লাল বৃত্ত_______
অগ্নিমিতা দাস
_ ফোট! আমার ঘর থেকে। আমার নাগর আসার সময় হয়ে গেছে। বিজলী চম্পাকে হাসতে হাসতে বলল। চম্পা তার এলোচুল হাত দিয়ে খোঁপা বাঁধতে বাঁধতে বলল আমার ও টাইম নেই। জল তুলে, রুমাকে মাসিদিদার ঘরে রেখে আসবো। সন্ধ্যাবেলায় ডাক্তারবাবুর আসার কথা।
তোর তো বাঁধা কাষ্টমার।গলায় জাদু আছে তাতেই বড় বড় বাবুরা ফিদা। বিজলী তার বুকের কাপড় দিয়ে হাওয়া করতে করতে বললো। সোনাগাছির এই ছোট্ট ঘরে বিকেলের পড়ন্ত রোদ এসে পড়েছে। মাথার ওপরে পুরনো ফ্যানটা ঘটঘট করে ঘুরছে। চম্পা ঘরে এসে বিছানায় শুয়ে থাকা রুমার কাঁচা ঘুম ভাঙিয়ে ওকে সুজি খাইয়ে ওদিকের দোতলার মাসিদিদার কাছে রেখে এল। মাসিদিদা এককালে দেহ ব্যাবসা করতো, কিন্তু এখন বয়স হওয়াতে ওপাশের দোতলায় ভাড়া নিয়ে থাকে। এখানে কিছু কিছু বাড়ি আছে, যেখানে শুধু গৃহস্থ মানুষ থাকে। মাসিদিদা ওদের মতো মেয়েদের ঘরে যখন পুরুষ আসে তখন বাচ্চাদের সামলায়। মাসিদিদা বাচ্চাদের খুব ভালোবাসে। নিজে একদম সেই বাচ্চা বয়স থেকে এখানেই থাকতে থাকতে কখন মেয়েদের মাসি হয়ে গেছে , এখন তো সবার মাসিদিদা। রুমাকে মাসিদিদার সোফায় খেলনা দিয়ে বসিয়ে পেছন ফিরতেই ডাক এলো ওলো! আজ তোর পেয়ারের নাগরের সাথে মেয়ের ব্যাপারে কথা বলে নিস। বড় হয়ে যাচ্ছে। তখন কিন্তু কিছু হবে না। পচে মরতে হবে এই নরকে। চম্পা কোনমতেই মেয়েকে এই লাইনে নামতে দেবে না। সুন্দরবনের মেয়ে ছিল, চম্পা। ছোট থেকেই লেখাপড়া শেখার খুব শখ ছিলো। কিন্তু তাদের মতো গরীব ঘরের মেয়েদের শখ আহ্লাদ থাকতে নেই। তাই দাদা ইস্কুলে গেলে ও যেতে পারতো না। লুকিয়ে লুকিয়ে দাদার বইখাতা নিয়ে রাতের লন্ঠনের আলোয় পড়তো। মা ঠাকুর ঘরে গুনগুন করে ভজন গাইতো, সে শুনে শুনেই মুখস্থ হয়ে যেতো। রাতে মাঝে মাঝে বাপকে গান শোনালে বাপ বলতো আহা! মায়ের আমার গলায় মধু ঢালা। একদিন কাঠ কাটতে গিয়ে বাবাকে বাঘে খেলো আর বছর ঘুরতে না ঘুরতেই মাকে সাপে কাটলো। চম্পাদের ঠাঁই হলো মামাবাড়িতে। মামীর অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে দাদা কোথায় যে পালালো? চম্পা মামাদের ঘরে ঝিগিরি করতে করতে মামীর চক্রান্তে বিক্রি হয়ে দুচার হাত ফেরত হয়ে এই নিষিদ্ধপল্লীর বাসিন্দা হলো। সেই পনেরো বছর বয়সেই সে বেশ ডাগর আর সুন্দরী ছিল, শুধু গায়ের রংটা যা একটু চাপা ছিল। চম্পার গলার জন্য এখানে ওর একটু দর বেশি। রোজগারপাতি বাড়ায় ও গানের মাস্টার রাখে। হারমোনিয়াম বাজিয়ে শাস্ত্রীয় সংগীত শেখে। রোজ ভোরে নিয়ম করে রেওয়াজ করে। এই নিয়ে অন্য মেয়েদের সাথে কম চুলোচুলি হয় নি। কিন্তু চম্পা বুঝেছে ওর গতর ভেঙে গেলে ও এই গলা তাকে অনেকদিন খাওয়াবে। সত্যি তো তাই! ওর গলার জাদুতে অনেক বড় বড় বাবু এসে শুধু গান শুনে চলে যায়, তার গায়ে হাত পর্যন্ত দেয় না।এই যে ডাক্তারবাবু আসেন। তিনি তো শুধু গান শুনতেই আসেন। জীবনে অনেক দুঃখ পেয়েছেন। জোয়ান ছেলে অকালে চলে গেছে। একগলা গিলে গান শুনে কাঁদতে শুরু করেন । চম্পা তখন তাকে মাথায় গায়ে হাত বুলিয়ে বাড়ি পাঠায়। আজকে রুমার একটা হেস্তনেস্ত করতেই হবে। মিস্টার রায় চম্পার বিছানায় বসতেই সে সরাসরি রুমার কথা বললো। সে রুমার অন্যত্র কোথাও ব্যবস্থা করতে চায়। জীবনে সে লেখাপড়া করেনি, তার মেয়ে যেন পড়াশোনা শিখে নিজের পায়ে দাঁড়ায়। এই নরকের কালো অন্ধকার থেকে যেন অনেক দূরে থাকে, তার জন্য সে সব কিছু বির্সজন দিতে রাজি আছে।
রাতে রুমাকে ঘুম পাড়াতে পাড়াতে ওর বাবার কথা ভাবছিলো। বেশ্যাদের আবার বরের ঠিকানা। কিন্তু একজন মা জানে তার সন্তানের বাবা কে। চম্পার তখন বছর পঁচিশ বয়স। কলেজের এক টকটকে ফর্সা দাড়িওয়ালা ছেলে আসতো, তার ঘরে। কাঁধে ব্যাগ, পাঞ্জাবি পরা। মাঝে মাঝে আসতো, ওর সাথে গল্পগুজব করে টাকা দিয়ে চলে যেতো। রাতে থাকতো প্রায়, কোনদিন টানা তিনচারদিন। চম্পাদের এইভাবে বাবুদের ঘরে রাখার নিয়ম নেই। কিন্তু ছেলেটার লাজুক চোখে কি একটা মায়া ছিল যে চম্পা না করতে পারতো না। রক্তিম বলেছিলো ও কি একটা আন্দোলন করছে, তাতে সব মানুষ ভালো থাকবে। চম্পাদের মতো মেয়েদের কোন দুঃখ থাকবে না। গরীব বড়লোক বলে কিছু থাকবে না। পুলিশের ভয়ে সে এখানে লুকোয়।সে সারারাত শুয়ে শুয়ে এইসব কথা বলতো আর চম্পা কলকল করে বলতো তার দেশ গাঁয়ের কথা। রক্তিমকেই একমাত্র বলেছিলো ওর আসল নাম পুঁটুরাণী। এই লাইনে এলে সবাইকে নাম পাল্টাতে হয়। ঘরটা তখন সুন্দরী গরাল আর নদীর ছলাৎছলাৎ শব্দে ভরে যেতো। দুজনেই তখন মনের নৌকা বেয়ে সুন্দরবনে পাড়ি দিতো। মেয়েরা হাসাহাসি করে বলতো_ চম্পা , তুই তো দিওয়ানা হয়ে গেছিস। গাড়িওয়ালা খদ্দেরকে ধুলোপায়ে দিয়ে এই ভিখিরি ছোকরাকে কে নিয়ে মোহাব্বত করছিস? মাসি শাসিয়ে গেছে এইসব প্রেমের ভূত মাথা থেকে নামাতে। এখানে প্রেম মোহাব্বত বলে কিছু হয় না। খালি শরীর বেচো। রক্তিম শরীর তো দূরের কথা ভালোবাসার কথা ও কোনদিন বলে নি। এক কনকনে শীতে মাথায় শাল মুড়িয়ে দিয়ে সে এসেছিল। সেদিন বেশ ভয়ে রক্তিম চম্পাকে জানায় পুলিশ তাকে হন্যে হয়ে খুঁজছে।সে কাল সকালেই এই তল্লাট ছেড়ে পাহাড়ে চলে যাবে, পার্টির নির্দেশ। চম্পা শুধু জলভরা চোখে বলেছিলো আমার কি হবে? কথাটা যেন রক্তিমকে বিদ্যুৎস্পৃষ্টের মতো স্পর্শ করেছিলো।। হঠাৎ চম্পাকে জড়িয়ে এলোমেলো ভাবে চুমু খেতে লাগলো। ভোরের আলো ফোটার সাথে সাথে রক্তিম চম্পার আলিঙ্গন থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে জামাকাপড় পরে নিলো। চম্পা ঘুম থেকে উঠে ব্লাউজ পরতে পরতে বলেছিলো__ তুমি আবার কবে আসবে? রক্তিম ওর কপালে চুমু দিয়ে বলেছিলো যে সে খুব তাড়াতাড়ি এই ঝামেলা মিটিয়ে তাকে এখান থেকে নিয়ে যাবে। বিয়ে করবে। দিন গেছে, মাস বছর গেছে। রক্তিম আর আসে নি। চম্পা আজ ও বিশ্বাস করে ওইদুটো চোখ কাউকে ঠকাতে পারে না। ওর নিশ্চয়ই কোন বিপদ হয়েছে, হয়তো ও পৃথিবীতে নেই। ভাবতেই চম্পা এতদিন পরে ও ঘেমে গেলো। রুমা তার ভালোবাসার সন্তান, পাপের নয়। ডাক্তারবাবুর ব্যাবস্থায় এক নামকরা অনাথ আশ্রমে রুমাকে রাখা হলো। ফাদার বললো ও এখানে পড়াশোনা করবে। এখান থেকে অনেকেই দত্তক নেয় সমস্ত বিধি মেনে। প্রথম প্রথম রুমা মায়ের জন্য কান্নাকাটি করলে ও পরে ভুলে যায়।ওর ভাগ্য খুব ভালো মাস ছয়কের মধ্যেই তাকে এই অর্গানাইজেশনের ট্রাস্টির বোর্ডের একজন মাড়োয়ারি বিরাট ব্যাবসদার নিঃসন্তান হওয়ায় দত্তক নিয়েছে। রুমা তার বাপের মতো ধবধবে রং আর মায়ের মুখের আদল পেয়েছে। তাই চট করে রুমাকে পছন্দ হয়ে গেছে। এই খবর চম্পা ডাক্তারবাবু মারফত পেয়েছে। বুকে পাথর রেখে সে দিন কাটাতো। কত রাত বালিশ ভিজিয়েছে। কিন্তু ফাদারের কাছে রাখা শপথ সে অক্ষরে অক্ষরে পালন করবে। সে তার মেয়ের জীবনে তার কালো ছায়া পড়তে দেবে না। তবে ফাদার কথা দিয়েছেন, মাঝে মাঝে সে তার মেয়ের খবর তাকে দেবে। যেহেতু যিনি নিয়েছেন তিনি ট্রাস্টির মেম্বার তাই সম্ভব হবে। ফাদারের কথামতো চম্পা একবার ওর স্কুলের সামনে দাঁড়িয়ে ছিল, চোখের দেখা দেখবে বলে। বিশাল ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের সামনে ডাক্তারবাবুর সাথে দাঁড়িয়ে থাকতে তার আনন্দে হাত পা কাঁপছিলো। ছুটির পর ডাক্তারবাবু ইশারায় দেখলো একটা কিশোরী মেয়ে গটগট করে স্মাটলি হেঁটে বেরিয়ে আসছে পিঠে ব্যাগ নিয়ে। বিরাট লাল রঙের গাড়ির দরজা ড্রাইভার খুলে দিতেই সে বন্ধুদের দিকে হাত নাড়িয়ে হেসে ঢুকে গেলো। এ কি চম্পার মেয়ে না হুরপরী। মাখনের মতো চেহারা হয়েছে। এখন ওর নাম রুমা থেকে হয়ে গেছে সোনিয়া বানশাল।
বহুবছর কেটে গেছে। চম্পা এখন এই পল্লীর একেবারে বাইরে দিকে একটা ফ্ল্যাটে থাকে। বয়স হয়েছে। ঘরে গানের আর সেলাইয়ের ক্লাস নেয় সময় কাটানোর জন্য। একটা এন. জিওর সাথে যুক্ত। এন. জিওর পৃথাদি তাকে দায়িত্ব দিয়েছেন এখানের মেয়েদের বাচ্চাকাচ্চারা যেন লেখাপড়া করে, স্বাবলম্বী হয়। মায়েদের পথে যেন না হাঁটে। সমাজে যেন স্থান পায়। ডাক্তারবাবু লিভার ক্যান্সারে মারা গেছেন। মারা যাওয়ার আগে চম্পাকে এই ফ্ল্যাট কিনে দেন। চম্পাকে দেখাশোনা করার জন্য বিজলী সবসময় থাকে। ফাদারের সাথে ফোনে কথা হয়। বহুদিন আগেই সোনিয়া কে বিদেশে পড়তে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তারপর দু'বছর আগে মুম্বাইয়ে বিশাল ধুমধাম করে বিয়ে হয় এক হীরের ব্যাবসায়ীর ছেলে দীনেশ জিন্দালের সাথে। সোনিয়া বাবার ব্যাবসার বিরাট কর্মযজ্ঞে সামিল হয় , সাথে ফ্যাশন ডিজাইনার প্লাস বিভিন্ন ওয়েল ফেয়ার অর্গানাইজেশনের সাথে যুক্ত।চম্পার বুক গর্বে ফুলে ওঠে। একদিন পৃথাদি জানায় সোনিয়া জিন্দাল কলকাতার রেডলাইট এরিয়ার মেয়েদের জন্য কিছু করতে চায়। এবার সে বরের সাথে কোলকাতায় এসে হীরের বিরাট একটা শোরুম ওপেনিং করবে। পৃথাদিদের মতো কিছু ওয়েল ফেয়ার অর্গানাইজেশনকে ও এই পার্টিতে নিমন্ত্রিত করেছে। কথাটা শুনেই চম্পার হৃৎপিণ্ড কাঁপতে শুরু করলো। সেই স্কুলের সামনেই শেষ দেখা।সে আড়চোখে বিজলীর দিকে তাকালো। বিজলি জানে। বিজলি তাড়াতাড়ি বলে উঠলো___ দিদিমনি আমরা যাবু নি?
___ তাহলে এতকথা বলছি কেন? আমি তো যাবোই তাছাড়া চম্পা তো সরাসরি রেড লাইট এরিয়ার মেয়ে এবং দীর্ঘদিন কাজ করছে। ও আমাদের রিপ্রেজেন্ট হয়ে যাবে। সাথে তুই ও থাকবি। বিজলি আনন্দে হাততালি দিয়ে উঠলো।
সন্ধ্যায় ঝলমলে সজ্জিত পার্টিতে ওরা উপস্থিত হলো। গেটে ওদের পরিচয়পত্র দেখেই ঢোকার অনুমতি দেওয়া হলো। বিশাল সুসজ্জিত হলঘর। সবাই ইতস্তত পানীয় নিয়ে জটলা করছে। চম্পা আজ সাদা একটা ঢাকাই পরেছে। সাজগোজের ব্যাপারে সে চিরকাল খুব রুচির পরিচয় রাখে।ওর চোখ খালি খুঁজছে ওর রুমাকে। হঠাৎ দেখা গেলো অসম্ভব সুন্দরী একটি মহিলা আসরে আসা মাত্রই সবাই তাকে ঘিরে ধরেছে। ক্যামেরাম্যানদের ফ্লাস লাইট মিনিটে মিনিটে ঝলসে উঠছে। পৃথাদি কানে কানে বললো_ ইনিই সোনিয়া জিন্দাল। কিন্তু চম্পার চোখ ধাক্কা খেলো। একি পোষাক পড়েছে তার মেয়ে। শরীরের উর্ধাংশ থেকে নিম্নানাংশের বেশিরভাগটাই খোলা। সাদা বক্ষবিভাজিকার মাঝে ঝুলছে দামী হীরের পেন্ডেট। এ পোষাক দেখে বোধহয় তাদের সোনাগাছির মেয়েরা ও লজ্জা পাবে। ফিতে কাটা হলো। সোনিয়া মৌমাছির মতো সারা পার্টিময় উড়ে বেড়াচ্ছিল। পৃথাদি আঙ্গুল দিয়ে সোনিয়ার হাসব্যান্ডকে দেখালো। বেশ সুপুরুষ যুবকটি গ্লাসের পর গ্লাস নিচ্ছে আর বাকিদের সাথে গল্প করছে। সোনিয়া বড় বড় বিজনেসম্যানদের প্রায় গায়ে পড়ে হেসে হেসে গল্প করছে। মৃদু মিউজিক বাজছে। চম্পা অধীর হয়ে মেয়ের দিকে তাকিয়ে আছে। মিসেস সোনিয়া জিন্দাল আজ যেন মক্ষীরাণী। বিশাল বিশাল বিজনেসম্যানদের পারলে কোলে ওঠে কথাবার্তা বলছে। সাথে চলছে মদের ফোয়ারা। সোনিয়ার বর দীনেশ এককোনে সোভায় বসে মদে চুর হয়ে আছে, পাশে অবশ্যই সঙ্গ দিচ্ছে এক সোনালী চুলের মহিলা। পৃথাদি বললো যে সে এই শহরের বিরাট গার্মেন্টসের বিজনেসম্যানের বৌ। যার বরের খুব কাছে দাঁড়িয়ে তার মেয়ে ফিসফিস করে কথা বলছে আর আচমকা নকল হাসিতে চারদিক মাতিয়ে দিচ্ছে। চম্পা কঠিন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মেয়ের দিকে। মেয়ের শরীরের সাথে প্রায় লেপ্টে থাকা চার পাঁচজন পুরুষগুলোকে ও দৃষ্টি দিয়ে ভস্ম করতে লাগলো। পৃথাদি বললো বড়লোকদের এইসব বড় বড় ব্যাপার! কত কান্ড যে চলে। এর বরের সাথে ওর বৌয়ের, ওর সাথে এর। এর নাম নাকি বিজনেস ডিল। আমাদের মানে মানে কাজটা হয়ে গেলে হয়।
চম্পার মাথা পুরো ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে। সোনিয়া যখন পৃথাদিদের কাছে এসে দাঁড়ালো তখন সে বেশ ঢিপসি। পৃথাদি নমস্কার করে চম্পার সাথে পরচিয় করিয়ে দিতেই , সোনিয়া কাছে এসে চিড়িয়াখানার আজব জন্তু দেখার মতো চম্পাকে দেখতে লাগলো।
_ ওয়াও! ওয়াট আ সারপ্রাইজ। আই হ্যাভ নেভার সিন দা প্রোস্টিটিউট সো ক্লোজলি। আই পিটি দেম।তাই তো জিন্দাল গ্রুপ চায় এদের মতো মেয়েরা যেন ডার্ক সার্কল থেকে বেরিয়ে আসে, সোসাইটিতে ওদের যেন জায়গা হয়। ক্যান আই টাচ ইয়ু! আই গট সো একসাইটেড সিয়িং ইয়ু। সুইট হার্ট লুক এখানে আমাদের কাছে একজন স্পেশাল গেষ্ট এসেছে। ধরা গলায় বলতে বলতে সে তার বরের কাছে দুলে দুলে এগিয়ে গেলো। পৃথাদি রীতিমতো অপ্রস্তুত। চম্পার গালে মনে হলো কে যেন সজোরে চড় কষালো।আশেপাশে ইংলিশে গুঞ্জন উঠেছে। চম্পা টলতে টলতে পার্টি থেকে বেরিয়ে এলো, সাথে বিজলি। পৃথাদিকে থাকতে হবে তাদের অর্গানাইজেশনের ফান্ডিংর ব্যাবস্থা করতে। চম্পা তার ভাড়া করা গাড়িতে উঠে, ড্রাইভারকে চালাতে হুকুম দিলো। বিজলি আড়চোখে গাড়ির আলো আঁধারির মধ্যে ও দেখলো চম্পার দু চোখে শ্রাবণের ধারা।চম্পার গলার কাছটায় দলা পাকিয়ে আসছে। রুমার কথাগুলো তাকে যত না আঘাত করেছে তার থেকে ও বেশি মিসেস সোনিয়া জিন্দালের আচরণে। আজ চম্পা বুঝলো তাদের ম্যাড়ম্যড়ে নিষিদ্ধপল্লীর বাইরে ও ঝাঁ চকচকে সোনাগাছি আছে। শুধু সেখানে ওদের অছুৎ হয়ে থাকতে হয় না।
© মিতার কলমে অগ্নি