“কি দিয়ে কবিতা সাজাই?” লিখেছেন সভ্যতা গড়ার অন্যতম সারথি কবি নাসরীণ জাহান রীণা।

463

কি দিয়ে কবিতা সাজাই ? 

                            নাসরীণ জাহান রীণা

আমি কি দিয়ে আজ কবিতা সাজাই ?
চারপাশে কেবলই নাশকতার গন্ধ পাই ।
খটখটে শব্দদের অবাঞ্চিত পায়চারী ,
ধর্ষণ,খুন,ক্ষমতার লড়াই,নগ্নতা,অসভ্যতা ,
অমানবিকতা,সুদ-ঘুষ,অন্যায়ের মতো রূঢ় শব্দগুলোই ধরা দেয় ।
নেতিবাচক শব্দগুলোর মধ্যে কবিতার সুঘ্রাণ অন্তঃত পাই না ।

পলিথিনে মোড়ানো মৃতপ্রায় নিষিদ্ধ প্রজন্ম !
চিৎকারে আমার কবিতার কান ফাটে !
অথচ জায়েজহীনতায় শরীরি স্বাদ আস্বাদন করেছিল নিস্পাপ ভ্রুণের জনক-জননী ।
তাদের কর্ণকুহরে চিৎকার না ফুটে !
এসব কি আমার কবিতায় মানায় ?
তাই ভাবি,কি দিয়ে যে কবিতা সাজাই ?

হেথা-হোথা নগ্ন রক্তাক্ত নারী শরীর ,
সভ্য-সুশীলরাই চেটেছে,ছিঁড়েছে
তারপর করেছে নিথর !
এ ও কি আমি কবিতায় নেবো ?
না, ইচ্ছে করছে না ।

গুজব-গজব, বালিশ,পর্দা,শাড়ি,শেয়ার,
জামালপুর,ফরিদপুর, ডেঙ্গুঁ,মদ-জুয়ার ক্যাসিনো
নেবো কি এসব কিছু সুযোগী কিছু হুজুগী বার্তা ?
সস্তা মনে হয় ;
তাই কবিতা আমার সাজবিহীন রয় !

অভিজাত শ্রেণির দৌরাত্ম্যে প্রকম্পিত মেদিনী ,
সভ্যতার সূর্য্যে লেগেছে গ্রহণ,
প্রসব করছে না সোনালী আলো,
ঢেকেছে তার আভা অসভ্যতার কালো ।
তাই কবিতার সাজ নেই ভালো ।

গৃহে অনিচ্ছার কারাবাসে বিদগ্ধ রমনী !
পথে মানবতা লুটে,আগামী টুটে শিশুর শ্রম !
বৃদ্ধাশ্রমে অবান্তর আসবাবের ন্যায় ফেলে আসা পিতা-মাতার নীরব ক্রন্দন !
বেকারত্বের তুষানলে অন্তর পোড়াগন্ধে সময়ের উজ্জ্বল তরুণ !
প্রশংসনীয় সনদধারী, কর্মে-সম্মানীতে অসন্তুষ্টির ভার বয়ে বেড়ানো যুবকের দীর্ঘশ্বাস !
সরলতা বয়ে বেড়ানো মনকে চাটুকারিতার অবদমনে নিমজ্জিত করা !
এসব কি লিখবো কবিতায় ?
ঠিক লাগছে না ।
কবিতাও তাই ঠিক সাজছে না ।

অধর্মের ছড়াছড়িতে পূর্ণ সমাজের প্রদর্শিত দর্পণ ,
বেলাল্লাপনার চরম শিখরে আরোহিত সংক্ষিপ্ত বস্ত্রধারী নারী ,
মুখে ধর্মের বুলিতে মূখরিত করা মুনাফিকের কথার ফুলঝুরি ,
তমসাচ্ছন্ন অন্তরের লুকায়িত হিংসার দাবানলে ছাই করে দেয়া প্রতিদ্বন্দ্বীর শুভময়তা ,
স্বাধীনতার ৪৭ বছর পেরিয়েও পরাধীনতার ছোবল।

কোনটাকে আমি কবিতায় স্থান দেবো ?
ঘেন্না হয় যে বড়ো !
কবিতার বাক্যদের করতে পারি না জড়ো !

পেলবতা,সুকোমলতা,স্নিগ্ধতা , নির্মলতা,সুন্দর,পবিত্রতা,
স্বাধীনতা,ধর্মবোধ,শৃঙ্খলতা,
মানবতা,মমত্ববোধ,সততা,
শুদ্ধতা,
এমন শত সন্তানের জননী আজ বন্ধ্যা ।
আমার কবিতারও আজ বড্ডো ক্ষুধা ।
কিছু আহার চাই তার ।
ঢেলে সাজাতে আঁধার বাসভুমি ,
বন্ধ্যা নাড়ি ছিঁড়ে টেনে আনতে সুযোগ্য সন্তানদের ।

আলোয় আলোয় চারদিক ভরে যাবে ,
আমার কবিতাও সুঘ্রাণ ছড়াবে ।
এমন জনক সৃষ্টি করো প্রভু ।
যোগ্য সন্তানের মাতৃ জঠরও যেন বন্ধ্যা না থাকে কভু ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here