সমাজ বিশ্লেষক-মোঃ সরওয়ারুজ্জামান মনা বিশ্বাস এর বিশ্লেষণ ধর্মী অসাধারণ লেখা “স্বপ্নের নগরী হতে পারে ঈশ্বরদী, যদি সেই স্বপ্ন দেখেন মাননীয় সাংসদ ”

573
সমাজ বিশ্লেষক-মোঃ সরওয়ারুজ্জামান মনা বিশ্বাস এর বিশ্লেষণ ধর্মী অসাধারণ লেখা “স্বপ্নের নগরী হতে পারে ঈশ্বরদী, যদি সেই স্বপ্ন দেখেন মাননীয় সাংসদ ”

” স্বপ্নের নগরী হতে পারে ঈশ্বরদী, যদি
সেই স্বপ্ন দেখেন মাননীয় সাংসদ। “

                        মোঃ সরওয়ারুজ্জামান মনা বিশ্বাস।

সবাই স্বপ্ন দেখে। কেউ স্বপ্ন দেখে নিজের উজ্জল ভবিষ্যতের, সন্তান সন্ততিকে দুধে ভাতে রাখার, তাদের উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করে বাড়ী গাড়ি, ধন সম্পদ, বিলাসিতা আর প্রাচুর্য দিয়ে সমৃদ্ধি করতে। কেউ বা অর্থ, বিত্ত, বৈভব অর্জন করে নিজেকে জমিদার, এলাকাকে জমিদারের অংশ এবং জনগনকে প্রজারুপ জ্ঞান করার স্বপ্ন দেখেন। কেউ বা স্বপ্ন দেখেন মাতা পিতার শেষ বয়সে শান্তিপুর্ন, সুখময়, সুন্দর জীবনের। আমিও স্বপ্ন দেখি। সেই অর্থে আমরা সবাই স্বাপ্নিক। আমি স্বপ্ন দেখি আমার ঈশ্বরদীকে নিয়ে। আমি স্বপ্ন দেখি সেই ঈশ্বরদীর যা হবে প্রান প্রাচুর্যে ভরা, যুক্তিবাদী, মুক্তমনের অধিকারী আর হ্নদয়বান মানুষের ঈশ্বরদী। আকাশ ছোঁয়া আত্মবিশ্বাসে সমৃদ্ধ, সৃজনশীলতায় উদ্দীপ্ত আর নিজের ভাগ্য গড়ার দৃঢ় প্রত্যয়ের আস্থাশীল মানুষের ঈশ্বরদী। যে ঈশ্বরদী হবে সন্ত্রাস, মাদক, দুর্নীতির কলুষমুক্ত, হবে স্বার্থপরতা এবং সংকীর্নতার উর্দ্ধে, আকাশের মত উদার, সাম্প্রদায়িকতার বিষবাস্প শুন্য, সকল মত-পথ- বিশ্বাসের চারনক্ষেত্র। কিন্তু সেই স্বপ্ন আমি দেখলে লাভ নাই, স্বপ্ন দেখতে হবে আসন্ন নির্বাচনে নির্বাচিত সাংসদকে।তাঁর থাকতে হবে ঈশ্বরদীর উন্নয়নের জন্য প্রতিশ্রুতি এবং দৃঢ় প্রত্যয়।

আমার প্রশ্ন, প্রাচীন ঐতিহ্যে ঐতিহ্যমন্ডিত গনতান্ত্রিক রাজনীতি চর্চ্চার উর্বর ভুমি, সাহিত্য- সাংস্কৃতি অনুশীলনের চারনক্ষেত্র ঈশ্বরদী কেন চলমান সরকারের উন্নয়নের দশকের কক্ষ পথ থেকে ছিটকে পড়ল? উন্নত এবং আদর্শ শহর হিসাবে স্বীকৃতি পাবার যে শর্ত, যেমন পরিকল্পিত ভাবে গড়ে উঠা, গনগ্রন্থাগার, সাংস্কৃতিক কেন্দ্র কাম অডিটোরিয়াম, আধুনিক ষ্টেডিয়াম, বিনোদনের ব্যবস্থা, সুপেয় পানি সরবরাহ, জল নিষ্কাষন ব্যাবস্থা, জলাধার আর সবুজের সমাহার ইত্যাদি পুরন করে ঈশ্বরদী একাবিংশ শতাব্দির উপযোগি শহর হিসাবে গড়ে উঠবে না কেন ? নির্বাচনের আগে পৌর মেয়র মহোদয়ের ঈশ্বরদীকে তিলোত্তমা নগরী হিসাবে গড়ে তোলার যে ঘোষনা, প্রত্যয় আর প্রতিশ্রুতি তা কি ” বক্তৃতার ফুলঝুড়ি”তে আটকেই থাকবে?
অধিক জনঅধ্যুষিত ঈশ্বরদী বাংলাদেশের যে কোন উপজেলা থেকে উন্নত এবং জেলা সদরের সমমানের উপজেলা, পারমানবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, ইপিজেড সহ বিভিন্ন শিল্পকারখানা এবং রেলওয়ে জংসন ও পাকশী বিভাগীয় কার্যলয় সহ ভৌগলিক অবস্থান ও যোগাযোগ ব্যবস্থার কারনে গুরুত্বপুর্ন একটি জনপদ। অথচ কয়েকটি আন্তনগরী ট্রেনের যাত্রাবিরতি না থাকা এবং পার্শ্ববর্তী থানার ( ভেড়ামারা)ষ্টেশনের চেয়ে টিকিটের সংখ্যা কম থাকা, অদ্যাবধি বিমান বন্দর চালু না হওয়া ইত্যাদি যে অতীত নেতৃত্বের কত বড় দুর্বলতা এবং ব্যর্থতা তা এলাকার সচেতন মানুষ মাত্রই অনুভব করছেন। তাই নব নির্বাচিত সাংসদের মধ্যে সেই দুর্বলতা থাকা কোন ভাবেই কাম্য নয়। এলাকার সাধারন মানুষ বিনোদন স্থানের অভাবে হার্ডিঞ্জ ব্রীজের নীচের বালুভুমি ব্যাবহার করছে কিন্তু সেখানেও সুপেয় পানি সহ জরুরী প্রয়োজনে পয়ঃ,নিষ্কাসনের ব্যাবস্থা নাই। আমার বিশ্বাস আসন্ন নির্বাচনে নির্বাচিত মাননীয় সংসদ সদস্য সহ সরকারী দলের দায়িত্বশীল ব্যাক্তিবর্গ একটু আন্তরিক হলেই প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে শোভামন্ডিত পাকশীর সাহেব কলোনী সহ গাইড ব্যংক হয়ে হার্ডিঞ্জ সেতুর নিম্ন অঞ্চলের নদীর পাড় পর্যন্ত গড়ে উঠতে পারে এতদাঞ্চলের সবচেয়ে বৃহৎ এবং সুন্দর পিকনিক কর্নার, বিনোদন পার্ক এবং শিশু পার্ক। এটা গড়ে উঠতে পারে রেলওয়ে বিভাগের তত্বাবধানে অথবা প্রাইভেট পাবলিক পার্টনারশীপের মাধ্যমে। জনগনের এই মৌলিক চাহিদাকে গুরুত্ব না দিয়ে রেলওয়ে কর্তপক্ষের প্রাচীনতম স্থাপনা সমুহের ধ্বংশের পরিকল্পনা নিন্দনীয়। এর জোরালো প্রতিবাদ আজকে সময়ের দাবী।রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ তার সম্পদ যথেচ্ছা ব্যাবহার করতেই পারেন তবে অবশ্যই সেখানে জনগনের হক বা অধিকার আছে তাও বিবেচনায় রাখতে হবে। তাছাড়া একটা এলাকার ঐতিহ্যগত স্থাপনা কোন ব্যাক্তি, গোষ্টি বা প্রতিষ্ঠানের থাকে না, জনগনের সম্পদে পরিনত হয়। যদিও পাকশীর স্থাপনা সমুহ ইউনিসেফ কর্তৃক ঐতিহ্যগত স্থাপনা ( Heritage) ঘোষনা হয় নাই তারপরেও এলাকার মানুষ মনে করে এটা তাঁদের এলাকার শতবর্ষ উর্দ্ধের ঐতিহ্য। শুধু স্থানীয় জনগনই নয়, একটা এলাকা শিল্পায়িত হলে সে সব শিল্প প্রতিষ্ঠানের কর্মরত শ্রমিক কর্মচারীগনের পরিবার এবং সন্তান সন্ততিদের জন্য এ ধরনের একটা বিনোদন ব্যাবস্থা খুবই জরুরী বটে। যদিও আমার কাছে সরকারের ” আমার গ্রাম, আমার শহর ” প্রকল্পের পরিকল্পনাতেই অসচ্ছ, অসম্পুর্ন এবং পরিকল্পিত নগরায়নের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান অনুপস্থিত মনে হয়েছে। তারপরেও উপরোক্ত শর্ত সমুহ প্রতিপালন করে সমগ্র ঈশ্বরদীকেই আধুনিক শহর হিসাবে গড়ে তোলা কোন উচ্চাশা বা কল্পনা বিলাসী প্রত্যাশা নয় বরং এটা অত্যন্ত ন্যায় সঙ্গত এবং বাস্তবতসম্মত। এ ধরনের কিছু দাবী আদায় করতে বা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে আমাদের সম্ভাব্য নির্বাচিত সাংসদ অবশ্যই যোগ্যতা এবং দক্ষতার পরিচয় দিবেন বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস। এ ধরনের দাবী আদায় করতে এলাকার জনগনের আন্দোলন সংগঠিত করার বিষয়টিও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে চিন্তা করতে হবে। কারন এ ধরনের কিছু বাস্তবায়ন করতে সর্বপ্রথম যেটা প্রয়োজন তা হল এলাকার জনগনের সমর্থন এবং অংশগ্রহনের মাধ্যমে একটি গন আন্দোলন গড়ে তোলা। মনে রাখতে হবে এ আন্দোলন সরকার বিরোধী কোন আন্দোলন নয়। তাই এ আন্দোলনের সাথে রাজনৈতিক আন্দোলনের মৌলিক পার্থক্য আছে এবং এ আন্দোলন রাজনৈতিক নেতৃত্ব দ্বারা সম্ভবও নয়। এ আন্দোলনের আলাদা চরিত্র এবং বৈশিষ্ট থাকে। এ আন্দোলন কয়েকটি নিয়মাতান্ত্রিক ধাপ পাড়ি দিয়েই যৌক্তিক অবস্থায় নিয়ে যেতে হয়। আন্দোলনের চরম অবস্থায় মাননীয় সাংসদ জনগন এবং সরকারের মধ্যে সেতুবন্ধন হিসাবে দুতিয়ালী করে কিছু যৌক্তিক দাবী অবশ্যই আদায় বা বাস্তবায়ন করতে পারেন। এ ধরনের আন্দোলনে যোগ্য নেতৃত্ব নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ন। এখানে দলীয়করন বা পক্ষপাতিত্ব আন্দোলনকে কাংখিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে বাধাগ্রস্থ করবে। আগামী নির্বাচনের পরে নব নির্বাচিত মাননীয় সাংসদ চাইলে বাস্তব অবস্থার বিশ্লেষন, দাবী সমুহ নির্ধারন, কর্মসুচী প্রনয়ন, কর্মসুচী বাস্তবায়নে কর্মপরিকল্পনা এবং কর্মকৌশল নির্ধারনের সামগ্রিক বিষয় নিয়ে পরবর্তী লেখায় বিস্তারিত আলোচনা করা যেতে পারে। তা ছাড়া ঈশ্বরদীর প্রেস ক্লাব, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, সাহিত্য সাংস্কৃতি পরিষদ,চেম্বার অব কমার্স, যে কোন সংবাদ পত্র কর্তৃপক্ষ “ঈশ্বরদীর উন্নয়নঃ সমস্যা এবং সম্ভাবনা” বিষয়ে সেমিনার, সিম্পোজিয়াম কিংবা মত বিনিময় সভার আয়োজন করতে পারেন। সেখানে উপস্থিত বিজ্ঞজনদের আলোচনায় বেরিয়ে আসতে পারে ঈশ্বরদীর উন্নয়নের কাংখিত পন্থা। তবে এ সব কিছুতেই থাকতে হবে মাননীয় সাংসদের সদিচ্ছা এবং সবুজ সংকেত। এ সব দাবী আদায় বা পরিকল্পনা বাস্তবায়নে মাননীয় সাংসদকেই হতে হবে সবচেয়ে বেশী আন্তরিক এবং প্রতিশ্রুতিশীল।

লেখকঃ কলামিষ্ট এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক

মোবাইলঃ০১৭১৩৭৪৩৭৫৬।
মেইলঃ [email protected]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here