“ডায়েরীর পাতা থেকে— প্রানের সখী কুসুমকলি—🌹” ভিন্ন ধারার অনুভূতির চিঠি লিখেছেন আমেরিকার লস্ এঞ্জেলস থেকে কবি ও লেখক হাজেরা বেগম ।

823
আমেরিকার লস্ এঞ্জেলস থেকে কবি ও লেখক হাজেরা বেগম

ডায়েরীর পাতা থেকে—

প্রানের সখী কুসুমকলি—🌹

        ২৫শে বৈশাখ, ১৯৩১ বাংলা সন
                                         হাজেরা বেগম
~~~~~~~~~~~~~~~~~
তোমাকে আজও ভুলতে পারি নাই । বিগত দশটি বছর ছোট থেকে বড় হওয়া এক সাথে মক্তবে পড়তে যাওয়া মৌলভী সাহেব বেত্রাঘাত করতে এলে তুমি হাত পেতে দিতে । উনি কিছু বলতেন না কি মনে করে রাগ করে বলতেন পড়া করিস না কেন কাল শিখে আসবি মনে থাকে যেন।আমার সৎ মা ঘরে সে কথা সবাই জানতো, চাহিদা মত সব পাওয়া আমার ভাগ্যে ছিলো না। মাঝে মাঝে কি যে হতো জানি না সব ছেড়ে ছুড়ে নাওয়া খাওয়া ভুলে ক্ষেতের পাড়ে একাকী হাজার ভাবনার জালে ঘুমিয়ে পড়তাম।কখনও বাবা কিংবা তুই এসে রাত্রিতে ঘরে নিয়ে আসতি ।
সব আজ অনেক দূরের ঐ পাড়ে আর আমি এখন শত বিত্তের মাঝে থেকেও কেন জানি খেই হারাই । মনে হয় কেমনে আবার ফিরে যাই -যে খানে আমার শৈশবের না বুঝা ভালোবাসার খেলাঘর ছিলো ,ছিলি তুই—।কেন এমন করে পর করে দিলি আমাকে ? এতো নিষ্ঠুর তুই ছিলি না, অন্তত একবার তো আমার খোঁজ করতে পারতি। আমি না হয় হাজার দৈন্যতার সাগর পাড়ি দিতে গিয়ে একটু বে-খেয়ালেই ছিলাম তাই তুইও আমায় পর করে দিলি? আজ এই বিশাল সাগরের মাঝে কেবলই মনে হয় আমি এক অন্ধকারের বাসিন্দা, আমার আশে পাশে কেউ নেই সত্যি কেউ নেই এ জীবনে কাউকে আপন করে ভাবি নাই—কেন যেন মনে হয়েছিলো তুই ই আমার যুগ যুগের সাথী—
এত শত শত সুন্দরীর আনা গোনায় কখনও মনে হয়নি আমার কাউকে চাই। কেমন যেন এক ঘোরের মাঝে ছিলাম ,তুই আছিস আমার সাথে।তুই তো আমার সব অবুঝ সময়ের ভালোবাসা কেমন করে পরিনত বয়সে ডাল পালা মেলে রঙিন প্রজাপতি হয়ে উঠেছিলো ।
তোর খোঁজ করতে গিয়ে দু’চোখ ভরে গেলো সংসারে তোরও সুখ হয়নি বুঝতে পারলাম। সন্তান জন্মদিতে গিয়ে ভবলীলা সাঙ্গ করে ওপারে পাড়ি দিলি আমাকে আর তোর বুকের ধন মানিককে একা করে চলে গেলি। তোর স্বামী আর একটা সংসার করেছে । তাই রানী তোর মেয়ে তার নানার কাছে থাকে।
আমি অনেক অনুরোধ করে রানী কে আমার কাছে নিয়ে এসেছি । দেখতে একেবারে তোর আদল পেয়েছে খুবই অল্পদিনে আমাদের মাঝে সুন্দর সন্পর্ক গড়ে উঠেছে । ও আমাকে বাপি বলে ডাকে
কি যে পরম পাওয়া ওর ঐ ডাকে । আজ আর আমার ঘর অন্ধকারে নয় আলোয় ভরে আছে রানীর রূপময় রাজত্বে , আমাকে শাসন করে আদর করে আমি যেন তার সত্যিকারের বাবা । ওকে বলেছি তোর আর আমার ছোট বেলার বেড়ে উঠার কথা। কি জানি কি বুঝেছে পরম শ্রদ্ধায় আর ভালোবাসায় আমার যত্ন করে ঠি ক যেমন তুই করতি ।
ওকে ডাক্তারী পড়াবো যাতে মায়েদের সেবায়
নিবেদিত হতে পারে। কোন মা যেন আর প্রসব কালে মৃত্যুবরণ না করে।ঐ হাসপাতালের নাম হবে তোর নামে *কুসুমকলি*—এই টুকু দেখে যেতে পারলেই আমার এ জীবন ধন্য হবে। তুই ওপাড়ে বসে দোয়া করিস।
রানী এবং হাসপাতাল যেন জনগনের সেবায় ধন্য হয়—🌹
আমার আর তোর ভালোবাসা রানীর মধ্যে দিয়ে বেঁচে থাকুক এ জগতে—উপর থেকে আশির্বাদ করো—
আজ আর পারছিনা—
তোমারই ভালোবাসার প্রিয়
————হতভাগা সুশান্তানু
*এক হতভাগা প্রেমিকের রোজনামচা হতে একখানা পত্র প্রায়াত প্রেমিকা কে লেখা*
(… .. স্বপ্ন বিলাস)

1 COMMENT

  1. অনেক ভালোবাসা শুভেচ্ছা সকল বন্ধুদের ও জনাব আশিকুর রহমান সাহেব কে-🌷আমার প্রাণের সখী কুসুমকলি—-❤️ *দৈনিক আলাপ এ এই লেখা প্রকাশিত করার জন্য। দৈনিক আলাপের সকল বন্ধুদের জন্য রইলো শুভ কামনা এবং প্রত্রিকার সার্বিক উন্নতি কামনা করি—🌹
    শুভেচ্ছা অন্তে—হাজেরা বেগম☘️
    08-06-2019/LA

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here