তুমি ক্যামন আছো, পৃথিবী?
জেসমিন জাহান
পৃথিবীর আয়ু কী তবে ফুরিয়ে এসেছে?
সমাপ্তিহীন ক্ষুধায় জর্জরিত মানুষের মন
হিংস্র শকুনীর চোখ আজ দ্যাখে শুধুই
এইসব বোধহীন মানুষের জীবন্ত ভাগাড়।
বিষাদের চাদরে ঢেকেছে আকাশের মুখ
স্বপ্নীল চোখে আজ শুধু আতঙ্কের ছায়া।
চারিদিকে ভাঙনের ভয়ংকর শব্দের ভিড়
অচেনা প্রাণের উৎসব ঘোর লাগা চোখে।
পেরিয়ে এসেছি উৎসব মুখর দিনরাত্রি
লৌকিকতাকে কবেই দিয়েছি নির্বাসনে
হালখাতাটা ব্ন্দী আজ ব্যাপারীর সিন্ধুকে
মঙ্গল শোভাযাত্রা ঢেকেছে মৃত্যুর মিছিল
কৃষ্ণচূড়ার লাল রঙে সেজেছে মহামারি
গরদের ভাঁজ ভেঙে আলতায় রাঙিয়ে পা
বাঁশির সুরে কেউ ডাকেনি ‘এসো বৈশাখ’
রমনা আজ শোকের আল্পনায় ম্রিয়মান।
বর্ণিল সজ্জার জনতার মঞ্চ আজ শূন্য
বাহারী পোশাক আজ ছেড়েছে রাজপথ
রেশমি চুড়ি, নাগরদোলা শূন্য বটের ছায়া
ধুতি-পান্জাবি রেখে জড়িয়েছে নামাবলী
পরমাত্মার সন্ধানে করছে আত্মার মন্থন।
অসহায় প্রাণ তাঁরই একাগ্র সাধনায় মগ্ন।
পৃথিবী থমকে আজ; মানুষের বয়সও স্থির
জীবনের অনেকটাই বিয়োগের খাতায়।
কিছু স্মৃতি, কিছু কথা, কিছু অপূর্ণ আশা
নিত্য অভ্যাসগুলোই শুধু বয়ে বেড়ানো,
নিঃস্ব-রিক্ত-নিরুপায় আজ; হাত পেতেছি
নিঃশঙ্ক চিত্তে হে প্রিয়তম, তোমারই কাছে
আরো কিছুটা সময় দাও এ অধম বান্দায়
প্রভু হে আমার,অন্তর-বাহিরে তুমিই আছো
ভীষণ ঝড় অন্দরমহলে;বাইরে দারুন রাত
আদমের আদিম যন্ত্রনায় কাতর উত্তরসূরী।
একাকীত্বের যন্ত্রণা থেকে বাঁচাও মানবকুল
কারাগারের এই অদৃশ্য দেয়াল ভেঙে দাও
খুলে দাও বন্ধ কপাট; আপনার করে নাও
আড়াল কর দূর; নিমিষে দেখা দাও প্রিয়
তুলে নাও এ সংকট; দেখাও আলোর পথ
যে পথে হেঁটে গেছে প্রিয়তম বন্ধু তোমার।