।। তিনি এবং আমি ।।
সুধাংশু চক্রবর্ত্তী
তিনি আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। আমিও তাঁর দিকে। একে অপরের দিকে তাকিয়ে আছি তো তাকিয়েই আছি। ভীষণ অস্বস্তি হচ্ছে। এক সময় নিঃস্তব্ধতা ভঙ্গ করে শুধোলাম, ‘কে আপনি?’
তিনিও অমনি শুধোলেন, ‘আপনি কে?’
– ‘আমি? আমি হলাম গিয়ে ব্যানার্জ্জী বাড়ীর……আপনার মতো একজন অচেনা মানুষকে বলবো কেন? আগে বলুন আপনি কে?’
-‘আমিও আপনার মতো একজন অচেনা কাউকে কেন বলতে যাবো? ভূত হলে নাহয়……’
– ‘ভূত হলে বলতেন?’
– ‘আলবৎ বলতাম। খামোখা মানুষের সঙ্গে কথা বলতে যাবো কেন?’
– ‘অ্যাঁ, আ-আ-আপনি মানুষ নন!’
– ‘অ্যাঁ, আ-আ-আপনি ভূত নন! অথচ আপনার ওই হাড় জিরজিরে চেহারা দেখে আমি কিনা ভেবে বসলাম, এতোদিনে একটা ভূতের দর্শন পেলাম এই তল্লাটে! ছি ছি ছি, এমন দুর্মতি কেন হলো আমার!’
– অ্যাঁ, আপনি ভূত! ওরে বাবা রে, আজ বুঝি ভূতের খাদ্য হলাম।’ সভয়ে সাত পা পিছিয়ে গিয়ে যখন দৌড়ে পালাবো কিনা ভাবছি তিনি তখনই এক লাফে সামনের তেঁতুল গাছে উঠে বসে পা দোলাতে দোলাতে নাঁকি সুরে বললেন, ‘খুব বাঁচা বেঁচে গেছি। মানুষটা এখুনি রাম-রাম করে উঠলে আর দেখতে হতো না। আমার সমস্ত হাড়গোড় একেবারে থেঁতলে যেতো ওই রাম নামের গুঁতোয়।’
খেয়াল করিনি, কথা বলতে বলতে আমার বাঁধানো দাঁতের ওপরের পাটিটা কখন আলগা হয়ে বেরিয়ে এসেছে মুখ থেকে। দাঁত কপাটি মেরে মাটিতে আছড়ে পড়বো সেই উপায় নেই দেখে মনে মনে ‘রাম-রাম’ করতে করতে হাতের লাঠি ঠুক্ ঠুক্ করতে করতে যতটা সম্ভব দ্রুত হাটতে থাকলাম পাড়ার দিকে। সহসা জনাকয়েক কচিকাঁচা এসে পড়লো আমার সামনে। আমাকে দেখেই ওরা দৌড়ুলো উলটো পথে, ‘ওরে বাবা রে, ব্যানার্জীদের ভূতটা যে এদিকেই আসছে! পালা-পালা।’
এতক্ষণে বুঝলাম ওই ভূতটা খামোখা আমাকে কেন ভূত ভেবে ভুল করেছিলো। নিজের চেহারার আর দোষ দেবো কি? চরম অবহেলায় পালিত হতে থাকা একটা প্রাণীর মতো পড়ে আছি যে বৌমার সংসারে। আমার মেরুদণ্ডহীন ছেলেটার অত সাহস কোথায় নিজের দজ্জাল বৌয়ের কথা অমান্য করে আমার দেখাশোনা করে।