আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে কলমযোদ্ধা-নূরজাহান শিল্পী লিখেছেন “প্রজন্ম হোক সমতার ,সকল নারীর অধিকার ”

540

প্রজন্ম হোক সমতার ,সকল নারীর অধিকার

                             নূরজাহান শিল্পী।–

—আমি নারী আমি রাঁধতে পারি
আমি বাঁধতে পারি চুল
ভালোবাসায় উজাড় করে দিতে পারি জীবন প্রাণ কুল
আমি সম্ভাবনায় আমি সৃষ্টির উদ্ভাবনায়
আমি নই ছোট আমি মহীয়ান
আমায় দিয়েছে সর্বোচ্চ সম্মান পবিত্র আল-কোরআন
আমি ছুঁতে পারি পাহাড়চূড়া মহাকাশ
আমার নেই কোন অবকাশ
আমায় অভিশপ্ত অপয়া বলো দাসী কিংবা বাজারের পণ্য।
ভেবেছ কি একবার আমি না হলে তোমাদের পুরুষ জন্ম হতো না ধন্য।
আমি আল্লাহর শ্রেষ্ঠ নেয়ামত
আমি মায়ের জাত
অনেক সম্মান আমার
আল্লাহ আমায় নবী করেন নি মা হয়েছি নবীর
আমি নারী আমি মহীয়ান।
দুনিয়া ও আখেরাতে পুরুস্কৃত আমি সম্মানিতা
আমি সীমান্তের প্রহরী মৃত্যুর সাথে বিলীন হয় আমার জীবন লহরী

নারীদের জন্য দিবসের প্রয়োজন নেই ,বছরের প্রতিটি দিন হোক নারীর সম্মানের |
একটি দিনকে শ্রদ্ধা কুর্নিশ জানাতে নারীর সচেতনতা বৃদ্ধিতে হতে পারে |
মিছিল-মিটিং সেমিনার করে কি আমরা ঘুণেধরা সমাজের বিবেক মনুষ্যত্ববোধ জাগাতে পারব?
মানববন্ধন কি নারী কে মানুষের মর্যাদা দেবে?
খুবই হাস্যকর আজ বিংশ শতাব্দীর দ্বার প্রান্তে এসেও নারীকে অবমাননার স্বীকার হতে হয় |
সেই আদিম বর্বর অন্ধকার যুগে নারী ছিল অবলা
আজ এই পুরুষতান্ত্রিক সমাজে ও নারী নির্যাতনের প্রতীক।
স্বামীর সাথে পুড়ে মরতে হতো জ্বলন্ত চিতায় একটা সময় সেই সতীদাহ প্রথা উঠে ঠিকই
কিন্তু আজও নারী নীরবে সমাজ নামক চিতায় পুড়ে যাচ্ছে।
বিধবা বিবাহ প্রচলিত হলো
হয়তো সাময়িক কিছু স্বস্তি আসলো।
কিন্তু তাতে কি নারী স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পেরেছে?

আজ পৃথিবীর এই মহা সংকটময় মুহূর্তে করোনা ভাইরাসের টিকা আবিষ্কার
করলেন কোন পুরুষ নয় একজন নারী সারাহ গিলবার্ট।
আবার যার উপরে প্রথম প্রয়োগ করা হল উনিও কোন পুরুষ নন একজন নারী।
এলিসা গ্রান্টো।
নারীর পদচারণা কোথায় নেই?
নারী এভারেস্ট জয় করেছে নারী দেশ চালাচ্ছে ,নারী আদালত প্রাঙ্গণে নারী মাঠে-ঘাটে তাবৎ দুনিয়ার সর্বকালের শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি।
তারপরও দুঃখ এই পুরুষতান্ত্রিক সমাজ নারীকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে তাদের পায়ে শিকল পরিয়ে তাদের গতি রোধ করার চেষ্টা করে যাচ্ছে।
বাবার সাথে মেয়ে নিরাপদ নয় স্বামীর সাথে স্ত্রীর নেই নিরাপত্তা।
কেন?

আমাদের পারিবারিক নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয় প্রথমত কারণ।

সম্মানটা আমাদের নিজেদের তৈরি করতে হবে। নারীরা যে সম্মানী সেটা পরিবার থেকে প্রথম শেখাতে হবে।
একটা ছেলের জন্ম হলে পরিবারের যে আনন্দ দেখা যায় একটা মেয়ের বেলায় তা অনুপস্থিত।
আঁতুড়ঘরে এই বিভাজন নির্মূল করতে হবে।
একটা পরিবারে যখন একজন মাকে সম্মান দেওয়া হয় একটা সন্তান যখন দেখে সেও বড় হয় তার স্ত্রীকে সেই সম্মানটুকু দেবে।
সে যদি বড় হয় দেখে মা খালা চাচি বোন কারো সম্মান নেই তাহলে সে কি শিখবে?
কিছু কিছু পরিবার নারীকে জড়পদার্থ মনে করে।
নারীকে পরনির্ভরশীল নয় আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে স্বাধীনভাবে সম্মানের সাথে বেঁচে থাকার পরিবেশ সৃষ্টি করে দিতে হবে।
যার শুরুটা তার পরিবার থেকেই করতে হবে ।পরিবার থেকেই নারী মর্যাদা লাভ করতে হবে।
নারী দিবস পালন মাধ্যম নয় নারীর অধিকারের জন্য নারী দিবস থাকবে না।
নারী অর্ধাঙ্গী সহযোগী।
অধিকাংশ পরিবারে কাজের বুয়ার সাথে খারাপ ব্যবহার করা হয় অথচ সে সারাদিন পরিশ্রম করছে। একটা ছোট বাচ্চা এটা দেখে বড় হচ্ছে , তার নৈতিক শিক্ষা কতটুকু ডেভলপ হচ্ছে?
সে কি শিক্ষা নিচ্ছে নীচু শ্রেণীর লোকদের সাথে কিভাবে আচরণ করতে হয়।
সমাজ নষ্ট হবার একমাত্র কারণ পারিবারিক নৈতিক শিক্ষার অনুপস্থিতি।
পরিবার পরিবর্তন আসলে সমাজে পরিবর্তন আসবে।
মানুষকে সম্মান দেওয়া শিখতে পারলে নারী-পুরুষ আলাদা করে ভাবতে হবে না।
আলাদা দিবসের ও প্রয়োজন নেই।

সমাজে নারীর সুষ্ঠু অধিকার নিশ্চিতকরণ ,নারীর কর্মসংস্থান, শিক্ষা, পরনির্ভরশীলতা দূর করতে হবে।
সবচেয়ে বড় কথা একজন পুরুষের মধ্যে নারীর প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার মনোভাব থাকতে হবে।

একমাত্র আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হলে নারী নির্যাতন প্রতিরোধ সম্ভব।
প্রাণবিক পৃথিবী মানবিক হয়ে গড়ে উঠুক।
প্রজন্ম হোক সমতার গাই সাম্যের গান

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here