ওপার বাংলার কলমযোদ্ধা লেখক অগ্নিমিতা দাস এর গল্প “টান ”

669
ওপার বাংলার কলমযোদ্ধা লেখক অগ্নিমিতা দাস এর গল্প “টান ”

টান__________

          অগ্নিমিতা দাস

শুভা সোফায় বসে বসে সান্ধ্যকালীন টিভি সিরিয়াল গিলছিল, যেটা সে কোনমতেই মিস করে না। পৃথিবী এদিক থেকে ওদিক হয়ে গেলে সন্ধ্যা ছটা থেকে রাত সাড়ে নটা অব্দি তার চোখ বস্তাপচা সিরিয়াল থেকে নড়বে না। কাজের মেয়ে ঝুমা চা জলখাবার দিয়ে ,ডিনার বানিয়ে চলে যায়। যাবার সময় আসছি বললে শুভা ঘাড় নেড়ে ইশারায় দরজা বন্ধ করে দিয়ে যেতে বলে। কি বা করবে। সারাদিন একা একা থাকা। সকালটা তবু পূজো ঘরের কাজ বাগান নিয়ে মেতে থাকা যায় কিন্তু সন্ধ্যাবেলায় কি করে সময় কাটাবে।
আগে আগে সেলাই , উল বোনা নিয়ে ব্যস্ত থাকতো। চোখের পাওয়ার বাড়াতে রাতে নিয়ে বসতে সাহসে কুলোয় না। ঘড়ির দিকে তাকালো দশটা ছুঁই ছুঁই।
বাবুদের এবার আসার সময় হয়েছে। আলোক যখন মারা যায় স্নেহ তখন উচ্চমাধ্যমিক দেবে। দক্ষিণ কলকাতার এই বাড়িটা ব্যাঙ্কে কিছু টাকা আর পেনশন টুকু সহায় ছিল। শুভা দেবীর মাধ্যমিক
অব্দি বিদ্যা থাকায় আলোকের অফিসে ইউনিয়নের লোকেরা কিছু ব্যবস্থা করতে পারে নি। ছেলে তবে ছোট থেকেই মেধাবী ছিল।

লেখাপড়ার ব্যাপারে কোনদিন শুভাকে কিছু বলতে হয় নি। শুধু ছেলেকে চোখে চোখে,রাখতো যদি বিপথে যায়। না কোনটাই হয় নি। ছেলে পড়াশোনার পাট চুকিয়ে নামী মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে চাকরি পায়। সেখানেই আলাপ জয়িতার সাথে।
বিয়ের ব্যাপারে শুভার প্রবল আপত্তি ছিল। জয়িতা ব্রাহ্মণ নয়, কোষ্টির মিল নেই। দেখতে এমন কিছু ডানা কাটা পরী নয়। বাবা মা ছোট্টবেলায় ফ্লাইট অ্যাক্সিডেন্টে মারা যায় তারপর থেকে কাকার কাছে মানুষ। কাকা নাকি নামি সায়েন্টিস্ট, বিয়ে করে নি। বোঝো ঠ্যালা এমন ঘর গৃহস্থালি না জানা মেয়ের সাথে কি একমাত্র ছেলের বিয়ে দিতে ইচ্ছে করে। কত কষ্ট করে ছেলেকে মানুষ করলো , এবার তো তার পায়ের ওপর পা রেখে কাটানো উচিত। বৌমা কোথায় হাসিমুখে তার হুকুম তামিল করবে, রান্নাঘর সামলাবে না এখন তাকেই বৌমার মুখের সামনে ভাতের থালা সাজাতে হবে। নিকুচি করছে এমন বিয়ের। কিন্তু শুভার সব আপত্তি ফুৎকারে উড়িয়ে স্নেহ অনাড়ম্বর ভাবে বিয়ে করলো জয়িতাকে।
জয়িতার কাকা তখন বিদেশে কোন একটা কনফারেন্সে।

জয়িতা প্রথম দিনেই বাড়িতে পা দেওয়ার সাথে সাথেই শুভার সাথে শুরু হয়ে গেল ঠান্ডা লড়াই।
রান্নার লোক থাকা সত্ত্বেও শুভা ভোর পাঁচটায় উঠে বাসি জামা কাপড় ছেড়ে বাগানে ফুল তুলে চায়ের জল বসিয়ে, জলখাবারের আয়োজন করতে বসবে।জয়িতা রাতে অফিস থেকে ফিরেই খেয়ে সব গুছিয়ে আবার ল্যাপটপ নিয়ে বসে। অনেক কাজ থাকে। স্নেহ তাকে বলেই দিয়েছিল__ বাবা মারা যাওয়ার পর মা একা হাতে মানুষ করেছে।
তাই একটু আধটু অবুঝপনা হয়তো করবে, আমার প্রতি খুব পসেসিভ, অতটা পড়াশোনা জানে না, চার দেওয়ালে বন্দী বাট ইউ হ্যাভ টু ম্যানেজ ।
প্রথম দুদিন ঘুম থেকে উঠতে সাতটা বেজে গেছে, দেখছে তখন টেবিলে চা নিয়ে গোমড়া মুখে বসে আছে শুভা। পরদিন অ্যালার্ম দিয়ে উঠে চা করতে গিয়ে শুনতে হয়েছে____ আমি যতদিন বেঁচে আছি খোকা কে ঘুম থেকে উঠেই আমি চা দেব তাছাড়া আমার আবার কারোর হাতের চা খেয়ে পোষায় না।
অগত্যা জয়ী শুভার পাশে বসে ভাব জমানোর চেষ্টা করে__ মা, আপনি এখনো নিরামিষ খান কেন?
আজকাল কেও মানে নাকি? এসব মানলে তো মানুষ টা….. কথা থামিয়ে শুভা কড়া গলায় ধমক দিল___ এই মুখার্জী পরিবারের একটা নিয়ম আছে বংশ মর্যাদা আছে , হঠাৎ করে এই সব ইংলিশ কেতা এখানে চালাতে যেও না বাপু!
জয়ী তাড়াতাড়ি কথা ঘুরিয়ে বলে__ কাল না আমি রাতে ইউটিউবে ধোঁকার ডালনা শিখেছি, রবিবার আপনার জন্য বানাবো কেমন।
____ থাক , থাক! রান্নার লোক আছে ওই সব করবে। তুমি আমাদের সত্যিকারের ধোঁকা খাইয়ে ছেড়ো না বাপু। আমার স্নেহ বড় সহজ সরল। অত প্যাঁচ বোঝে না। অপমানে লাল হয়ে যাওয়া জয়ীর চোখ ছাপিয়ে জল আসে।

___ একি! কে এই ফুলদানি গুলো, পর্দাগুলো কে সরিয়েছে। শুভা তারস্বরে চেঁচিয়ে ওঠে।
সবসময়ের কাজের মেয়ে ডলি ভয়ে ভয়ে বলে __ না মানে বৌদি সব চেন্জ করতে বললো! ঘর রং হবে তো।
শুভা বলে উঠলো___ ঘর রঙ হবে, আমি কিছুই জানলাম না!
জয়ী প্রায় দৌড়ে আসে আমতা আমতা করে বলে__ মানে অনেক দিন ঘরগুলো তো রং হয় নি। তাই স্নেহ বলছিল, ফার্নিচার গুলো বদলাতে, ভাবলাম ঘরের টোটাল ইন্টিরিয়টা বদলে ফেলবো।
শুভা মুখ ঝামটা দিয়ে বলে উঠলো__ নিজেদের ঘরে যা ইচ্ছে তাই করো, আমার ঘরের ওপর তোমায় খবরদারি করতে হবে না।
চিরকাল শাড়ি পরে অভ্যস্ত শুভার জয়িতার ড্রেস নিয়ে কটাক্ষ করায় স্নেহ প্রতিবাদ করে___ মা, যুগ বদলেছে, মনটাকে পাল্টা ও। তাছাড়া জয়ী তো কোনদিন অড কোন ড্রেস পরে না। মানতে শেখো।
ছেলের কথায় শুভা আর এ ব্যাপারে ঘাঁটায় নি।
আলোকের ক্যান্সার লাস্ট স্টেজে ধরা পড়েছিল, বেশিদিন ভোগে নি,কিন্তু আনফুরচুনেটলি স্নেহের জন্মদিনের দিন আলোক মারা যায়। তারপর থেকে আর কোনদিন স্নেহর জন্মদিন হয় নি। বিয়ের পর জয়ী বুঝতে না পেরে বন্ধুদের ইনভাইট করেছিল, স্নেহের বারন না শুনে। সকালবেলায় শুভাকে পায়েস করতে বলায় কাটা কাটা ভাবে উত্তর এসেছিল ____ তুমি কি এই বাড়ির নিয়ম ভাঙ্গবে বলেই এসেছো। আজ পর্যন্ত স্নেহ কোনদিন আব্দার করেনি তুমি কিনা শেখাবে আমায় মায়ের কর্তব্য।
___ মানে বাবা নিশ্চয়ই খুব খুশি হবেন যখন দেখবেন আজকের দিনে তার ছেলে মনখারাপ না করে আনন্দ করছে। বাবা বেঁচে থাকলে তো তাই হতো। তাছাড়া স্নেহ হয়তো চায় আজকের দিনটা সেলিব্রিট করে একটু দুঃখ ভুলতে।
শুভা আঙ্গুল তুলে বললো____ এবার ছেলে কে ছেড়ে মৃত শ্বশুরের মন পড়া ও হয়ে গেল। আমার কপালেই যতো সব জুটেছে।
জয়ী সব গেষ্টদের আসা ক্যানসেল করে দিয়েছিল।
দিন যায়, বছর পার হয়।

স্নেহর পদমর্যাদা বাড়ে, সেইসঙ্গে বাড়ে কাজের চাপ।
মাসের মধ্যে অর্ধেক দিন ফরেন ট্যুরে থাকে। তখন জয়ী শুভাকে নিয়ে ঘুরতে যায়। সত্যি কথা বলতে আলোক দশটা পাঁচটা করা ভেতো বাঙালী ছিল। কোন শখ আহ্লাদের বালাই ছিল না। অনেক সাধ্য সাধনার পর ম্যাটিনি শোয়ে উত্তম সুচিত্রা দেখা আর বাপের বাড়ি যাওয়া। এই ছিল তার চৌহদ্দি। এখন তো বাবা মা কে ও নেই, ভাই বোম্বেতে থাকে।

জয়ী কিন্তু শুভাকে শপিং মলে নিয়ে যায়, কত দামী দামী শাড়ি কিনে দেয়। শুভার আপত্তি মোটে ও শোনে না। ঠান্ডা সিনেমা হলে ফিল্ম দেখায়। বড় বড় রেস্টুরেন্টে খাওয়ায়। শুভাকে জোর করে সেদিন চিকেনের প্রিপারেশন খাওয়ায়, প্রথমটা শুভার কেমন কেমন লাগছিল।
স্নেহ ও বরাবর ওর বাবার মতো। বই মুখে দিনরাত পড়তো। মাকে নিয়ে ঘোরা বেড়ানোর কথা কোনদিন ভাবে নি। তাছাড়া তখন এইভাবে বিলাসিতা করার মতো টাকাও ছিল না।
শুভা মনে মনে তখন দাঁড়িপাল্লায় ফর্সা টকটকে গোলগাল বৌমা যে তার পায়ে পায়ে ঘুরবে না ঈষৎ লম্বাটে গড়ন শ্যামলা গালে টোল খাওয়া চটপটে বৌমাকে মাপছিল। শুভাকে ডাক্তার দেখানো, বাতের ব্যাথা বাড়লে অফিস থেকেই ফিরেই পায়ে মালিশ করে দেওয়া, ছুটির দিনে চুল বেঁধে দেওয়া। সুযোগ পেলেই হরেক রকমের গাছের চারা এনে চমকে দিতে জয়ীর জুড়ি ছিল না। আস্তে আস্তে বোধহয় মনের মেঘটা কাটছিল, কিন্তু বাদ সাধলো চার বছরে ও ওদের কোন বাচ্চা হলো না।
ষষ্ঠীর দিন গুলোতে জয়ী হয়তো ক্যাজুয়ালি বলতো___ রাতে তোমায় লুচি খেতে হবে না যা অম্বলের ধাত তোমার।
তৎক্ষণাৎ উত্তর আসতো____ তুমি বাপু বাঁজা মেয়েমানুষ! তুমি কি আর বুঝবে ছেলের মর্ম! এতদিনে কোথায় নাতি নাতনীর মুখ দেখবো!
মূহুর্তের মধ্যে জয়ীর মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে যেত।
আজকাল জয়ী আর খোকার মধ্যে কিছু একটা চাপা চলছে। স্নেহ বরাবর চাপা আর বৌমা তো আরো এক কাঠি। তবে মাঝেমধ্যে অনেক রাতে ওদের ঘর থেকে চাপা গলায় কথাকাটাকাটির আওয়াজ শুনতে পায়। শুভার একটু মনে পুলক জাগে বৈ কি! প্রেমে একেবারে ডগোমগো হয়ে উঠেছিল,উঠ ছুঁড়ি তোর বিয়ে করলি। এবার দেখ তার ফল। ছেলেপুলে না হলে কি ব্যাটাছেলেদের মন ভালো থাকে। মায়ের অমতে বিয়ে করার মজা বোঝ।
বাইরে গাড়ির আওয়াজ শোনা গেল।
স্নেহ আর জয়ী ঢুকলো। ডাইনিং টেবিলে আজ একদম পিনড্রপ সাইলেন্ট ছিল। স্নেহ সবসময় মুখ বুজে খেত, জয়ী এটা সেটা নিয়ে গল্প ফেঁদে বসতো। এঁটো হাত শুকিয়ে যেত। আজ অন্য ছবি!
স্নেহ খেয়ে শোবার ঘরে চলে গেলে জয়ী দক্ষিণের ব্যালকনিতে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলো।
শুভা সব ঘরের আলো নেভাতে এসে ওকে ওইভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে যেন চমকে গেল।
কি অদ্ভুত মিল। শুভার যখন আলোকের সাথে ঝগড়া হতো তখন ও ঠিক এইভাবেই দেওয়ালে পিঠ দিয়ে ব্যালকনিতে বাইরের দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে থাকতো। আলোক এসে মান ভাঙালে তবে ঘরে যেত। কিন্তু স্নেহ তো আসছে না। শুভা বিছানায় শুতে ও পারছে না। বাতের ব্যাথাটা আজ বেড়েছে, পা টা টেনে টেনে শুভা ব্যালকনিতে এসে দাঁড়ালো।
____ জয়ী অনেক রাত হয়েছে শুতে চলো!
জয়ী আস্তে আস্তে মুখ ফেরালো , ল্যাম্পপোস্টের আবছা আলোতে শুভা দেখতে পেল জয়ীর দুগাল বেয়ে জলের ধারা নামছে।
শুভার নারীমন বুঝতে পারলো অভিমান না বুঝলে তার যন্ত্রণা। শুভার ইচ্ছে করছিল ওকে জড়িয়ে বুকে ধরতে, মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করতে। কিন্তু পা সরছিল না , শুভা মুখার্জী শাশুড়ির খোলস ছেড়ে কিছুতেই বেরোতে পারলো না।
পরদিন সকালে স্নেহ জানালো ও বেশ কয়েক মাসের জন্য স্টেটস যাচ্ছে।
____ আর বৌমা ?
স্নেহ কাঁধ নাড়িয়ে উত্তর দিল___ ও এখানে থাকবে। আমি তো ঘুরতে যাচ্ছি না।
ও এই ব্যাপার !তা বাপু বর কাজে যাবে না! তোমার কোলে ঢুকে বসে থাকবে তাও যদি তোমার কোলে জুড়ে খোকাখুকি থাকতো। রক্তের টান, বড় টান, সেই টানে ঠিক থাকতো।

দেখতে দেখতে বছর পার হতে চললো। স্নেহ
আজকাল করে আর আসছে না। ফোনে কথা হয়, নিয়ম মাফিক, শরীরের খোঁজ নেয়। কিন্তু আসার কথা জিগ্যেস করলেই কেমন যেন এড়িয়ে যায়। মাসে মাসে মোটা টাকা অ্যাকাউন্টে ঢুকে যায়।
একদিন সবসময়ের মেয়েটা ছুটি নিয়েছে, সেদিনই শুভার আবার খুব পেটে ব্যাথা। জয়ী এখন চেষ্টা করে তাড়াতাড়ি অফিস থেকে ফিরে শুভাকে সময় দিতে। এটা ওটা খাবার অর্ডার দিয়ে আনায়, হইচইডাউনলোড করে শাশুড়ি মাকে বাংলা মুভি দেখায়। শুভা এখন দিব্যি মাছ মাংস খায়। সেদিন একটু রাত করে অফিস থেকে ফিরে দেখে শ্বাশুড়ি মা যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে। জয়ীকে দেখে শুভা অত ব্যাথার মধ্যে ও বলে ওঠে____ খোকা নেই! তুমি তো ধেই ধেই করে নেচে বেড়াচ্ছো। এই মেয়েমানুষ কে কিনা স্নেহ আমাকে দেখতে রেখে গেছে। কোনদিন দেখবে এসে আমি মরে পড়ে আছি। বিধবা মানুষ কে মাছ মাংস খাওয়ানোর পাপ তুমি পাবেই!

শুভা মনে মনে জানে সে কি ভীষন মিথ্যা অভিযোগে করছে, কিন্তু জয়ীর মনোযোগ পাওয়ার জন্য এইরকম কথা বলে যেন শান্তি পেল। শুভার জয়ীর প্রতি এটাই বোধহয় ভালোবাসা।
কদিন থেকেই দেখছে জয়ীর মুখে হাসি নেই, মুখ মেঘলা আকাশের মতো ভার।
ছুটির দিন ছিল শুভা নিজেই জয়ী ঘরে গেল।
জয়ী শুয়ে ছিল। তাড়াতাড়ি উঠে বসলো।
___ মা আপনি এসেছেন ভালো হয়েছে। আমি যেতাম আপনার কাছে।এবার তো আমাকে ছুটি দিতে হবে, আমার ডিউটি খতম।
ওমা মেয়ে বলে কি! ওহো সেদিনের কথাগুলো পাগলী মেয়ের গায়ে লেগেছে, না! না সেদিন একটু বেশি বলা হয়ে গেছে।
জয়ী পায়ে পায়ে উঠে টেবিল থেকে একটা লম্বা কাগজ নিয়ে এলো। শুভার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো___ স্নেহ আর কোনদিন দেশে ফিরে আসবে না। ও মিউচ্যুয়াল ডিভোর্স চাইছে। আমি সই করে দিলেই ওর মুক্তি।
শুভার নিজের ছেলের সব রাগ গিয়ে জয়ীর ওপর পড়লো_____ মুক্তি ! সে তো চাইবেই! কতদিন আর পুরুষমানুষ শরীরের মজায় মজবে, শরীর তো পুরোনো হবেই কিন্তু রক্তের টানের কেও থাকলে ঠিক চলে আসতো। বাঁজা মেয়েমানুষ নিজের বরকে ধরে রাখতে পারলে না।
জয়ী শুভার দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল___আপনার সত্যটা সহ্য করার ক্ষমতা আছে !
স্নেহ একটা আপাদমস্তক সেলফিশ । আমায় দেখেছিল অনাথ। বাবা মায়ের ভালোবাসার কাঙাল। আমি ওর সুন্দর চেহারা, ব্রাইট ফিউচার দেখে মজলাম। ও তড়িঘড়ি করে বিয়ে করলো, কাকাকে আসতে পর্যন্ত আসতে দিল না। এখন বুঝতে পারছি কেনো? আমি খুব ইমোশনাল, ও বুঝেছিল ওর মায়ের মধ্যে নিজের মাকে খুঁজে পেয়ে আমি তোমাকে ভালোবাসবো। জয়ী একটু দম নিয়ে বলল___ বিয়ের পর পর ঠিক ছিল তারপর দেখলাম ও আমার সাথে ফিজিক্যাল রিলেশনে ইন্টারেস্টেট নয়। তারপর অফিসে কানাঘুষোয় শুনতাম, একদিন স্নেহ স্বীকার করলো ও আমার প্রতি কোন অ্যাট্রাকশন নেই, ইন ফ্যাক্ট কোন মেয়ের প্রতি নেই। অন্য একটা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির জি. এমের সাথে ওর রিলেশনে আছে। এখন তার সাথেই ও বিদেশ গেছে, ওখানে একসাথে কোম্পানি চালাবে আর লিভ_ ইনে থাকবে।
___ কি বলছো তুমি! শুভ্রার বুকের ভেতরটা কেও যেন খামছে ধরেছে। ছেলে না ফেরার দুঃখের থেকে
ছেলের এই কথাটা সে মানতে পারছিল না।
__তুমি বললে আমি মানবো কেন, তোমরা কতবার ঘুরতে বেড়াতে গেছো, সেখানে তোমাদের মধ্যে কিছু হয় নি। আমার খোকা স্বাভাবিক।
জয়ী ধরা গলায় বললো__ কে বলছে অস্বাভাবিক!
শারীরিক সম্পর্ক হয়েছে, ইনফ্যাক্ট বিয়ের আগে ও আমায় শিডিউস পর্যন্ত করে বাট ও আর ফারদার এগোতেই চাইতো না। পরে পরে তো আমায় ছুঁয়ে ও দেখতো না। তখন অফিস ট্যুরে সেই ভদ্রলোকের সঙ্গে যেত, আমায় খোলাখুলি বলেছে।
শুভাকে হতবাক করে দিয়ে জয়ী বলে উঠলো__ এটা কোন ভুল নয়।হতেই পারে।
ও মনে মনে মেল পার্সোনালিটি কে পার্টনার হিসেবে পেতে চায়। এটা সময়ের সাথে সাথে মানতে হবেই।
সবার অধিকার আছে নিজের মতো করে লাইভ লিড করার।কিন্তু আমায় কেন ঠকালো! আমায় বিয়ে করে তোমার কাছ থেকে বাঁচতে চেয়েছিল, বাচ্চা না হওয়ার সব দোষ আমি ঘাড় পেতে নিয়েছিলাম কারন আমার মা নেই বলে তোমার প্রতি উইক ছিলাম। এখন তোমার কাছে ধরা পড়ার ভয়ে দেশ ছেড়ে দিল। আমি স্নেহ কে আঁকড়ে ধরে ছিলাম। ছোট থেকে পরিবার, ভালোবাসা মমতা পাই নি তাই দেহটাকে বাদ দিয়েই এই সংসারটাকে নিজের ভাবতে শুরু করেছিলাম। আপনাকে নিজের মা। শত অপমান ও হাসিমুখে মেনে নিয়েছিলাম।
কিন্তু এই কাগজে সই করার পর আর কোন সম্পর্কে এই বাড়িতে থাকবো বলো। কিসের টানে!
এতটা ছোট আর হতে ইচ্ছে করছে না ভালোবাসা পাওয়ার লোভে। কেন এত ভালোবাসি বলো তো স্নেহকে! বলেই ডুকরে কেঁদে উঠলো।
এতদিন যা পারেনি আজ শুভা তাই করলো। এগিয়ে এসে জয়ীকে দুহাতে জড়িয়ে চুমু খেয়ে বলল___ ওরে! তুই ও বুঝতিস আমার বকার মধ্যে ভালোবাসা লুকিয়ে আছে সেই টানেই না থাকতিস। অনেক অকথা কুকথা বলেছি, মাপ কর মা!
নিজের স্বার্থে নয় ছেলের পাপের প্রায়শ্চিত্ত করতে দে। তুই আমার মেয়ে হয়ে তো থাকতে পারিস এই বুড়িটার সাথে। কাউকে ভালো লাগলে ঘর বাঁধিস, শুধু এই বুড়িমাটাকে ভুলিস না।
আজ ঘরের মধ্যে দুটো অসমবয়সী নারী অঝোরে কাঁদছে! দুটো নারীর ভালোবাসার মানুষ এক , প্রিয় জনের ফেরার অপেক্ষা এক !!
একই কষ্ট দুটো নারীকে এক করে দিল যদিও তাদের মধ্যে কোন নাড়ির টান নেই!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here