ভারত থেকে জীবন বোধের কবি-শুক্লা ভৌমিক এর অসাধারণ কবিতা “চিৎকার করে আমার”

598
ভারত থেকে জীবন বোধের কবি-শুক্লা ভৌমিক এর অসাধারণ কবিতা “চিৎকার করে আমার”

চিৎকার করে আমার কলম 

                        শুক্লা ভৌমিক

সেদিন রাতে অদ্ভূত আওয়াজে হঠাৎ ভেঙ্গে গেল ঘুম ।
ঘড়ির কাঁটায় রাত বারোটা চারিদিক নিঝ্ঝুম্ ।
দেখি ! টেবিলে রাখা কলমটি ঠক্ ঠকিয়ে কাঁপছে।
কৌতূহল নিয়ে কাছে গেলাম ,মনে হল কিছু বলছে।
ধরলে খাতায় খস্ খসিয়ে লিখল অনেক কথা।
সাহস রাখ !এতদূর শুনেই ভয় পেওনা অযথা।
হাঁপিয়ে কলম থামল যখন, দেখি ভরিয়ে দিয়েছে খাতা।
ব্যক্ত করেছে কোনো ঝলসানো প্রাণের আর্তনাদ জরানো ব্যথা ।
শুরুতে জানিয়েছে – বর্তমানের বাইরেটা মারাত্মক ভয়ঙ্কর।
ছড়িয়ে রয়েছে জীবাণু ঘটিত মহামারীর থেকেও ভয়ানক মন্বন্তর।
বিকৃত মস্তিষ্কে বাঁধে এই ঘৃণ্য রোগ বাসা ।
তৈরী হয় কিছু দূরাচারী ,যাদের স্বভাব সর্বনাশা ।
বামা জাতি দেখলে হয় এদের মস্তিষ্কে লালাক্ষরণ ।
নরম সুস্বাদু স্ত্রী-মাংসে হয় তাদের ক্ষুধা নিবারণ।
হাড় চামড়া চিবিয়ে খেয়ে মেটে না তাদের সাধ।
পড়ে থাকা দেহাবশেষে আগুন লাগায়, ঐ সব জল্লাদ ।
বেশ কিছুদিন ঐ খবর থাকে সংবাদ শিরোনামে ।
ক’দিন বাদে সে-কথা ভুলে ডুব দেয় সব মনোরঞ্জন ধামে ।
মিছিলে হাঁটা মোমবাতিটাও জানে- দুদিনের হুঙ্কার।
অগ্নিদগ্ধ শরীরটা ঠাণ্ডা হলেই স্ত্রী-জাতি ধর্ষিত হবে আবার।
শুধু তাই কেন ?তখনও বাতাসে হয়তো পোড়া গন্ধ থাকবে !
কোনো নিষ্পাপ শর্বরীর তীক্ষ্ণ চিৎকারে আবার মেদিনী কাঁপবে।
ভাবতো তার মায়ের কথা ! যার বুকটা হু..হু করছে।
চোখ দুটো তার ঘরের কোনে জলজ্যান্ত মেয়েটাকে খুঁজছে।

দন্ডমুন্ডের সস্তার আবেগে কন্যা জাতির লাভ কি ?
স্লোগান আর অনুদানে দগ্ দগে ঘা ভরবে কি ?
এই বর্বরতা চলবে কতদিন ?উত্তর নেই জানা ।
জনসমক্ষে ,প্রকাশ্য দিবালোকে পিশাচ
গুলিকে দিতে হবে চরম শাস্তিখানা।
ভয়ঙ্কর ঐ শাস্তি দেখে, যেন কাঁপে বাকী নরখাদকের প্রাণ ।
স্বপ্নেও যেন ভয়ে গলা শুকিয়ে আসে ,ভাবলে মা-জাতির অসন্মান ।
তবে বলে রাখি – দরকার নেই করুণা আর সহানুভূতির দীর্ঘশ্বাস ।
স্বয়ংশক্তিতে বলীয়ান করে মেয়েদের জাগাতে হবে আত্মবিশ্বাস।
নারীকে কেন বাঁচাতে হবে !সে নিজেই নিজেকে বাঁচাবে।
কলমের সাথে আত্মরক্ষার শিক্ষা আবশ্যিক করতে হবে।
আরো লিখল -পড়াশোনা করবে তখন ,যখন প্রাণে তনয়া বাঁচবে।
তাই লেখাপড়া আর নিজ-সুরক্ষার শিক্ষা নিয়ে স্বয়ংসিদ্ধা হতে হবে।

এইভাবে কলম চিৎকার করে জানাচ্ছে প্রতিবাদ।
উচ্চাসনে কি পৌঁছাচ্ছে এই ক্ষোভের প্রতিধ্বনি-নিনাদ ?
ঢাকনা আটকে আমি না হয় চাপা দিলাম কলমের মুখ।
তবে নারী সু্রক্ষা পোক্ত হলে উজ্জ্বল হবে দেশের মুখ।
মাতৃত্বের আশীষ দিয়েছেন ঈশ্বর যাদের মাথার পরে।
সেই মানবীর মান রক্ষার দায়িত্ব বর্তায় রাষ্ট্রেরই পরে।
বিক্ষোভ করেই আদায় করতে হবে উচ্চমানের নারী-সুরক্ষার অধিকার ।
তবেই প্রাণ ভরে বাঁচবে আত্মজা,এইভাবে বিপ্লব আসবে আবার।
তাই যেমন হোক না ভাই সমাজের যন্ত্র।
মেয়েদের বলে রাখি -স্বয়ংসুরক্ষা হোক মহামন্ত্র।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here