গল্প নয় সত্য
হাসানুজ্জামান
বাংলাদেশের ছেলে রাফি আরব আমিরাতে মানবদেহে ভ্যাকসিনের পরীক্ষামূলক কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করে অনন্য দৃষ্ঠান্ত স্থাপন করেছেন। তার নামটি এখন বিবিসিসহ বিশ্বের বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমে ভাসছে।
সিলেটে জন্মগ্রহণ করা এই রাফি একজন স্থানীয় সাহিত্য-সংস্কৃতি ও সামাজিক আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী ছিল।পড়াশোনার পাশাপাশি স্থানীয় যুবকদের সংগঠিত করে মাদকবিরোধী অভিযানে অংশ নিতো। ছড়া, কবিতা, গান লেখা এবং নাটক রচনা ও তার প্রচারণার মধ্যদিয়ে যুবসমাজকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করার আপ্রাণ চেষ্ঠা করেছে রাফি। তার উদ্যোগ এলাকার অভিভাবকদের পরিমন্ডল অতিক্রম করে প্রশাসনের নজরে আসে। বেশ কিছু পুরুস্কারও জোটে তার ভাগ্যে। মাদকমুক্ত সমাজ গঠনের শ্লোগান নিয়ে যখন ব্যস্ত রাফি সেই সময়ে আরব আমিরাতের আবুধাবীতে বসবাসকারি আপন সহোদর ভাইয়ের কাছ থেকে ফোন আসে। তাকে আবুধাবীতে ভাইয়ের ব্যবসা দেখভাল করতে যেতে হবে। এ প্রস্তাবে প্রথমে রাজি হয়নি রাফি। পরে বাবা-মায়ের পীড়াপিঁড়িতে ভাইয়ের ব্যবসা দেখভাল করতে চলে যায় আবুধাবীতে। সেখানে ভাইয়ের ব্যবসা দেখভাল করে আসছিল রাফি। ইতোমধ্যে করোনার আগমনে তাদের ব্যবসা গুটিয়ে নিতে হয়। চৌকষ রাফি বসে না থেকে আবুধাবীর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে কম্পিউটার বিভাগে অস্থায়ী ভিত্তিতে চাকুরি নেয়। ইতোমধ্যে মানবদেহে ভ্যাকসিন পরীক্ষার জন্য চীনা কোম্পানী সিনোফার্মের সাথে আবুধাবী স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক চুক্তি হয়। প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপে পরীক্ষায় সফল হওয়ার পর তৃতীয় ধাপে মানদেহে ভ্যাকসিন পরীক্ষার সময় আসে। তৃতীয় ধাপে সফলতার মুখ দেখা গেলেই আসবে চ’ড়ান্ত বিজয়। তখন এই ভ্যাকসিন পরিপূর্ণতা লাভ করবে। কিন্তু চ’ড়ান্ত বিজয়ের আগে সেই শেষ ধাপের পরীক্ষা চালানোর জন্য প্রয়োজন স্বেচ্ছাসেবী। স্বেচ্ছাসেবী সংগ্রহের কাজটি এতোটা সহজ ছিল না। কিন্তু এই সংকট মুহূর্তে বাংলাদেশের ছেলে রাফি এবং তার দেখাদেখি এক ঝাঁক যুবক ছেলে নিংস্বার্থভাবে এই মানবিক কাজে ছুটে আসে। বিষয়টি অনেকটাই ঝুকিপূর্ণ হলেও মানবজাতির প্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে তারা গত ২৪ শে জুলাই পরীক্ষামূলক এই ভ্যাকসিন কর্মসূচিতে অংশ গ্রহণ করে। ভ্যাকসিন নেওয়ার ৭২ ঘন্টা অতিক্রান্ত হলেও তাদের শরীরে কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। হালকা জ্বর বা মাথা ধরা থাকলেও তা নিমিষেই দূর হয়ে যায়। আগামী একুশ দিন পর তাদেরকে দ্বিতীয় ডোজ গ্রহণ করতে হবে ।এই পর্যায়ক্রমিক পরীক্ষা চলার শেষে চ’ড়ান্ত সফলতা আসবে বলে কর্তৃপক্ষের বিশ্বাস।
অনেক ঝুকি থাকা স্বত্তেঔ এই মহৎ মানবিক উদ্যোগের সাথে রাফি কিভাবে যুক্ত হলো বিবিসির এমন এক প্রশ্নের জবাবে রাফি বলেন, ছোট বেলা থেকে পড়াশোনার পাশাপাশি মানবসেবা করার যে অভ্যাস গড়ে উঠেছে সেই বিষয়টিই মূলত কাজ করেছে এই করোনা ভ্যাকসিন পরীক্ষায় অংশ নিতে। অপর এক প্রশ্নের উত্তরে রাফি বলেন, বাবা-মা সম্মতি না দিলে এই মহৎকাজে অংশ গ্রহণ করতে পারতাম না। তবে এখানে নিজের মনোবলটাই বড় হয়ে কাজ করেছে।
লেখক : সংস্কৃতিকর্মী, শিক্ষক।
মোবাঃ ০১৭১১-১০৮৭৩৬