আমার খুব ইচ্ছে করে
পাঞ্জাব বিশ্বাস
আমার খুব ইচ্ছে করে,
হেমন্তের ভোরে
নীড় ছেড়ে উড়ে যাওয়া পাখিদের ডানায় চড়ে দেখি,
চত্রা-বিলের জলে কমল কুসুম এখনো ফোটে নাকি!
যেখানে কানি-বকের ক্ষুধার্ত চোখের ভেতরে
ডানকানার ঝাঁক কিলবিল করে।
খেজুর রসের হাঁড়া মাথায় করে সবুজ মাঠের আল ধরে
কনকনে শীতে জবুথবু প্রেমচরণ-গাছি এগিয়ে যায়
অনাগত স্বপ্নের জাল বোনে পায় পায়।
ইচ্ছে করে দেখি,
বীরাঙ্গনা বাসন্তী এখনো বেঁচে আছে, নাকি
মরে গেছে ইতিহাসের স্বপ্নের সাথে!
পাক-আতঙ্ক মুক্তিযোদ্ধা কাশেমের নাকি ছেঁড়া গেঞ্জি গায়, রিক্সা চালায়,
কোন ঝুপড়িঘরে শুয়ে থেকে রাত কাটায়!
চন্দাবতীর নদীর ঘাটে রক্তাক্ত যুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ এখনো
বেঁচে আছে কিনা!
মোমিন রাজাকারের বংশধরেরা এখন মুজিবকোর্ট পরে!
শুনেছি
শান্তিকমিটির দালাল জব্বারের ছেলেদের ঘরে
মেলা টাক্যা!
ওরাই নাকি স্বাধীনতা এখন!
পায়ের পাতায় জড়িয়ে রাখে ফুলের ফাগুন।
গুদামজাত রবিশস্যের মতো বিক্রি হয় রাজনীতি
দলীয় পদ পদবী এমনকি রাজটিকা!
তবে রাস্তাঘাট নাকি পাকা হয়েছে,
বড়ো বড়ো দালান উঠেছে গাঁয়ের ভেতরে,
বিদ্যুৎ বাতির আলোয় নাকি চারদিকে ঝলমল করে!
কিন্তু মন্বন্তরের দারুণ মহড়া হচ্ছে মানুষের বুকে
সূর্যের প্রসংশা হয় পেঁচার মুখে!
মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার কমান্ডার
যাঁর চোখের পাতায় আঁকা ছিলো স্বদেশের মানচিত্র
যে ছিলো যুদ্ধজয়ের বরপুত্র
সে নাকি এখন চোখে দেখেনা!
বেদখল হয়েছে তাঁর নিজের বাড়িখানা!
যাঁর হাতের কব্জির আঘাতে
পাক দালালের কলজে থরথর করে কাঁপতো,
একটা আঘাতে শোয়ার ঘরের দরাজ-কপাট ভেঙে যেতো,
সেই সেলিম চৌধুরী অকেজো কিডনী দুটো নিয়ে
বিছানায় শুয়ে আছে যমদূতের গলা ধরে।
দেখতে ইচ্ছে করে,
কোনো এক সাইকেল চোরা নাকি হয়েছে ধনবান
এক হন্ডাচোর নেতা হয়েছে শুনলাম।
কোন এক মদ্যপ বেশ্যার দালাল নাকি হয়েছে ধনকুবের,
ত্যাগী নেতার তকমা পরেছে রাষ্ট্রীয় কোষাগার-খুনি।
এমপি মন্ত্রীরাও তাদের পথেই-চলছে শুনি!
এ কথাও শুনেছি, সেখানে রোজ রাতে
ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদে রক্তে ভেজা প্রিয় স্বাধীনতা!
প্রহরে প্রহরে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে স্বদেশের বুক,
সিরিয়ার বিজন মরুর মতো ধুধুকরে ইতিহাসের সুখ
রাতগুলো দিনের পোষাক পরে বুক উঁচিয়ে ঘোরে!
দিনগুলো নিরুদ্দেশ হয়েছে গোলার্ধের ওপারে!
এখন আমার ইচ্ছে করে
অনাগত প্রজন্মের গলাগলি ধরে
নতুন সঙ্গীত শিখি,
ইতিহাসের পান্ডুলিপিতে নতুন একটা পর্ব লিখি।