বাবা, এখন নয় !
ডাক্তার রীতা ওঝা
ভালো মন্দ বোঝা দেওয়া থেকেই জেনে এসেছি…
“পিতা স্বর্গ পিতা ধর্ম
পিতাহি পরমং তপঃ
পিতরি প্রীতিমাপন্নে
প্রিয়ন্তে সর্বদেবতা।”
তাই বাবা-মা সম্পর্কে কোনো কিছু বলার আগে হাজারবার ভাবা উচিত। কেন না সময়ের সাথে সাথে আমরাও পিতামাতা হব।
বাবা, তোমার মনে পড়ে সেই আমাদের সবার ছোট বেলার ছুটে চলার কথা?
হাত ধরে খেলতে, হাঁটতে, দৌড়াতে, ঘুরতে, স্কুলে যেতে, খাওয়াতে, মার্কেটে যেতে, চাইনিজ খেতে, পার্টিতে যেতে, ক্লাবের আড্ডায় যেতে, বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যেতে।
মজার মজার গল্প শুনাতে, কালজয়ী হওয়ার স্বপ্ন দেখাতে, বিখ্যাত কাহিনী শুনাতে, আরও শুনাতে কী করে সত্যিকারের মানুষ হওয়ার যায় সেই গল্প।
বই পড়াতে, ড্রয়িং করা, বিভিন্ন বিষয়ের ইভেন্টে অংশগ্রহণ করা, পুরস্কার নিয়ে আসা, অন্যায়ের প্রতিবাদ করা, সৎ পথে চলা, মিতব্যায়ীতা ,নম্র ও ভদ্রতার সাথে মার্জিত ভাষায় দৃঢ়তার সাথে কথা বলা , শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শন করা, কত কিছু না শেখাতে দিনের পর দিন।
যা আমাদের একমাত্র অবলম্বন।
.
তোমাদের পথেই চলছি বলে জ্ঞানার্জনের জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠে আমরা পড়েছি। তোমার মতো আজ আমরাও অফিসার হয়েছি। আমরাও মা-বাবা হয়ে গেছি। তুমি পেয়েছো নাতি-নাতনির আদর আর ভালোবাসা। আজ তোমার বয়স সত্তর ছাড়িয়ে গেছে। সময়ের সাথে সাথে জায়গা পরিবর্তন আর কিছু নয়।এটাও চিরন্তন সত্য যে, আমাদেরও জায়গা ছেড়ে দিতে হবে নতুনদের জন্য। তাহলে জেনেও কেন সংশয়ের আশংকা?
কেন ভয় পাই নিজেকে? কেনই বা আস্হা হারাবো নিজের ছেলে-মেয়ের উপর?
কেনই বা অসম্মান, অশ্রদ্ধা, অভক্তি, অবহেলা, অশিক্ষা কাজের কথা মাথায় আসবে? তাহলে তোমার সুশিক্ষার অভাব আছে না ছেলেমেয়েদের সুশিক্ষা দিতে পারোনি?
.
আমরা সবাই জানি, সময়ের সাথে সাথে অনেক কিছু বদলে যায়। তাই বলে আমরা সবকিছু হারিয়ে যেতে দিতে পারি না। মা চলে গেছেন সবার আগে। তাই মায়ের স্হান সবার উপরে। সেই জায়গা কাউকে দেবার নয়। এখন যেমন তোমার কষ্ট হচ্ছে বুঝি তেমনি আমাদেরও হচ্ছে। বৃক্ষ যেমন নিজ স্থানে অটল থেকে সবার থেকে অন্যায়-অত্যাচার, ঘাত-প্রতিঘাত, দুঃখ- কষ্ট, জরা-জীর্ণ, প্রকৃতির যন্ত্রণা সহ্য করে নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখে যশ অর্জিত করে যাচ্ছে, তেমনি তোমাকে এবং ভবিষ্যতে আমাদেরকেও ন্যায়ের পথ অনুসরণ করে যেতে হবে। আমরা সবাইকে নিয়ে আনন্দের মধ্যে দিয়ে বাকি জীবনটা কাটিয়ে দিতে চাই। বাবা, প্লিজ এমন কিছু করো না যাতে তোমার, আমাদের, নতুনদের, সমাজের, দেশের ভবিষ্যতের কোনো সমস্যা হয়।
.
আমরা যদি ঝড়ের মাঝে বের হয়ে যাই তাহলে কিন্তু আমাদের বস্ত্র ভিজবেই। আমরা পরিস্থিতি কিন্তু বদলাতে পারবো না। তবে যদি মানসিকতা পরিবর্তন করি তাহলে সহজেই ভিজে যাওয়া থেকে বিরত থাকতে পারব। তাই বাকি জীবন আরও সৃজনশীল কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে সুন্দর ধরণীতে স্পর্শ রেখে যাওয়াই সর্বোত্তম।
যা সবার উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।
এই নশ্বর দেহকে শুধু কালজয়ী করা যায় ভালো কাজের মধ্যে দিয়েই। প্রতিদিন আমরা মাথা নত করবো অহংকারের কাছে। যেটা নিমেষেই সবার কাছ থেকে ধন, যশ, ভালোবাসা, বন্ধুত্ব ও সম্পর্কের বন্ধন ছিঁড়ে ফেলে। আরও ত্যাগ করবো ষড়রিপুদের। পরিবারের বন্ধনে কখনো জড়ানো হবে না গণিতের সমীকরণ।
থাকবে শুধু পরিশুদ্ধ ও নিঃস্বার্থ ভালোবাসা।
লেখকঃ – প্রভাষক ,ফিজিওলজি ও বায়োকেমিষ্ট্রী ডিপার্টমেন্ট , ঢাকা ডেন্টাল কলেজ, মিরপুর,ঢাকা