাম। বললাম,
” বিশ্বাস হয় না তোমার? দাঁড়াও একটা ছবি তুলে দেখাই। ”
ফোনতা বের করে তুলে ফেললাম ছবি। তোমাকে দেখালাম। সত্যিই ফুলগুলো থেকে তোমাকে বেশি সুন্দর লাগছিলো। তুমি খানিকটা লজ্জা পেলে। মন খারাপ অনেকটা কমে এসেছে, মুখ দেখে বুঝা যায়। তুমি ফুলগুলোকে হাতে নিয়ে নাড়তে চাড়তে লাগলে।
একটা লোক নৌকায় উঠে বসেছে। ডিঙি দিয়ে ঘাট থেকে দূরে ঠেলে দিচ্ছে নৌকা। আমি লোকটিকে জোরে ডেকে বললাম,
” ওপারে যাবেন নাকি?”
” হ। ”
” আমাদের নেয়া যায় আপনার সাথে?”
” নাহ, মানুষ নেই না। ”
” নিয়ে চলেন, যত লাগে দিবো।”
লাইনটা ম্যাজিকের মতো কাজ করলো। ভাড়া নির্ধারণ করা হলো একশো টাকা। বেশি হলেও পড়োয়া নেই। ‘খানিক সুখের লাগি, কিছু অর্থ নৌকায় যাক। ‘
উঠে পরলাম দু’জনে। নৌকা চলতে লাগলো। কাজে দিয়েছিলো নৌকায় উঠা। মন তোমার অনেকবেশি ভালো হয়ে গিয়েছিলো। হাসি লেগেই ছিলো তোমার মুখে। হাসিই তোমার মুখে মানায়।
নৌকা নদীর মাঝপথে আসতে না আসতেই শুরু হলো ঝুম বৃষ্টি। বাতাস নেই তেমন, শুধু বৃষ্টি। ফোনগুলো ঢুকিয়ে ফেলা হলো ব্যাগে। ব্যাগটা ওয়াটারপ্রুফ হওয়াতে বাঁচা গেলো। হুট করে তুমি বললে,
” চলো নাচি। ”
আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম,
” কি করবে? ”
তুমি খানিকটা চিৎকারের সুরে বললে,
” নাচব। তুমি আর আমি। অঞ্জন দত্তের গানিটা আছে না? ‘বৃষ্টিতে একদিন’! সেটা গাইবো দু’জনে আর নাচব।”
কথাটুকু বলেই দাঁড়িয়ে গেলে তুমি, হাত ধরে উঠালে আমায়। তোমার একহাতে বেলী ফুল আর একহাত আমার হাতে। নাঁচছি দুজনে। গাইছি বেসুরে গলায় গান। গানের সুর নিয়ে তখন থোড়াই না কেয়ার করেছি দু’জনে। মনে হয়েছে এই জগত শুধু তোমার আর আমার। আর আমরা দু’জনার।
এতোদিন পর আজও সেই বেসুরে গলায় দু’জনের শুনা গান কানে ভেসে আসে। চোখ বন্ধ করলে আজও শুনতে পাই দু’জনে গাইছি,
একদিন বৃষ্টিতে বিকেলে
থাকবে না সাথে কোনো ছাতা
শুধু দেখা হয়ে যাবে মাঝ রাস্তায়
ভিজে যাবে চটি, জামা, মাথা

থাকবে না রাস্তায় গাড়িঘোড়া
দোকানপাট সব বন্ধ
শুধু তোমার আমার হৃদয়ে
ভিজে মাটির সোঁদা গন্ধ…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here