ফাহিম হত্যাকান্ড : রহস্যের জট খোলেনি
হাসানুজ্জামান
ফাহিম সালেহ হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছে নিউইয়র্কের ম্যানহ্যাটনে তার নিজস্ব অ্যাপার্টমেন্টে। বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত ফাহিম একজন তরুণ উদ্যোক্তা। ঢাকার ‘পাঠাও’ কোম্পানীর সহকারী প্রতিষ্ঠাতা এবং আবুজার ( নাইজেরিয়া) ‘গোকাডা’ কোম্পানীর প্রতিষ্ঠাতা ৩৩ বছর বয়সি এই তরুণের স্বপ্ন ছিল তৃতীয় বিশ্বের বড় বড় শহর থেকে তার উদ্ভাবিত অ্যাপ্সের মাধ্যমে যানজটকে নির্মূল করা। ইতোমধ্যে ঢাকা এবং আবুজার (নাইজেরিয়া) যানজট দূরীকরণে বেশ ভ’মিকা রেখে চলেছে তার উদ্ভাবিত অ্যাপ্স। যানজট দূর করতে গিয়ে বিশ্বের বড় বড় শহরের ট্যাক্সি ক্যাবের মালিক এবং তার চালকদের কাছে শত্রুতে পরিণত হয়েছে এই উদ্যোক্তার।
সেীদি আরবে জন্মগ্রহণকারি ফাহিম ভাগ্যান্বেষণে পাড়ি জমায় আমেরিকায়। সেখানেই পড়াশোনার পাশাপাশি তার গবেষণা চলতে থাকে। ফাহিমের উদ্ভাবিত অ্যাপ্সের মাধ্যমে পরিচালিত ঢাকার ‘ পাঠাও’ এবং আবুজায় (নাইজেরিয়ায়) প্রতিষ্ঠিত ‘ গোকাডা’ সমান জনপ্রিয়। ব্যবসায়িক সফলতার দিকে এগিয়ে চলেছে এই দুটি সংগঠন। পাশাপশি জনসাধারণের কাছেও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। যানজট কমাতে এই কোম্পানীগুলো বিশেষ ভ’মিকা রেখে চলেছে।
তরুণ এই উদ্যোক্তা নিউইয়র্কের ম্যানহাটনে ২.২৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার দিয়ে একটি আ্যাপার্টমেন্ট ক্রয় করে সেখানেই তিনি বসবাস করে আসছেন। কাজের পরিধি বেড়ে গেলে একজন সহকারী নিয়োগ দেন তিনি। ২০১৬ সালে নিয়োগ দেয়া এই সহকারীর নাম টাইরেস হাসপিল। হাসপিল সম্প্রতি ফাহিমের ৯০ হাজার মার্কিন ডলার চুরি করে ধরা পড়ে। নিজ সহকারীর এ ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে ফাহিম। এক সময়ের বিশ্বস্থ এই সহকারীকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় ফাহিম। কিন্তু হাসপিল কান্নাকাটি শুরু করে দেয়। ফাহিমের কাছে অনুনয় বিনয় করে ক্ষমা করে দেওয়ার জন্য। ফাহিম তাকে ক্ষমা করে দেয় ঠিকই কিন্তু চাকুরিচ্যুত করতে চায়। কিছুদিন পরে হাসপিল পুনরায় ফাহিমের কাছে আসে চাকুরি ফিরে পাওয়ার জন্য। উদার মানসিকতার এই উদ্যোক্তা হাসপিলকে ক্ষমা করে দিয়ে চাকুরিতে পুর্নবহাল করে নেয়।
গেল সপ্তাহের সোমবার ( ১৩ জুলাই) ফাহিম দিনের কাজ শেষে তার ম্যানহাটনের বাসায় ফিরে যায়। এ বাসায় সে একাই থাকতো। বাসায় প্রবেশের আগে একজন যুবক ফাহিমকে অনুসরণ করতে থাকে। যুবকটি ফাহিমের পিছন পিছন তার বাসার মধ্যে প্রবেশ করে। সিসি ক্যামেরায় দেখা যায় দুজনের মধ্যে বেশ ধস্তাধস্তি হচ্ছে। কে এই যুবক এনিয়ে চলছে নানা আলোচনা। অনেককে বলতে দেখা যাচ্ছে নিউইয়র্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ শহর ম্যানহাটনে এ রকম একটি দুর্ধর্ষ হত্যাকান্ড কিভাবে সংগঠিত হয় ? যেখানে আ্যপার্টমেন্টের নিচে রয়েছে পুলিশি পাহারার ব্যবস্থা। কোন বাসায় কোন আগন্তককে যেতে হলে প্রথমে পুলিশের খাতায় নাম , ঠিকানা , আইডিনম্বরসহ ফোন নম্বর উল্লেখ করতে হয়। প্রয়োজনে পুলিশ বাসার মানুষের সাথে ফোনে যোগাযোগ করে অনুমতি সাপেক্ষে আগন্তককে সেই নিদৃষ্ঠ বাসায় যাওয়ার অনুমতি দেয়। পুলিশের চোখকে ফাকি দিয়ে ফাহিমকে অনুসরণ করলো কিভাবে ? তাহলে দায়িত্বপালনে পুলিশের কোন অবহেলা ছিল কিনা তা খতিয়ে দেখার দাবী উঠেছে। অভিযোগ উঠেছে এই হত্যাকান্ডের পিছনে কোন মাফিয়া চক্রের সম্পৃক্ততা রয়েছে কিনা। ফাহিম হত্যাকান্ডের ঘটনাগুলো আলোচনা করতে গেলে এমন ধারণা আসতেই পারে। কেননা ইতোপূর্বেও নিউইয়র্কের মত শহরে অনেক বড় বড় হত্যাকান্ড ঘটেছে তার কোন কিনারা খুঁজে পাওয়া যায়নি। তদন্ত করতে গিয়ে দেখা গেছে খুনিরা ধরাছোঁয়ার বাইরের মানুষ। তাদের নেটওয়ার্ক পুলিশের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী। ট্যাক্সিক্যাব মালিক বা চালকদের সাথে ফাহিমের সম্পর্ক দিন দিন অবনতির দিকে যাচ্ছিল । ফাহিমের উদ্ভাবিত আ্যাপ্সের কারণেই তাদের ব্যবসার ধস নামতে পারে এমন আশংকা তাদের মধ্যে ক্রিয়াশীল ছিল। বিষয়টি ফাহিমের মুখ থেকেও শোনা গেছে কয়েকবার। আমেরিকার গোয়েন্দা পুলিশ খুনের পিছনের সম্ভাব্য সব বিষয়গুলোকে খতিয়ে দেখতে শুরু করেছে। ফাহিম হত্যাকান্ড নিয়ে বিশ্বের মানবাধিকার সংগঠন এবং স্থানীয় কমিউনিটি সোচ্চার হয়েছে। শুধু নিউইয়র্কে নয় গোটা বিশ্বে এই হত্যাকান্ডের বিচারের দাবীতে আন্দোলন শুরু হয়েছে। আন্দোলনের তীব্রতা বৃদ্ধির সাথে সাথে এই হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত আসামীদের খুজে বের করতে পুলিশের উপর চাপ বাড়ছে।
ইতোমধ্যে পুলিশ এই হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত থাকার সন্দেহে ফাহিমের সহকারী টাইরেস হাসপিলকে গ্রেফতার করেছে। ফাহিমের ডলার চুরি করে ধরা পড়ায় হাসপিল প্রতিশোধ নিতে এই হত্যা কান্ড ঘটাতে পারে বলে পুলিশ অনুমান করছে। পুলিশের সন্দেহের তালিকায় যারাই থাকুক ঘটনাটি বিশ্বের মানুষের জন্য মর্মান্তিক ও বেদনাদায়ক। মাত্র ৩৩ বছর বয়সে ফাহিম যা কিছু উদ্ভাবন করেছে তা বিশ্বয়কর। সময় ও সুযোগ পেলে হয়তো আরো কিছু সৃষ্ঠি করে যেতে পারতো। কিন্তু তার এই অসময়ে চলে যাওয়া তার পরিবার এবং মানবজাতির জন্য বড়ই ক্ষতি হয়ে গেল।
লেখক: সংস্কৃতিকর্মী। ০১৭১১-১০৮৭৩৬