ভারত থেকে বাংলা সাহিত্যের অন্যতম সারথি অলক জানা ‘র একগুচ্ছ কবিতা

222
অলক জানা 'র একগুচ্ছ কবিতা

অলক জানা ‘র একগুচ্ছ কবিতা
“””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””
প্রেমিক

না ছুঁতে পারার দূরত্বে দাঁড়িয়ে খরচ হয় আস্ত একটা জীবন, বয়স বাড়ার সঙ্গে প্রসঙ্গটা পুরনো মদের মতো আরো খাঁটি ও গুণময়, এখন সংসারে তেমন কারো দাবি নেই, কেবল পটচালার মতো কর্তব্যে অবিচলিত একটা পথ, পান্থশালা, সুযোগ মতো সত্যি খানিক জিরিয়ে নেয়া যায়। অনেক ঝড় গ্যাছে, আবারো আসতে পারে, তবুও একান্তে ভাবতেই না অদ্ভুত শিহরণ ভেতরে, নাকি পৃথিবীর কোথাও না কোথাও এখন বসন্তকাল, বিজ্ঞাপন ছাড়াই ছাড়পত্র পৌঁছে যায় নির্দিষ্ট ঠিকানায়, কাল সারাদিন স্বাভাবিক কাজকর্মের মধ্যেও তুমি নামক অতীত, কেমন সংগোপন উজ্জ্বল।

ঝিনুক বাটি

বন চিরে বেরিয়ে আসা ঝুঁকির রোদের মতো লেগে থাকে ঠোঁটের তীক্ষ্ণ অভিমান, ঝিনুক বাটির সঙ্গে স্তন্যদায়ীনীর এক অলিখিত বোঝাপড়া আবহমান, প্রতিটি কর্তব্য জানে
দিন শেষের ফলাফল, উচাটন বায়ু প্রবাহে
খসে তারা, বাসা ভাঙে হেরে যায় যথার্থ সংবিধান, জননী ও ঝিনুকবাটি একাকার, অধিকতর প্রত্যাশা বিমুখ, একটি সূর্যোদয়।

সাইকেল স্বভাবের ইচ্ছে

আশংকার কোন মনখারাপ নেই,
কোন ক্ষোভ ? তাও না, প্রশস্ত বুকের সীমানায় বাসা বাঁধলেই আকাশ চিরে নেমে আসে বিপন্নতার ধূলিঝড়, ঘর ভাঙে গাছ ভাঙে মানুষের মনও। হাতের বাইরে থেকে যেতে চায় নির্ভরতার জলিগোপীনাথ পুর, ডাঙাফুলির ধানবেড়, সফল বাঁচার জন্য দরকার ঘাসবীজ ধান এবং ধরিত্রী, এই সামান্য বিত্তের ঘরেও মেঘ ডেকে ওঠে কু-গায়, একটি ইচ্ছে পূরণের জন্য আর একটি ইচ্ছের প্রয়োজন, প্রতিটি মনের ইচ্ছে সাইকেল স্বভাবের মতো নিষ্ক্রিয়, কেই এসে গতি দিলে তবেই না গন্তব্যপাঠ।

ধা

এত ধুলোবালি কেচ্ছারই সমান, পথের কোন মনখারাপ নেই, ইচ্ছে অনিচ্ছের বিকার সামলে
পথ বরাবরই সুদূরপ্রসারী, এখন তো চাঁদে বসে কবিতা লেখার দিন দরজায় চলে এল বলে !
তোমাকে নিয়ে আমরণ ভেবে কাটাবো তেমন দাসখত দিইনি, এই স্বগত বিদ্রোহ রক্তে নিয়ে দূরাশায় নোঙর করে মেরু বলয়, যত আনন্দ নিয়ে বসে থাকে কৃষ্ণগহ্বর, ভ্রাম্যমাণ স্থূলতায় যে আলোর তরঙ্গ নামে তাকে জ্যোৎস্না ডেকে বেজায় ভুল হলো হাজার যুগ, এই ধারণ এই প্রবাহ সক্ষমতা নিয়ে হেঁটে যায় এক চাঁদ রাধা ও পৃথিবীর পথ।

পুরুষোত্তম

এত অনুনয় উপরোধ তবুও পাথর একটুও গলে না, প্রত্যাশা চোরা বিলে ঢেউ কেটে যায়। এই পা ধরি, এই হাত—মহানগরীর সতেজ আলোর উৎসাহে কবি ভেসে যেতে চায়, কবিতার খাতায় নামুক সম্মতির আকাশ গঙ্গা, এক তরফা সাড়ায় হোক উৎসব, এমন আধেক বোক একজন কবির স্বভাব বিরুদ্ধ, চিকন শরীরের মায়া ছেড়ে যদি সমর্পণে ডাকো, হ্যাঁ সেই দিন
বাস-ট্রেন পথ ভেঙে একটা মহাকাব্যের জন্য দু শো কিমি পথ অস্ত্রপ্রচার পা ঠিক পৌঁছে যাবে গন্তব্যে।

দ্রৌপদীর শাড়ি

ইচ্ছের বিরুদ্ধে আঁচল টানলে সব নারীর ভেতর দ্রৌপদী জন্ম, সমস্ত নিষেধ ভেঙ্গে আর্তস্বর ছড়ায় ভূভারত, মৌন সব কিংবদন্তি দিকপাল তখন নিষ্প্রাণ এক একটি ঔদ্ধত্য ইমারতের থাম, সেই মুহূর্তে যাদের কাম ক্রোধ প্রেম চেতনা কিছুই নেই কেবল নীবব সম্মতি অথবা নিরুপায়ের মতো জটিল এক ব্যধির শিকার।
শাড়ির সৌন্দর্য পৃথিবীর চেয়ে আকাশ জানে
তুমি দানব যতবার লজ্জাহরণের চেষ্টা করবে উপচে পড়া আকাশের নীল ততবার হয়ে যাবে দ্রৌপদীর শাড়ি।

যোদ্ধা

বাবার চলে যাওয়ার দিন চাঁদকে খুব বিষণ্ণ দেখেছি, স্পষ্ট মনে আছে মায়ের সিঁথির রঙ বহুদিন লালচে হয়ে থেকে যেতে, মা মানেই জীবন্ত কোন দেবী, দু-দশকের একটু বেশি
বাবা ঘরের বাইরে জামতলায় ছাই হয়ে আছে। যোগ-বিয়োগের খেলায় সূর্যোদয় সূর্যাস্তের যোগসাজশ, এখন বাবা হওয়ার পর বেশ বোঝা যায় একজন যোদ্ধার নিরন্তর দায় দায়িত্ব—–

নরবলি উৎসব

অসংখ্য মৃত্যুর পর জয়,
সিংহাসন লাভ
পুরনো ইতিহাস মুক্তি পেল কই—

হে রাজন, সত্যিই ভালোবাসার আকাল !
মেকি সভ্যতার এই শতক
আদিমতম গুহায় আটকে আছে।

সাচ্চা প্রেমিক যদি হও হাতে অস্ত্র নয়,
বাঁশি থাকে, মুখে উচ্চারিত বেদমন্ত্র,
তুমি এসবের কিছুই জানোনা বলে
নির্বাচিত মাঠ থেকে উঠে এলে তোমার গায়ে লেগে থাকে রক্ত আর বারুদের গন্ধ।

আধার

মানুষের নিজের আবার স্বভাব চরিৎ ?
পরিস্থিতি মতো সবই ধার উধারের পালাগান
চূড়ান্ত স্বার্থপর হতে চিল, অপেক্ষায় চাতক, স্বেচ্ছাচারিতায় বাঘ-সিহ, ধূর্তে শিয়াল, আঘাত দিতে হায়না, নোংরামিতে কাক শকুন, প্রেম প্রার্থনায় গাইয়ে পাখি। ছোবল দিতে বিষাক্ত সাপ, একে একে সবই সংগ্রহ, মানী পাণ্ডিত্যে ঘৃণায়, সমবেদনায় কোন না কোন পশু পাখির প্রত্যক্ষ ইন্ধন, তবুও তাকে ডাকি, প্রতি ডাকের অপেক্ষায় গ্লাসে ঢেলে রাখি মদ, গর্ভনিরোধক বড়ি, প্রতিশ্রুতির ঘরকন্না——-
মানুষ বড়জোর একটি আধার, যে আমরণ অন্যের স্বভাব চুরি করে পরের ধনে পোদ্দারি।

গতি

যেটুকু খোঁজ খবর, সামান্য বার্তা বিনিময়
সবটাই নিয়ম রক্ষা ? অতীতের কিছু সুচারু অভ্যাস, পালটে ফেলা সহজ জেনেও থেকে যায় অসতর্ক ঘুমের মধ্যে প্রলাপের মতো—সংকোচ, গহনার মূল্যে শোভা পায় যেখানে
তাকেও একটি ছলনা ভাবা, ভুল নয় আদৌ
কত অসংগতি অবিচার বঞ্চনা নিয়ে জীবন বরাবর হেঁটে যায় পরবর্তী আঘাতের জন্য।

গড্ডলিকা

হাসপাতালের বিছানা জানে, শারীরিক প্রদাহ কেবল একজন রোগীর, সমবেদনা শব্দের খানিকটা অসুস্থ বাতাস পরিজনদের পাড়ায় বয়ে যায়, উষ্ণতা বাড়ে বিনা মেঘে অনর্থক নেমে আসে গুটিকতক বজ্রপাত। শরীর ও রাষ্ট্র কখনো নিরাময় বা মেরামত হতে পারে ? একটার পর একটা আপদ পায়ে পায়ে
ভিড় ও আলোড়ন, অসুখ নারীর সঙ্গে পুরুষ, পুরুষের সঙ্গে নারীর মতো মজে প্রিয় আচরণ, রোদছায়ার সান্ত্বনা গায়, ত্রুটি ও অন্যায় নিয়ে দৃশ্যত সম্পর্ক থেকে শ্মশান সবটাই ধারাবাহিক।

শ্রেণিকরণ

তোমাকে শিখিয়েছি বর্ণপরিচয়ের অতল রহস্য, নিষ্পাপ ঠোঁটের অযুত উষ্ণতায় সূর্যাস্তের
ঘরে ফেরার গান, সব চরিত্রই মহাভারতের নতুন সংস্করণ, অবাক হওয়ার মতো নয়—-
খসে পড়া পালকে ঝিমিয়ে থাকে অপেক্ষার প্রতিশ্রুতি, মহানগরীর চতুর আলোয় মিশে যায় গ্রাম, সংশয় জাগতে পারে সহজাত নিয়মে, এক ফোঁটা রক্ত দিও তোমার, পরখ করে দেখি কতটা তাতে চারপেয়ে মর্জি প্রাপ্ত !

বাসুল্যা/ সবংশ্যামসুন্দর পুর /পশ্চিম মেদিনীপুর -৭২১১৫৫/ পশ্চিমবঙ্গ /ভারতবর্ষ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here