ঈদুল আজহার স্মৃতিচারণ
সাহানুকা হাসান শিখা
বার বার ফিরে আসে ঈদুলআজহা। কত যুগ পার হয়ে গেল, মুছলনা মনের সেই কষ্ট। বুকের মাঝে পাথর চাপা, দু’চোখ বেয়ে অশ্রু ঝরে। শান্তনার বানী নেই কোথাও, বাবার মুখটি শুধুই ভাসে মনের ভিতরে।
ঈদুলআজহার উপলক্ষে আমার আব্বা নিজের হাতে পছন্দ করে কুরবানীর গরু কিনে এনেছিলেন। ঈদের ঠিক আগের দিন হঠাৎ সকালবেলা, মাথা ঘুরে পড়ে গেলেন তিনি। ব্রেইনর স্ট্রোক; আর সুস্থ হন নি কোনদিন। আমি আমার বাবা মার বড় সন্তান, জ্ঞান হারানোর আগ মুহুর্তে আমার আব্বা জীজ্ঞেস করেছিলেন, আমার বড় মা কোথায় ? তখন আমি ছিলাম প্রবাসে; আমার বিয়ের পরই আমি দেশ ছেড়ে স্বামীর সাথে বাইরে চলে যাই।আমি যখন ফিরে আসি তখন তিনি পেরালাইজ্ড অবস্থায় বিছানায় ছিলেন। আমাকে দেখে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন, আমি যে কতক্ষন আব্বাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদেছিলাম তা মনে নেই। আজও সেই স্মৃতি মনে হলে আমি কেমন যেনো হয়ে যাই। বছর পাঁচেক বিছানায় থেকে শেষ পর্যন্ত আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন।
এরপর থেকে কুরবানীর ঈদ আসলেই মনের ভিতরে একটি ভয় কাজ করে। ঈদ আর কুরবানী কিছুই মনে নেই, শুধুই আক্ষেপ। ঈদের খুশি বলতে যা বোঝায় তা আর কখনই উপলব্ধি হয় না। আর একদিন বাকি ঈদের, বাংলাদেশে আমার এক মাত্র ভাই ও আমার ছোট বোন দুজনেই খুব অসুস্থ।আমার মন খুবই খারাপ, প্রতিটি মুহুর্ত আতঙ্কে কাটছে কখন যেন কি হয়। এবার করোনার ক্রান্তি লগ্নে আমার মেয়েরাও কেউ পাশে নেই। ঈদ মানে খুশি, ঈদ মানে আনন্দ, এর কোনটাই আমার কাছে নেই। কি করবো, ভাগ্য মনে হয় এভাবেই মোড় নিলো। আমার আম্মা, আমার সবচেয়ে ছোট বোন, আমার মেঝ বোনের স্বামী, একজন একজন করে সবাই আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন।আমি আমেরিকায় বসে শুধু খবর শুনে যাই, দেখার সৌভাগ্য হয় নি। আমি আর কোন প্রিয়জন হারাতে চাই না, খোদা।
এখন শুধু আল্লাহর কাছে দোয়া করি সবাই ভালো
থাকুক, সুস্থ থাকুক, তাহলেই হবে ঈদ আনন্দের।
আমার পরিবার, ভাই বোন, দেশবাসী ও বিশ্ববাসীর জন্য রইলো দোয়া। করোনা, বন্যা ও সব বিপদ থেকে রেহাই দেন আল্লাহ রাব্বুল আলামীন।