প্রিয়ার বিয়ে
পুজা চক্রবর্তী
আজ গোধূলি লগ্নে প্রিয়ার বিয়ে,,সবাই খুব ব্যাস্ত,বাড়ি থেকে দেখা শুনা করেই বিয়ে ঠিক হয়।
চারিদিকে আলোর মেলা বসেছে,সানাই বাচ্ছে,,
পাত্র কলকাতা শহরের নাম করা শিক্ষক,
গায়ে হলুদ থেকে শুরু করে সমস্ত নীয়ম পালন শেষ এ প্রিয়া কে বিয়ের সাজে সাজানো হলো,
বর এসেছে,বর এসেছে রব উঠেছে ঐ,
সবাই প্রিয়া কে ঘরে রেখে বর কে দেখতে চলে গেলো,বরের বরণ শেষ করে সোজা ছাদনাতলায় নিয়ে আসা হয়,
_ এবার পাত্রী কে নিয়ে আসুন
পাত্রীর ঘরে গিয়ে দেখে প্রিয়া পান পাতা মুখে দিয়ে পিড়িতে চুপ চাপ বসে আছে
_ কি রে বিয়ের জন্য এত তাড়া ,আগে থেকেই পিড়িতে বসে আছিস যে
প্রিয়া কোনো উত্তর দিলো না
,,ছাদনাতলায় সাত পাকে ঘোরানোর পরে,
কি রে প্রিয়া এবার পান পাতা টা সরা শুভ দৃষ্টি হবে তো।
৩০ মিনিট হয়েগেলো কিন্তু প্রিয়া পান পাতা সরালো না, একটু অবাক হয়ে তার দিদি নিজে গিয়ে পান পাতা সরিয়ে দিলো।
একি? প্রিয়ার মুখের থেকে তো ,মনে হচ্ছে বিষ খেয়েছে
কিন্তু কেনো?
বিয়ে বাড়ির সানাই বন্ধ ,আনন্দের পরিবেশ হয়েগেলো শোক সভা,
দেখা গেলো প্রিয়া পান পাতার সাথে একটা কিসের কাগজ
_ কাগজ টায় কি লেখা আছে?
_ এত প্রিয়ার লেখা
_ কি লিখেছে সেটা টো পর
বিয়ে বাড়ি তে প্রিয়ার এক বান্ধবী সাহস করে লেখা টা পড়তে শুরু করলো
_ প্রিয় বাবা
তোমরা জানো আমি বরাবরই স্বাধীনচেতা মনোভাব পোষণ করি,
আমার মনে হয় বিয়ে করার থেকে আত্মহত্যা করা টাই ভালো,তাই নিজেকে শেষ করে দিলাম,
আমার সপ্ন ,আমার কাছে নিজের পায়ে দাড়ানো তাই আমার সপ্ন ছিল,কিন্তু সপ্ন পূরণের জন্য কিছুটা সময়ের প্রয়োজন। আমি সেই সময় টাই পাইনি,
বিয়ে তে না করার ইচ্ছে থাকলেও না করতে পারিনি
কারণ সমাজ এর টো আমার কাছে একটাই প্রশ্ন
_ কি হবে এত পড়াশুনা করে? কী যোগ্যতা আছে তোর? তোর থেকে লক্ষ গুন ভালো হাজার হাজার চাকরি পার্থী আছে,সরকারের কি খেয়ে দেয়ে কাজ নেই যে তোর মত কানে কম শুনা একটা মেয়ে কে চাকরি দিবে?
তুই তো ছেরা কথায় শুয়ে লাখ টাকার সপ্ন দেখিস
বাবা আমি সত্যি অযোগ্য ,নিরুপায় ,
এই কানে কম শুনা মেয়ে টা আর যাই হোক মানুষের বাড়ি গিয়ে মানুষ হাতের পুতুল ,মানুষের বাড়ির কাছের লোক ,আমি পারবো না,আমাকে ক্ষমা করে দিও,সমাজ প্রমাণ করে দিয়েছে কানে কম শুনা মেয়ে দের বেঁচে থাকার কোনো অধিকার নেই,
ইতি তোমাদের প্রিয়া
লেখা টা পড়ে সবাই নিস্তব্ধ,,,,কারোর কিছু বলার ভাষা নেই