আমেরিকা থেকে কাব্য ভারতী কবি-সাহানুকা হাসান শিখার ঈদ এর লিখা ছোট গল্প“চাঁদরাতের কান্না”

384
সাহানুকা হাসান শিখার ঈদ এর লিখা ছোট গল্প “চাঁদরাতের কান্না”

চাঁদরাতের কান্না-

 সাহানুকা হাসান শিখা।

সোমারা এক ভাই ও এক বোন। বাবা সরকারি চাকরি করেন,মা স্কুল শিক্ষিকা। একটি চারতলা বিল্ডিং এর চতুর্থ তলায় ওরাথাকে। দুই পাশে বস্তি,অনেক গরীব লোকেরবসবাস। ঈদুল ফেতরের আগের দিন রাত। সোমা তাররুমে শুয়ে আছে লাইট অফ,আবছা অন্ধকার। খুব গরম পড়েছে,খাটের পাশের জানালা খোলা। শীতল হাওয়ার পরশ পেয়ে তার তন্দ্রা ভাব এসেছে। হটাত তার কানে কান্নার আওয়াজ আসলো। সোমা তাড়াতাড়ি এদিক ওদিক দেখতে লাগলো,কোথা থেকে কান্নার আওয়াজ আসছে!!হটাৎ তার চোখে পড়ল,বিল্ডিং এর নীচে,বস্তিতির একটা চাপরাতে কুপির মিটি মিটি আলো জ্বলছে,একটি মেয়ে বিলাপ করে কাঁদছে!!”আল্লা গো আল্লা তুমি কেন আমার বাজান রে নিয়া গেলা গো আল্লা। আইজ আমার বাজান বাইছা থাকলে, আমার লাইগা ঈদের জামা কিন্না আনতো। কাইলকা ঈদ,সবাই নতুন জামা পরবো গো মা” সোমা চিনতে পারলো মেয়েটিকে, কাজের বুয়া জরিনার মেয়ে নাম ফেলি। জরিনা বুয়া কান্না জড়ানো গলায় বলছে, “কান্দিস না মা তোর বাজানের লাইগা দোয়া কর, আল্লা যেন তারে বেহেস্ত নসীব করে। ফেলি আবারো বিলাপ করে কাঁদছে, মা’গো আমার বাজান ফিরিয়া আসুক আমার কাফর লাগবো না। বাজানেরে বুকে জরাইয়া ঈদ করমু গো’মা,আমার বাজানরে কারা মারলো,তা গো বিছার আল্লায় করবো”। কিছু দিন আগে সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত হয় ফেলির পিতা। সে সব্জি বিক্রি করতো পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে, সামান্য কিছু টাকার জন্য মাস্তানরা তাকে খুন করে। সোমা সারারাত ঘুমাতে পারে নাই। তাহার কানে ফেলির কান্নার আওয়াজ আসছিলে। কি করুণ আর্তনাদ। কাল যদি আমার বাবার এমন হয় আমি কি করবো, ভাবতে থাকে সোমা।
কিছুক্ষণের মধ্যে ফজরের আজান হলো। সোমা এক মূহুর্ত দেরি না করে, রান্না ঘরে গেলো তার মা প্রায় ঈদে,রাতেই সব রান্না করে রাখেন। সোমা বাটি ভরে সেমাই,পায়েস,কোরমা-পোলাও জর্দা সব একটু একটু করে নিলো। আর তার ঈদের সুন্দর জামা, চুড়ি, দুল, জুতা সব বেগের ভিতর করে নিয়ে ফেলির ঘরে হাজির হলো, ওরা তো দেখে অবাক!! সোমার বয়স মাত্র বারো বছর, ফেলিও ওরই বয়সি। তাই কাপড় টা ওর গায়ে হবে। আনন্দে আত্মহারা ফেলি ও তার মা। সোমা ফেলিকে বুকে জড়িয়ে ধরে বলে, আর কোন কান্না- কাটি করো না বোন। এই নতুন জামা পরে আমাদের বাসায় চলে এসো আজ এক সাথে বেড়াবো। জরিনা বুয়া হাত তুলে দোয়া করলো। আম্মা গো আল্লা যেন আপনারে নেক হায়াত দান করে, আপনি আমাগোরে এতো বড় সাহায্য করছেন ঈদের খুশি বিলাইয়া দিছেন, আমরা সব কষ্ট ভুইলা গেছি। সোমা বাসায় ফিরে এলো। এ দিকে ওর মা খুঁজে হয়রান, সাতসকালে মেয়ে কোথায় গেলো!! সোমা তার মা-বাবাকে সব খুলে বললো। উনারাও দারুণ খুশি,উনাদের মেয়ে এতো দানশীল এবং ত্যাগি। এতোটুকু মেয়ে,কেমন চিন্তাধারা তার। ঈদ মানে শুধু খাওয়া আর নতুন কাপড় পরা নয়।
ঈদ হলো সবার সাথে খুশি বন্টন করা,আমির গরীব কোন ভেদাভেদ নেই,সবাই এক সমান। সোমা আজ তাই প্রমাণ করলো।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here