বাংলা সাহিত্যের অন্যতম সারথি-শারমিন সুলতানা’র জীবন ধর্মী ছোট গল্প “প্যারানরমাল ৫ : ৩০”

345
শারমিন সুলতানা’র জীবন ধর্মী ছোট গল্প “প্যারানরমাল ৫ : ৩০”

** প্যারানরমাল ৫ : ৩০**

শারমিন সুলতানা



সময়টা ছিল বর্ষার মাঝামাঝি। অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী নিতু। একদিন রাতের কথা।
নিতুর বাবার কাছে শুনতে পায় আগামীকাল তাদের অংকের টিচারের আসা সম্ভব হবে না কোন এক কারনে।
তাই, পরের দিন ভোরে নামাজ শেষে ৫:৩০ থেকে ১ ঘন্টা টিউসন করে স্কুলে যেতে হবেনা ভেবে খুব ভালো লাগছিলো নিতুর। কারন, তাদের স্কুলের ঢোকার সময় ছিল ৭:০০ থেকে ৭:১৫ মধ্যে।
আর ক্লাস শুরু হতো ৭;৩০।
তাই প্রতিদিন তারাহুড়ো লেগে যেতো স্কুলে যাবার সময়।
যাহোক,যথাসময়ে পরদিন তাদের টিচার এলোনা।
যিনি তাদের পরাতেন। প্রতিদিনের মতোই সঠিক সময়ে ঘুম ভেঙেছে নিতুর ?
ঘুম ঘুম চোখে উঠে দেখে
৭:৩০ বেঝেছে।
হায়!
একি!
২য় বার ভালো করে ঘড়ির দিকে না তাকিয়ে কি ভেবে হঠাৎ নিতু বিছানা থেকে উঠে তারাহুড়ো করে রেডি হয় স্কুলের যাবার জন্য।
তাই সকালে নাস্তা না খেয়ে, বাবা মা কাউকে কিছু না বলে চলে ঝড়ের বেগে।
কারন, সঠিক সময়ে স্কুলে উপস্থিত না হলে রোদে বেলাঅব্দি মাঠে দাড়িয়ে থাকার ব্যপারটাওতো ছিল তখন। তাই আর সময় নষ্ট না করে ছুটে চলে স্কুলের দিকে। এদিকে নিতুর বাবা মা আর বাসার কেউই নিতুকে এতো সকালে খুঁজে না পাওয়ায় অস্থির হয়ে যাচ্ছিল। ততক্ষণে নিতু রোদেলাদের বাসার কাছাকাছি চলে আসে।
নিতুরা ৪ বন্ধু মিলে সবসময় এক সাথেই স্কুলে যেতো। নিতু, বিন্দু, রোদেলা, ও তার ছোট বোন বৃষ্টি । নিতু
ভাবে সেদিন বোধহয় তার ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয়েছে আর দেরি হওয়ায় বন্ধুরা অপেক্ষা করে চলে যায়। তাই অদ্ভুতভাবে প্রতিদিনের মতো সেদিন আর নিতুও তাদের বাসায় গেলো না খোঁজ নিতে। আর এদিকে আকাশটাও কেমন অন্ধকার, মনে মনে ভাবে বৃষ্টি হতে পারে আজ।
আর ভীষণ ভয় হয় এই ভেবে আজ
কেমন যেনো দিনটা।
সব অদ্ভুত লাগে নিতুর।
যাহোক, তাদের স্কুলে যাবার দুটি পথ আছে, আধঘন্টার রাস্তা। তবে, তারা ভেতরের নিরিবিলি সহজ রাস্তা দিয়েই কথা বলতে বলতে ও মজা করতে করতে যায়
৪ জন মিলে। আর সেখানে মাঝরাস্তায় একটা গলির মতো আছে যেখানে অন্য যে কোন সময় সবাই মিলে গেলেও ভয় লাগে তাদের। আর সেদিন কাক ডাকা ভোরে নিতু একা। কিছুই ভেবে পায়না না তখন।
তারপর, যাচ্ছে যাচ্ছে আচমকা এক বৃদ্ধা মহিলাকে দেখতে পায়। যিনি বিশাল বেলুনের মতো গোল সাথে সাদার রঙের শাড়ী জড়ানো আফছা ধোয়াটে একজন নিতুর সামনে হঠাৎ ! কোত্থেকে এসে সামনে হাটা শুরু করে দেয় যা নিতু মেলাতে পারেনা কোনো ভাবেই।
আর একদম নিচ পর্যন্ত শাড়ি জড়ানো বলে বৃদ্ধার মুখ আর পা ভালো করে দেখা যায়না আর সব রাস্তাঘাট ফাঁকা ও নির্জন বলে হঠাৎই তার মনে হয় সে কোনো ঘোরের মধ্যে নেইতো,
কারন, প্রতিদিন অনেক মানুষ থাকে, দোকানগুলোতে চাল ডাল কেনার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়ে সাধারন মানুষেরা। কতো রিকশা চলে এদিক ওদিক। আশেপাশে স্কুলের ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের ভ্যানগাড়িগুলো থেকে পাশ কাটিয়ে যাই প্রতিদিন। নার্সারির চয়ন আংকেলও আজ পানি দিচ্ছেনা সবজি ও ফুলের গাছগুলোতে। তিন রাস্তার মোড়ে এক পাশে মরিয়ম চাচী চিথই আর ভাপাও পিঠা বিক্রি করছে আজ। পাশের ঐ নতুন বিল্ডিং মেরমত করার জন্য ঝাপি আর কোদাল নিয়ে প্রতিদিন কতো মধ্যবয়স্ক শ্রমিকেরা বালু আর ইট মাথায় করে নিয়ে যায়। বড় রাস্তার দু’ধারে দোকানিরা এক বালতি করে পানি দেয় ধুলোমাখা রাস্তায়। তবে সবার আজ কি হয়েছে? কাউকে দেখছিনা কেনো?
ভাবে আর হাঁটে সেই বৃদ্ধার পেছন পেছন।
মনে মনে বলে আজ কি হচ্ছে আমার সাথে এসব?আমি এতো ভয় পাচ্ছি কেনো?
তবে সে এতো ভয়ের মাঝেই ঠিক করে নেয় কিছুতেই সামনে এগুনো যাবেনা ঐ বৃদ্ধার।
আর হাটার সময় নানান রকম ভয় কাজ করে। মনে মনে অনেক আল্লাহর নাম নিতে থাকে নিতু।
খানিকটা এগুতেই হঠাৎ মহিলাটা উধাও চোখের পলকে। কি হলো নিতু কিছুই টের পেলোনা। এই অবস্থা দেখে নিতু ভীষণ ভীতসন্ত্রস্ত হয়েই জোরকদমে সামনে এগোয়।।
অবশেষে আধঘন্টার রাস্তা ১৫ মিনিটে ঝড়ের বেগে হেটে স্কুলের কাছে এসে পৌঁছায়।
পৌছুতেই ঘটলো আর এক অদ্ভুত ব্যাপার
দেখলো একি!
এখোনো তালা ঝুলছে স্কুলের গেইটে।
সে কিছুই বুঝতে পারলোনা বিষয়টা।
আর এবার ভয়ে জড়সর নিতু।

মনে মনে কিসব ভাবতে ভাবতে হঠাৎ দেখতে পেলো তাদের ক্যান্টিনের ছেলেটা স্কুলের প্রধান গেইটের সামনে দাঁড়িয়ে দাত ব্রাশ করছে সেই সময়।
তাছারা, স্কুলের কাছেই ছেলেটার বাড়ী হওয়াতে
সে ভাবছে কাছে গিয়ে স্কুলের গেইট কেনো বন্ধ সেটা জিজ্ঞেস করবে।
তাকে স্কুল ড্রেস পরা দেখে নিতুর বলার আগেই ছেলেটা তাকে বলে উঠে ( আফা, এত তারাতারি কেন আইছেন ?
অহন মাত্র বাজে ৬:০০ ডা)।
কথাটা শুনতেই হঠাৎ সে ভয়ে কেঁপে উঠে আর সেই অদ্ভুত বিষয় যেটা আজ ঘটেছে তার সাথে সেটা বিদ্যুুৎতের গতির মতো বুঝে ফেলে নিতু। কিছুটা দম নিলো এবার সে।
সকালে তার দেখা সেই ৭:৩০ ছিলো আসলে ৫:৩০।
যা আজানের কিছুটা সময় পরের মুহুর্ত। চারিদিকে তখনও ভীষণ অন্ধকারে ছেঁয়ে থাকে। চারপাশটা নিস্তব্ধতায় ভরা শান্ত এক পৃথিবী। দম নিতে নিতে এবার সে ঠিক করে কি
করা যায় এখন।
ঠিক এমন মুহুর্তে আশে পাশে কোন পরিচিত বান্ধবীদের বাসায় যেতেও অদ্ভুত লাগছে নিতুর আর একা একা স্কুলের সামনে দাড়ানোটাও ভালো দেখাচ্ছেনা তাই ভেবে মনস্থীর করে যে,
আবার বাড়ি ফিরে যাবে।
আর যতো রকম দোয়া জানতো সে সব বলে টলে আবারও রওনা দেয় বাড়ির উদ্দেশ্যে।
দৌড়ে হাঁপাতে হাঁপাতে তাদের বাসার কাছাকাছি এসে পৌঁছায় অবশেষে। খুব কষ্ট হচ্ছিল তখন নিতুর। তবুও আসতে হলো সেই অবস্থায়।
নিতু মনে মনে ভাবছে সেদিন আর
ঐ সময় বাড়ি যাওয়া যাবেনা,
তা না হলে মা বাবার বকুনি খেতে হবে।
বরং তার চেয়ে ভালো রোদেলার বাসায় ঢুকে পরি
আর বলি আজ একটু তারাতারিই চলে এসেছিরে। কিন্তু নিতু কিছু বলার আগেই তাকে দেখে রোদেলার মা বলে উঠে
এখন কয়টা বাজে মামুনি ?
স্কুলের সময় হয়ে গেছে কি ?
কিন্তু বিছানা ছেড়ে রোদেলা, বৃষ্টি কেউ উঠে
আসছে না কেনো এখনো?
গভীর রাতে ঘুমোয় আর এখন দেখো কেমন
পড়ে পড়ে ঘুমুচ্ছে।
কি যে করে না এরা।
নিতু আর কি বলবে, কিছুই না বলে
বাসায় ঢুকে পরে তখন।
আর রোদেলার মাকে জিজ্ঞেস করে তখনি রোদেলা কোথায় আন্টি?
ঘুম ঘুম চোখে রোদেলা এসে বলে এইতো আমি এখানে। কিরে এতো তারাতারি কেনো?
নিতু কোনো জবাব দেয় না।
তারপর কিছুটা সময় পর এই পুরো ব্যাপারটি শান্ত হয়ে ভাবে আর লক্ষ করে নিতু কি বোকামিটাই করেছে আজ।
ভয়ে নিতু ঘেমে অস্থির আর জ্বর চলে আসে সেদিন।
যদিও আপাতত তখন কিছুটা স্বস্তি পাচ্ছিল রোদেলাদের বাসায় এসে।
রোদেলার মা বার বার ডেকে নিতুকে বলে মামনি নাস্তা কর।
অনেকক্ষন চুপ থাকার পর নিতু এক গ্লাস
পানি খেয়ে অন্য কথায় চলে যায়।
আর স্কুলে যাবার জন্য আবারও
সে তাদের সাথে রওনা হয় ঠিক
প্রতিদিনের মতো…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here