রাতের কবিতা
খাতুনে জান্নাত
ঘুঙুর ছড়ানো রাতের কবিতা
লেখা হয় ভোরের পৃষ্ঠায়
শব্দের বুননে জীবনের অনুপ্রাস
চুপিসারে হাত রাখে হাতে আগামী আহ্লাদ
এখন অভিযোগ অভিমান নয়
টুকরো টুকরো জলছবি চিত্রময়
প্রাণ উজ্জয়নী প্রাণ পাতে সময়ের স্রোতে
নির্মিলিত ভাবের উদ্ভাস
স্মৃতির কথন ডাকে ডাক নামে
খাড়াই উৎরাইয়ে
জীবনের সিঁড়ি চলতেই থাকে অবিরাম…
এখনো হয়নি দেখা
এখনো হয়নি দেখা
তাড়া নেই
সময় ঘড়ির হিসাব কে রাখে!
পেন্ডুলামে ঝুলে থাকে পুরনো কফিন
খুলে খুলে পড়ে কলার মোচার মতো
জানালার ভাঙ্গা পাট, দরোজার কড়া
মরিচার বেড়ি
ভেঙে ফেলি জোর হাতে কঙ্কর দেয়াল
রাতের নির্জনতায় বিশুদ্ধতার কোমল বাতাস
বীণা বাজায় কাহারবায়
এখনো হয়নি দেখা
নাইবা হলো, তাড়া নেই…
আগন্তুক
ফাগুন সকাল টা মিটিমিটি হাসছে
তুমি আবার এসেছো
শিমুলের ডাল বেয়ে চুইয়ে পড়ছে লাল আভা
বাতাসে কৈশোরমন
পাখির উড্ডয়ন সংবাদ বলে, তুমি ফিরে ফিরে আসো
ঋতু
বন
হলদে বউ
পলাশ
আগন্তুক
তোমার আগমনী বার্তা কালের কপালে ঝলঝলে টিপ
বাজছে, মৃদঙ্গ, সরোদ,
একতারা, দোতারা
প্রকৃতি জানাচ্ছে প্রেম
অক্ষরলেখা হে অনন্ত অসীম…
সংবর্তন
১. নিজস্ব ভুগোল ছেড়ে তোমার জ্যামিতিতে ঢুকে পড়েছি কবেই ত্রিকোনমিতির অলকানন্দা পাঠ তোলা থাক সময়ের হাতলে।
২. রাতের গভীরতা মাপার জন্য সম্পর্কের উপমাই যথেষ্ট।
৩. সিত্রাংয়ের ক্ষয়ক্ষতি দেখে তোমার আমার বিবশতার স্ন্যাপশট ভেসে উঠলে কে ধরিয়ে দেবে হাইফেন চিহ্ন কোথায় বসবে?
৪. সংসারের চিত্রকল্পগুলো ঝড়ো অরণ্যে বৃক্ষের মতো ডানা ঝাপটায়।
৫. প্রেম এক উড়নি পাখির নাম … পরিযায়ী পদচিহ্নে উৎপ্রেক্ষা ঠিকানাবিহীন…
৬. এলোকেশী ঢাক ডুমডুম নৃত্যে লণ্ডভণ্ড করে প্রকৃতিশ্বর প্রশান্ত হলো; নূপুরের আর্তনাদ এখনো বাজছে সাগরতটে…
৭. শব্দের অঙ্গে নিঃশব্দের অঙ্গ জড়িয়ে মায়া কাটালে বুনো অনুপমসহ পথ হারিয়ে ফেলল অলঙ্কারের নিবেদন…
৮. ভালোবাসা অঙ্গে সজ্জিত তরঙ্গ মিথ ও মিথস্ক্রিয়ার পরম বোধনে তুমি হাসো, ডুবো, ভাসো অস্ফুট রোধনে…
…
প্রেমপত্র
…
তোকে ভাবলে সকাল ফুরফুরা মেঘ হয়ে উড়ে
মোখার এগার নম্বর সিগনালকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে
দিনমজুরের শক্তি আসে
ঠেলা গাড়ি ঠেলি
প্রাসাদের ইট,সুরকি, সিমেন্ট,
বন্দরের মাল নামাই বৈরাগী গীত…
তোর ভালোবাসা নীল ফড়িং
গহীন অরণ্যে চক্কর মারে-
আধুনিক হেলিকপ্টার সাজ!
হাসপাতালের বারান্দায়, স্পেসে
কারো মলমূত্র পরিষ্কারের কাজ জোটে যদি
নয়তো ডোমের হেল্পার।
কিংবা রেলস্টেশনের কুলি
কামারের হাঁপর, কুমোরের মাটি টানি…
অভাবের পেটে তোর ভালোবাসা ওজনধারী পাথ্থর
তবুও ঝড়ে উড়ি নারিকেল গাছ
গোলপাতার ছাউনি-
‘আমি কি ডরাই সখা তিরিঙ্গি ঢেউরে!’
আম্ফান, ফনীর ঢেউয়ে নৌকা ছাড়ি
তিনদিন খাবার নাই সংসারের পটে
পান করি নির্ভেজাল বাতাস
গিরিবাজ কৈতরের মতো গোত্তা খাই
বাতাস বন্দরে পাঠাই অন্তহীন প্রেমপত্র…
…