“ডায়েরীর পাতা হতে স্মৃতিরা কথা বলে ”লিখেছেন আমেরিকার লস্ এঞ্জেলস থেকে কবি ও লেখক হাজেরা বেগম ।

397
আমেরিকার লস্ এঞ্জেলস থেকে কবি ও লেখক হাজেরা বেগম ।

ডায়েরীর পাতা হতে স্মৃতিরা কথা বলে—📑

                                                                 হাজেরা বেগম——————☘️

আমার প্রিয় দাদা শোভন,
ঘুরে ফিরে পূজা আসে,পার্বন আসে,আসে ঈদ ভাই ফোঁটা আরো কত কি—এ পোড়া চোখে ভাই দেখি না কত কত দিন, যুগ পার হয়ে গেলো —এই তো সেদিন দু’বোন মিলে বড় ভাইয়ের কাছে কত আবদার করেছি একটা চকোলেট কিনে দাও চুড়ি কিনে দাও মেলা থেকে বাতাসা এনে দাও—আর ঈদে-রাখীর দিনে আমাদের কাপড় দাও—কত আনন্দেই না ছিলো আমাদের ঘর ভরে—বাবা মা পাড়া প্রতিবেশী, সবাই মিলে মিশে খুব আনন্দে সব উত্সবে আনন্দে থাকতাম—হঠাৎই তোর মাথায় চাপলো বিদেশ যাবি পড়াশুনার জন্য মা রাজী ছিলো না বাবাও —তবুও তুই বল্লি আরো বেশী বেশী পড়বি —দেশের উন্নতি করবি সংসারের এক ছেলে তাই বাধ্য হয়ে বাবা সব ব্যবস্থা করে দিলেন। আমরা সবাই খুব কেঁদে ছিলাম সে দিন-তোকে হারানোর ব্যাথা অনেক বেশী লেগেছিলো।প্রথম প্রথম সবার খোঁজ খবর নিতে,ধীরে ধীরে তা ছোট থেকে ছোট হতে লাগলো—বাবা মা চিন্তিত হলেন। দু’জনেরই ডায়াবেটিকস ধরা পড়লো বাবার প্রেসার—
ব্যবসায় মন্দা কাজের লোকের হাতে সব — তাতে যা হবার তাই শুরু হলো। সংসারে অভাব দিনে দিনে প্রকট আকার ধারন করলো আমি বি এ পাশ করে একটা এনজিও তে কাজ নিলাম তাও বা কতটুকু -ছটুকে পড়া ছাড়তে দেই নি—
তোর কাছে দাদা অনেক বার সাহায্য চেয়েও তেমন সাড়া পাই নি—এই তো আর কটা দিন বলে বলে আজ দীর্ঘ তিরিশ বছর পার হয়ে গেলো-মাঝে একবার এসেছিলি ছটুর বিয়েতে —ভেবেছিলাম এইবার নিয়মিত যোগাযোগ রাখবি কিন্তু কই দিন মাস বছর সব যে কালের স্রোতে হারিয়ে গেলো —তুই তো দাদা আর ফিরে এলি না—বাবা মা দু’জনেই মারা গেলো কই তোর অপেক্ষায় ছিলাম এলি নাতো—সব কিছু নিয়ে আমি একা —অনেক কষ্টের হাল ধরে রইলাম । একা একটা মেয়ের পক্ষে এ সমাজে সব সামলানো কি যে কষ্ট — তা কেবল মাত্র সেই জানে। অবশেষে আমার সহ পাঠী আমার দায়িত্ব আর কাজের ভাগ নিলো —আমার এখন তিনটি মেয়ে সন্তান,ওদের নিয়ে বেশ আছি – বাবা মা য়ের সব সম্পত্তি আমাদের তিন ভাই বোনের নামে ভাগ করে রেখেছি—তোমার অংশ তোমাকে বুঝিয়ে দিতে পারলে আমার দায়িত্ব পুরো হবে।
এবার ঈদের আগে যোগাযোগের চেষ্টা করেছিলাম পারিনি ।তোমার বন্ধুর মাধ্যমে খবর পাঠিয়ে ছিলাম —জানিনা কেন উত্তর দেও নি—আমি খুবই অসুস্থ , জানো বোধ হয়
আমার স্বামী মারা গিয়েছেন—বড় দুটো মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন । ছোটজন এবার শেষ বর্ষে —পরীক্ষা শেষ হলেই তার পছন্দের ছেলের সাথে বিয়ে দিয়ে দিবো —আগামী ২৫ শে ডিসেম্বর তারিখ হলো।যদি আসো একবার অন্তত ভাইয়ের আদর পাবো -আজও আমি এ বয়সে আমার ভাইকে খুব খুব হারাই -বোনের কাছে ভাইয়ের আদর যে কি —তা শুধু যাদের ভাই নাই তাঁরাই জানে—আমার মেয়েরা একবার হলেও তাদের মামার আদর পাবে –
সেই আশাতেই—তোমার পথ পানে চেয়ে আছি তোমারই আভাগী বোন—🙏
তোমার সু-স্বাস্থ্য ও শুভ কামনা করি-
ভালো থেকো প্রিয় দাদা—🌹
——————সুহাসিনী

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here