শহিদের অপূর্ণ স্বপ্ন
সুবর্ণা ভট্টাচার্য্য
হেঁটে চলেছি পলাশ রাঙানো পথে…
হঠাৎ!থমকে দাঁড়িয়ে তাকালাম দূরে,
টকটকে লাল শিমুল তলে দাঁড়িয়ে আছে-
রফিক,সালাম,বরকত,সফিউর,জব্বার সহ আরও অনেকে।
কৃষ্ণচূড়ার দল—
আজও ভাষার জন্য প্রতিবাদী হয়ে উঠে,
অকালে ঝরে পড়ে তারা পথে পথে…,
সূর্যের হলদে আলোর সাথে পদাচরণা বাড়ে।
পিচঢালা রাজপথে পড়ে থাকা ছেড়া কাগজে,
রক্তাক্ত বর্ণগুলো সব অবহেলায় পড়ে থাকে,
বাংলা বর্ণের প্রতিটি অক্ষর রক্তাক্ত একুশের সাক্ষী হয়ে আছে।
সবুজ ঘাসের উপর রক্তাক্ত বর্ণগুলো!
বাংলার শৌর্যের কথা বলছে,
একুশের অমলিন স্মৃতির কথা বলছে,
মায়ের ভাষাকে বিকৃতির হাত থেকে রক্ষার কথা চিৎকার করে বলছে।
দেখে মনে হচ্ছে,
‘ব’ অক্ষরটা বরকতের রূপ ধারণ করেছে,
‘র’ অক্ষরটা রফিক-এর চেহারা ধারণ করেছে,
‘স’ অক্ষরটা সফিউর-এর আত্মাহুতির কথা জানান দিচ্ছে।
ভাষা শহিদ আমাকে দেখে মুচকি হাসছে!
বাহান্নর ভাষা আন্দোলনের কথা বলছে,
আর একুশের সেই দিনের কথা বলছে।
ওঁরা চিৎকার করে বলছে—
আমাদের স্বপ্ন আজও তোমরা বাস্তবায়ন করতে পারোনি!
তোমরা শুধু পেরেছ,
ভুল ও বিকৃত বাংলার সঙ্গে কিছু প্রচলিত ইংরেজি মিশিয়ে,
এক অদ্ভুত জগাখিচুড়ি ভাষা চালু করতে।
তোমরা পেরেছ,
ফেব্রুয়ারি আসলে শহিদ মিনার,বর্ণমালা,ধারাপাত,
একুশের গান ও কবিতা পোশাকে তুলে ধরতে।
পেরেছ,ইংরেজি ভাষা নিয়ে মাতামাতি ও হৈ-হুল্লোড় করতে।
পেরেছ,মহান একুশে ফেব্রুয়ারি আড়ম্বরের সঙ্গে পালন করতে।
আর পেরেছ,ফেব্রুয়ারি মাসে বইমেলার আয়োজন করতে।
তাই মাত্র সত্তর বছরের ব্যবধানে,
একুশের অমূল্য ও বৈপ্লবিক চেতনা বিস্মৃতির অতলে আজ হারিয়ে যাচ্ছে।
তোমাদের সব আবেগ কাজ করে শুধু ফেব্রুয়ারি মাসে,
বাংলা ভাষার অবহেলা এখানকার আনাচে-কানাচে,
তোমাদের ব্যস্ত,শহুরে ও শিল্পায়নের যুগে-
আমাদের টগবগে রক্ত কুয়াশার মতন ঘোলাটে রূপ ধারণ করেছে।
আজ বিদেশি ভাষা একচ্ছত্র আধিপত্য করছে,
আমাদের স্বপ্ন তোমাদের যান্ত্রিক সভ্যতার জাঁতাকালে পিষ্ট হয়ে ম্লান হয়ে যাচ্ছে,
তোমাদের অবহেলায় আমাদের অস্তিত্ব আজ বিলুপ্তির পথে।
তাই আজ এই পবিত্র মাটিতে ভাষা চেতনার বন্ধ্যাত্ব তৈরি হয়েছে।