স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে কলমযোদ্ধা- আতাউর রহমান বাবলু এর শৈশবের স্মৃতি নিয়ে লেখা “আমার শৈশবের স্বাধীনতা দিবস”

719
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে কলমযোদ্ধা- আতাউর রহমান বাবলু এর শৈশবের স্মৃতি নিয়ে লেখা “আমার শৈশবের স্বাধীনতা দিবস”

আমার শৈশবের স্বাধীনতা দিবস

                       আতাউর রহমান বাবলু

২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস । দিবসটি আসলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে বঙ্গবন্ধুর বজ্রকন্ঠ কোটি বাঙালির অস্তিত্ব রক্ষার যুদ্ধ স্বাধীকারযুদ্ধ জাতি হিসেবে মাথা উঁচু করে বেঁচে থাকার যুদ্ধ লাল সবুজের পতাকা ছিনিয়ে আনার যুদ্ধ সর্বোপরি নিজের ভূখণ্ডে স্বাধীন সত্তা জীবন যাপিত করার যুদ্ধ ।
আমরা যারা এসএসসি ৮৮’ বিডি বন্ধু তাদের মতো অনেকের জন্ম কালীন সময় অথবা দেশ স্বাধীন হওয়ার পর মুহূর্তে বিজয়ী মুক্তিসেনাদের মতো দেশের প্রতি অকুণ্ঠ ভালোবাসা ও মমত্ববোধ মিশিয়ে গর্ব করে বলতে পারি আমরা জন্মেছি বলেই বাংলাদেশ জন্মেছে। লাল সবুজের পতাকা এসেছে। সুপ্রভাত বাংলাদেশ।

১৯৮৩সাল তখন আমি পাকশী চন্দ্রপ্রভা বিদ্যাপীঠের ষষ্ট শ্রেণির ছাত্র । দেশের জাতীয় দিবসের তারিখ গুলো মুখস্ত থাকলেও দিবসের গুরুত্ব কিংবা তাৎপর্য আমাদের মস্তিষ্কে স্থান পায়নি যাক সে বিষয় এবার আমার শৈশবে স্কুলের কিছু কথা। একদিন ক্লাসে একটি নোটিশ এলো স্কুল থেকে ১৬ জনের একটি কাপ গ্রুপ স্বাধীনতা দিবসের কুচকাওয়াজে অংশগ্রহণ করবে সে তালিকায় নাম লেখাতে হবে আমি পলাশ জয় রিপন স্বাধীন শহীদ মোল্লা সাহিন রতন শওকত মেজর নাম লেখালাম তখনো ছাব্বিশে মার্চ আসতে প্রায় দেড় মাস বাকি শুরু হল ট্রেনিং উপর ক্লাসে যারা পড়ছেন তাদের মধ্যে বাবন ভাই তপন ভাই আমাদের গ্রুপ লিডার বাবন ভাই যখন আর্মির মেজর তখন একবার সাক্ষাৎ হয়েছিল এখন কোথায় আছে জানিনা তবে তপন ভাই D.S.Bএর ওসি বর্তমানে ঢাকাতে আছেন দীর্ঘ দেড় মাস ট্রেনিং প্রতিদিন টিফিনে ছুটির পর শুরু হতো কঠিন ট্রেনিং। কোবাদ স্যার এবং পেয়ার বক্স স্যার আমাদের গাইড করতেন । আমাদের ভাবসাব এমন ছিল যে আমরা মনে হয় সেনাবাহিনীর মত কোন যুদ্ধে অংশগ্রহণ করব। কুচকাওয়াজের সময় সবার হাত-পা মিলতে হবে সামনের দিকে নজর থাকতে হবে বুক টান থাকতে হবে একটু অমনোযোগ হওয়া যাবে না। একটু ভুল হলেই সপাং করে হুইসেলের সঙ্গে থাকা কালো করের চাবুকের মার। লেফট রাইট, জলদি চল ,এবার থাম ,ডাইনে ঘো্র, বামে ঘোর,এসব করতে করতে শরীরটা ক্লান্ত হয়ে পড়তো প্রতিদিন দের থেকে দুই ঘণ্টা আমাদের ট্রেনিং করতে হতো।
কষ্ট হলেও সে সময় আনন্দ পেতাম এই ভেবে যে পাকশী রেলওয়ে ফুটবল মাঠে স্বাধীনতা দিবসের মার্চ পাসডে হাজার হাজার মানুষ আমাকে দেখবে। কি সেই মজা! কত বড় প্রাপ্তি ক’জনের ভাগ্যে এরকম সুযোগ জোটে হাজার খানেক ছাত্রদের মধ্যে আমরা মাত্র ১৬ জন আমাদের দেখে অন্য বন্ধুরাও বেশ সমাদর করত। স্কুলের স্যারেরা ও আমাদের বাড়তি স্নেহ করতেন ছোটখাটো দুষ্টমিতে মাফ পাওয়া যেত। স্যারদের কাছে ছুটি চাইলে সে সুযোগ মিলত। স্কুলের অ্যাসেম্বলিতে প্রথম সারিতে আমরা। স্কুলে কোন অতিথি এলে তাকে সম্মান জানাতে আমরা।আমরাই কজন যেন সর্বেসর্বা ।সে এক অন্যরকম অনুভূতি।
যাইহোক ৮৩ সালের স্বাধীনতা দিবসের দুই সপ্তাহ আগ থেকে আমাদের মূল প্রস্তুতি শুরু হল মাথার চুল সুন্দর করে কাটতে হবে হাত পায়ের নখ থাকা যাবে না জামা কাপড় পরিষ্কার থাকতে হবে পায়ের সাদা কেডস সাবান দিয়ে ধুয়ে তাতে আবার সাদা চক পাউডার লাগাতে হবে । কতশত দায়িত্বের মধ্যে পড়ে গেলাম। জামার সবগুলো বোতাম ঠিক আছে কিনা প্যান্টের হুক ঠিক আছে কি না এগুলা পরখ করে নিতে হতো। সব প্রস্তুতি শেষ করে আমরা ভোর সাড়ে ছয়টার মধ্যে স্কুলে পৌঁছে যেতাম। সবার গায়ে সাদা জামা, পরনে ব্লু প্যান্ট ,কমলা রঙের স্কাপ, সাদা জুতা নিজেকে অন্যরকম মনে হতো। কোবাদ স্যার এবং পিয়ারবক্স স্যার আসলেন সকলকে সারিবদ্ধ ভাবে দাঁড়িয়ে যেতে বললেন এবং শেষবারের মতো সকলকে চেক করে নিলেন। এরপর আমরা সারিবদ্ধ ভাবে চলে এলাম প্যারেড গ্রাউন্ড অর্থাৎ পাকশী রেলওয়ে ফুটবল মাঠে। চন্দ্রপ্রভা থেকে আমরা কাব দল, পাকশী গার্লস স্কুলে গার্লস গাইড, রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী , রেলওয়ে পাকশী কলেজের রোভার দল। মাঠের পূর্বদিকে অভিবাদন গ্রহণ মঞ্চ মঞ্চের উপরে ডিআরএম শহরের পদস্থ কর্মকর্তা পশ্চিম পাশে ঘোষণা মঞ্চ একে একে সকল অভিবাদন মঞ্চের দিকে এগিয়ে এসে অভিবাদন জানাচ্ছে। এবার আমাদের কাব দল কিছুতেই কিছুদূর এগুতেই আমাদের সব কেমন যেন এলোমেলো হয়ে গেল কারো হাতের সাথে হাত মিল নেই, পায়ের সাথে কদমের মিল নেই,ত্যাড়া ব্যাকা লাইন, নাজুক পরিস্থিতি অবস্থার মধ্যে আমরা পড়ে গেলাম বাইরে দাঁড়ানো হাজারো দর্শক যত হাসছে আমাদের হাত-পা ততই অমিল হচ্ছে। দেড় মাসের খাটুনির ট্রেনিংস অফ পন্ড হয়ে গেল অনুষ্ঠান শেষে কোবাদ স্যার কান মলা দিলেন আর বেতের আঘাত করলেন। যদিও পরবর্তী বছরে আমরা শুধরে গিয়েছিলাম তবুও ওই দিনটির কথা এখনো মনে পড়ে মনে পড়ে রেলওয়ে সবুজ চত্বর রেলের সুসজ্জিত নিরাপত্তা ব্যান্ড পার্টি মনে পড়ে আমাদের সেই সময়কার বন্ধুদের মনে পড়ে আমার শৈশব আমার স্বাধীনতা দিবস।

লেখক : সাংবাদিক সংগঠক ও সদস্য এসএসসি ৮৮ বিডি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here