জীবন বোধের কবি লেখক-নাসরিন জাহান মাধুরী এর বিশ্লেষণ ধর্মী অসাধারণ লেখা “৮ মার্চঃ আন্তর্জাতিক নারী দিবস”

495
নাসরিন জাহান মাধুরী এর বিশ্লেষণ ধর্মী অসাধারণ লেখা “৮ মার্চঃ আন্তর্জাতিক নারী দিবস”

৮ মার্চঃ আন্তর্জাতিক নারী দিবস

নাসরিন জাহান মাধুরী

নারী দিবস কথাটা শুনলে অনেককেই মুখ বাঁকিয়ে হাসতে দেখি। নারী দিবস আবার কি? কেন নারী দিবস?বছরের বাকী ৩৬৪ দিন তাহলে নারীর অস্তিত্ব নেই?
নারী দিবস আসলেই নারীদের বন্দনায় ছেয়ে যায় মিডিয়া।এও এক ধরণের ব্যবসা নারীকে পুঁজি করে।

ভায়োলেট রংয়ের পোশাক পড়ে কিছু ছবি তুললাম কর্মক্ষেত্রে, ফেসবুকে আপলোড দিলাম তা কিন্তু নয়। আসলে আমরা অনেকেই জানি না নারী দিবসের প্রকৃত ইতিহাস। সেখানেও লুকিয়ে আছে বৈষম্য আর বঞ্চনার করুণ গল্প।

এই দিবসটি উদযাপনের পেছনে রয়েছে নারী শ্রমিকের অধিকার আদায়ের সংগ্রামের ইতিহাস। ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে মজুরিবৈষম্য, কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট করা, কাজের অমানবিক পরিবেশের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের রাস্তায় নেমেছিলেন সুতা কারখানার নারী শ্রমিকেরা। সেই মিছিলে চলে সরকার লেঠেল বাহিনীর দমন-পীড়ন।

১৯০৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি নিউইয়র্কের সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট নারী সংগঠনের পক্ষ থেকে আয়োজিত নারী সমাবেশে জার্মান সমাজতান্ত্রিক নেত্রী ক্লারা জেটকিনের নেতৃত্বে সর্বপ্রথম আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন হলো। ক্লারা ছিলেন জার্মান রাজনীতিবিদ; জার্মান কমিউনিস্ট পার্টির স্থপতিদের একজন। এরপর ১৯১০ খ্রিস্টাব্দে ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত হয় দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন। ১৭টি দেশ থেকে ১০০ জন নারী প্রতিনিধি এতে যোগ দিয়েছিলেন।

এ সম্মেলনে ক্লারা প্রতি বৎসর ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালন করার প্রস্তাব দেন। সিদ্ধান্ত হয়ঃ ১৯১১ খ্রিস্টাব্দ থেকে নারীদের সম-অধিকার দিবস হিসেবে দিনটি পালিত হবে। দিবসটি পালনে এগিয়ে আসে বিভিন্ন দেশের সমাজতন্ত্রীরা।

১৯১৪ খ্রিস্টাব্দ থেকে বেশ কয়েকটি দেশে ৮ মার্চ পালিত হতে লাগল। বাংলাদেশেও ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে স্বাধীনতার লাভের পূর্ব থেকেই এই দিবসটি পালিত হতে শুরু করে। অতঃপর ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দে ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি প্রদান করা হয়। দিবসটি পালনের জন্য বিভিন্ন রাষ্ট্রকে আহ্বান জানায় জাতিসংঘ। এরপর থেকে সারা পৃথিবী জুড়েই পালিত হচ্ছে দিনটি নারীর সমঅধিকার আদায়ের প্রত্যয় পুনর্ব্যক্ত করার অভীপ্সা নিয়ে।

জাতিসংঘ প্রতি বছর দিনটিকে পালন করে না না আয়োজনে। মুখ্য উদ্দেশ্য হলো নারী মুক্তি,নারীর ক্ষমতায়ন, কর্মক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সমান অধিকার, নারীকে স্বাবলম্বী ও আত্মমর্যাদাশীল করে গড়ে তোলা।
একজন আত্মপ্রত্যয়ী নারীই পারে সব বৈষম্যকে দূরে সরিয়ে নিজেকে গড়ে তুলতে।
শিক্ষায়, তথ্যপ্রযুক্তিতে, বিজ্ঞানে, শিল্পকারখানায়, অফিস আদালতে নারীর অবদান আজ অনস্বীকার্য। তবুও নারী আজ পিছিয়ে আছে,নিরাপত্তার অভাব, নারী নির্যাতন, কন্যা শিশু নির্যাতন রোধ করা যাচ্ছে না।
শুধু একটি দিনে নারীকে আবদ্ধ না রেখে প্রতিটি দিনেই সোচ্চার থাকি নারীর ন্যায্য অধিকার, সম্মান আদায়ে। তার জন্য প্রয়োজন মানবিক মূল্যবোধের বিকাশ।
এই নারীতো কোন ভিনগ্রহবাসী জীব নয়, কারো কন্যা, জায়া কিংবা জননী, কারো বোন।
প্রতিটি নারী স্বাধীনতার সুবাতাস উপভোগ করুক, সে থাকুক নিরাপদে, স্বীকার না হোক ডোমেস্টিক ভায়োলেন্সের। নারী দিবসে এটাই কাম্য। পৃথিবীর সকল নারীর জন্য রইলো শুভ কামনা ও শুভেচ্ছা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here