লন্ডন থেকে প্রবাসী কবি মিনু আহমেদ এর কলমে গল্প “অমৃতানন্দ আশ্রম”

617
লন্ডন থেকে প্রবাসী কবি মিনু আহমেদ এর কলমে গল্প “অমৃতানন্দ আশ্রম”

অমৃতানন্দ আশ্রম

             মিনু আহমেদ।

প্রতিটা বাবা-মা স্বপ্ন বুনে মনে—তার সন্তান একদিন বড় হবে।মানুষের মতো মানুষ হবে। সন্তানের কীর্তিতে‚ সন্তানের কৃতিত্বে বাবা-মা গর্ব করবে।রোজ এমন সহস্র কল্পনায় দুঃখ কষ্ট ভুলে‚পাহাড় সমান ব্যথা- বেদনা ম্লান করে আশায় বুক বাঁধে মানুষ।
সন্তানের কল্যাণে পিতা-মাতা ভয় করে না কোনো যুদ্ধ-বিদ্রোহ।জীবনে ১৯৫২ বা ৭১সালের সব সংকট কাটিয়ে‚দুর্ভিক্ষাচ্ছন্ন সংসারের দুঃখ কষ্ট ভুলে গিয়ে নতুন করে জয় করে সংসার নামক এভারেস্ট আরোহণ।
সহস্র কষ্ট ভোগ করে,সুখ বিসর্জন দিয়ে যখন পিতা- মাতার স্বপ্ন পূরণের সময় হয়।তখন সন্তান ডেকে কয়
তোমাদের জন্য আমরা জীবন ক্ষয় করতে পারবো না।তোমাদের ছেলে মানুষিপনা সহ্য করতে পারবো না।—চলো তোমাদের বৃদ্ধাশ্রমে দিয়ে আমার কর্তব্য শেষ করি।
একথা শুনে হয়তো প্রতিটা পিতা-মাতাই অশ্রুজলে সিক্ত হয়।হয়তো হৃদয় ফাঁটা চিৎকারে আর্তনাদ করে বলে—আজ আমাদের স্বপ্ন পূরণের সময় আর এখন আমরাই থাকবো না ঘরে!উপেক্ষা করা স্মৃতিগুলো বার বার মনে পড়ে।বিনা চিৎকারে চোখের জলে বুক ভাসে।কাচের পাত্রের মতো ঝন্ ঝন্ করে স্বপ্নগুলো ভেঙে পড়ে।আশাগুলো অসীম সাগরের উত্তাল ঢেউয়ে বার বার আছড়ে পড়ে বক্ষকূলে।
দৃষ্টির অতলে সৃষ্টি হয় গভীর সমুদ্র জলাশয়।তাহলে কি আজ পিতা-মাতার জীবনে সব আশা-ভরসা‚ প্রেম-ভালোবাসা সব শেষ!অবশেষে ঘর বিবাসীর খাতায় নাম লিখিয়ে পিতা-মাতা হয়েছে আশ্রামান্তঃ নিবাসি!পিতা-মাতার দুঃখ কষ্ট ভুলে ছেলেরা বিয়ে করে বিদেশ গিয়ে বৌ নিয়ে সংসার পাতে।অলিক সুখ পেতে নানা ছলে নানা কৌশলে পথ চলে।
জীবনের সূর্যাস্তেরকালে বৃদ্ধ বাবা-মা বৃদ্ধাশ্রমে কেঁদে বুক ভাসায়।তবুও নামাজে বসে রোজ মোনাজাতে
সন্তানের কল্যাণ চায়।
বৃদ্ধাশ্রমে গিয়েও পিতা-মাতা শত বৎসর বাঁচতে চায় সন্তানের কল্যাণ জপে!অথচ তারাই বৃদ্ধ বাবা-মাকে বৃদ্ধাশ্রমে ফেলে সুখের সন্ধান করে।—এই কি নিয়তি?
বাবা-মা অধীর আগ্রহে রোজ পথপানে চেয়ে থাকে। যদি কখনো তাদের সন্তান তাদের মতই বৃদ্ধাশ্রমে আসে।তবে সেদিনও সন্তানকে বুকে টেনে নিয়ে সব দুঃখ-কষ্ট ভুলে তাদের সাথেই জীবনের বাকিটা পথ কাটাবে।—মনে মনে ভাবে‚সুখের সন্ধানে নয় সুখ অনুভবে!তারপর বুকে টেনে নিয়ে কপালে চুমো দিয়ে দু ফোঁটা অশ্রু বিসর্জন দিয়ে তাদের সুধাবে।আমরা না হয় কখনো সুখ দিতে পারিনি।হয়তো সারা জীবন দুঃখেই রেখেছিলাম তোমাদের।কিন্তু সুখের সন্ধানে বিদেশ গিয়েও তোমরা কেনো আজ সুখি হলে না? কেন নিজের ঘরে,নিজের সংসারে আশ্রয় হলো না? সুখ সুখ করে বেশ তো দিশেহারা হয়েছিলে।এখন বুঝতে পারো সন্তান ছাড়া— কিসে পিপাসা পিতা- মাতার?
তারপর অস্ফুটবাকে পিতা-মাতা বললো—আর নয় বৃদ্ধাশ্রম।এবার প্রতিটি ঘর হোক পিতা-মাতার প্রার্থনালয়।প্রতিটি সন্তান হোক পিতা-মাতার শেষ সহায়।তবেই প্রতিটি ঘর হবে অমৃত আনন্দ আশ্রম।

গল্পগ্রন্থ—আনন্দ আশ্রম।

 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here