আজ ঐতিহাসিক ৭ মার্চ। শুভচিন্তার কবি নাসরিন জাহান মাধুরী লিখেছেন কবিতা “বাংলাদেশ আমার বাংলাদেশ ”

662
কবি নাসরিন জাহান মাধুরী লিখেছেন কবিতা “বাংলাদেশ আমার বাংলাদেশ ”
শুভচিন্তার কবি নাসরিন জাহান মাধুরী

বাংলাদেশ আমার বাংলাদেশ

           *************নাসরিন জাহান মাধুরী

জাতির পিতার ঐতিহাসিক “৭ ই মার্চ” রেডিওতে শোনা।
৭১ এর উত্তাল মার্চের মিছিল দেখেছি।
নিতান্তই শিশু আমি বোনের হাত ধরে তার
স্কুল দেখতে গিয়ে ছিলাম।সব বড়বোনরা যখন
গালটিপে আদর করছিল তখনই হঠাৎ বাঁধভাঙা
জোয়ারের মত মিছিল ঢুকে গেল স্কুল প্রাংগনে
জয় বাংলা শ্লোগানে মুখরিত মিছিল।
জয় বাংলা! জয় বাংলা! জয় বাংলা!
আমার শিশু হৃদয়ও আন্দোলিত।

মুহূর্তেই সব ক্লাসরুম খালি, সবাই শ্লোগানে একাত্ম,
নেমে পড়ল মিছিলে, আমি গেলাম বোনের হাত ধরে
নগ্নপদে সেই মিছিল, দ্রুত ধাবমান শ্লোগান মুখরিত
সেই মিছিল ছোট্ট মফস্বল শহরের সব অলিগলি
রাজপথ ঘুরে ফিরে এলো আবার স্কুলে।
মিছিলে পাল্লা দিয়ে আমিও ছুটেছি
ছুটতে ছুটতে হাঁপিয়ে ওঠেছি, বন্ধুর পথে
পা কেটে ছিড়ে রক্তাক্ত, বুঝিনি কিছুই।

এলো ২৫শে মার্চ কালরত্রি—–
তারপর শুরু হলো যুদ্ধের অগ্নিপথে হাটা,
ওঠোন জুড়ে তৈরি হলো বিশাল আকৃতির বাংকার,
শহরে বিমান হামলা, যখন তখন বেজে ওঠে সাইরেন।
পাশ প্রতিবেশি সহ সবাই ঐ বাংকারে নেয় আশ্রয়।
তখন এবাড়ি ওবাড়ি সব যেন একবাড়ি
নেই কোন সীমানা পাচিল,হিন্দু মুসলিম এক ভাই
ঠাঁইঠাঁই, সবাই এক কাতারে ঐ বাংকারে।

যেদিন মুহুর্মুহু বিমান হামলায় গ্যাসফিল্ড সহ সব স্থাপনা
ধ্বংস হলো।কালো ধোঁয়ায় আকাশ ছেয়ে গেল,
সারারাত অবিরাম গোলার শব্দ,থরথর কাঁপে দরজাজানালা,
বাবামায়ের রাতভর আতংকে ভোরের প্রতীক্ষা।
শুরু হলো আরেক অধ্যায়,আবাস ফেলে, সহায় সম্বল ফেলে
অজানার উদ্দেশ্যে সারিসারি মানুষের মিছিল,
গন্তব্য জানা নেই তবুও পালাতে হবে শহর ছেড়ে।
দূরে যত দূরে যাওয়া যায়, যেখানে পাবে এতটুকু আশ্রয়।

তারপর দেখেছি যুদ্ধ,মুক্তিবাহিনীর অকুতোভয় সংগ্রাম।
দেখেছি মেঘনায়, দেখেছি তিতাসে
স্রোতে ভেসে যাওয়া লাশ, মানুষের লাশ।
সে দাগ এখনো মনে দগদগে,থাকবে আমৃত্যু।
১৪ই ডিসেম্বর বিজয়ের দোরগোড়ায় বিশ্ব বেহায়ার দল
একে একে হত্যা করলো বাংলার অমূল্য সম্পদ
লেখক,কবি সাহিত্যিক, শিক্ষাবিদ, ডাক্তার প্রকৌশলি
কাউকে রাখেনি,।মেধাশূন্য করে দিল জাতিকে।
রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম আর অফুরান আত্মদানের পর
এলো স্বাধীনতা! এলো স্বাধীনতা! এলো স্বধীনতা!

তারপর! দেখলাম ৭৫ এর ১৫ই আগষ্ট!
জাতির পিতার রক্তাক্ত মৃতদেহ শুয়েছিল দেশ জুড়ে।
অসহায় বোবাকান্নাও দেখেছি শোকার্ত জাতির
৩রা নভেম্বরের জেলহত্যা!
চারনেতা, স্বাধীনতার রুপকারদের নির্মম হত্যা!
দেখলাম ৭ই নভেম্বর!
জেনেছি ইতিহাস– ৪৭, ৫২,৬৬, ৬৯ তারপর ৭১
একই সূত্রে গাঁথা অমর কবিতা।

আরো অনেক দেখেছি, দেখেছি ইতিহাস বিকৃতি,
রাজাকারের মুক্তিযোদ্ধা সনদ লাভ আবার সার্থের লোভে
মুক্তিযোদ্ধার রাজাকার সক্ষতাও কম দেখিনি।
৯১ সৈরাচার বিরোধী আন্দোলন যেমন দেখেছি,
ঘাতক দালাল নির্মূলের আন্দোলন ও দেখেছি।

দেখেছি আরো অনেক—-
শহীদ জননীর অবমাননা দেখেছি,
ঐ ঘাতক দালালদের নির্লজ্জ আস্ফালন দেখেছি,
তাদের বিচারের রায় কার্যকর হতেও দেখেছি।
গণজাগরণ মঞ্চে বাংগালির জেগে ওঠা দেখেছি।

তারপরো দেখছি স্বাধীন দেশে রুপাদের বিভৎস খুন
অসংখ্য রাজনদের হত্যা দেখছি,
সীমান্তে ঝুলে থাকা ফালানির মৃত দেহ, রানা প্লাজা কি দেখিনি!
এ দৃশ্যগুলো যেন আর না দেখি।
মানুষ তোমরা মানুষ হও অমানুষ যেন না দেখি প্রিয় দেশে।

হৃদয়ে ২১ আর ৭১ এর চেতনাকে ধারণ করে বেড়ে ওঠেছি।
ধাপে ধাপে স্বাধীন বাংলাদেশের অগ্রগতি দেখছি,
এই অগ্রগতিতে নারীদের অসামান্য অবদানও দেখছি
সব বাধা অতিক্রম করে নারীর এগিয়ে যাওয়া দেখি অপার মুগ্ধতায়
নারী পুরুষ মিলেই এগিয়ে নিচ্ছে এই বাংলাকে সমৃদ্ধির পথে।

শুধু চাইনা দেখতে স্বাধীন বাংলার মানচিত্রে
যেন আর কোন বিদেশী শকুন খামচে ধরে।
স্বাধীন বাংলাদেশ আরো সমৃদ্ধ হবে,
প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে নিয়ে যাবে
বাংলাদেশকে অনন্য উচ্চতায়, মনে শুধু এ আশাই খেলা করে।
বড় বেশি ভালবাসি তোমায় আমার দেশ বাংলাদেশ।
আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি।
বাংলাদেশ দীর্ঘজীবী হোক।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here