করোনার আগমন ও বিকিরণ: (ক্ষয়িষ্ণু বৈশ্বিক স্থিতিশীলতার টেকসই পুনর্গঠনে প্রকৃতির একটি কৌশল) The Emergence and divergence of Corona syndrome: (A Natural Device for Sustainable Restoration of Depleting Global Sustainability)
প্রকৃতি বিরোধী পশ্চিমা সভ্যতার নিদারুণ অনৈতিক ও অটেকসই সামাজিক, অর্থনৈতিক ও পরিবেশিক আচার-আচরণ, কর্মকাণ্ড ও বৈরিতা পৃথিবীকে চরম অস্থিতিশীলতা ও ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাচ্ছে। এই অস্থিতিশীলতা ও ধ্বংস থেকে পৃথিবীকে রক্ষা ও দীর্ঘ মেয়াদী স্থিতিশীলতা অর্জনের জন্য জাতিসংঘ ২০১৫ সালে ১৭টি টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট ২০৩০ সালের মধ্যে বাস্তবায়নের ঘোষণা করে।
টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টসমূহ অর্জনে ও বাস্তবায়নে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের অগ্রসর এতো মন্থর যে ২০৩০ সালের মধ্যে কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছানো প্রায় অসম্ভব। এহেন পরিস্থিতিতে একটি দৈব হস্তক্ষেপ জরুরী ছিল। করোনার আগমন ও বিকিরণ একটি দৈব হস্তক্ষেপ। এই হস্তক্ষেপ আমাদের ক্ষয়িষ্ণু বৈশ্বিক টেকসই স্থিতিশীলতা পুনর্গঠনে প্রকৃতির একটি কৌশল বা প্রযুক্তি, যাহা অতি অল্প সময়ে পশ্চিমা সভ্যতার চরম অনৈতিক ও অটেকসই সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও পরিবেশিক আচার-আচরণ, কর্মকাণ্ড ও বৈরিতাকে থমকে দিয়েছে। ধর্ম বিরোধী ও প্রকৃতি বিধ্বংসী ভোগবাদি মন-মানসিকতা ও জীবন-যাপন, অনৈতিকতা, অশালীন যৌনতা, মাছ মাংস প্রাধান্য খাদ্যাভ্যাস, অপচয়ী জীবনধারা, অতিমাত্রায় প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অপব্যবহার, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি ও জল বায়ুর পরিবর্তনের জন্য দায়ী কর্মকান্ড নিমিষে বন্ধ করে দিয়েছে এই করোনার আগমন ও বিকিরণ। অনেকে ইহাকে একটি অনাকাংখিত প্রাকৃতিক দুর্যোগ হিসেবে দেখছে।
ধর্মে বিশ্বাসী ও প্রকৃতিবাদিরা বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি ও জল বায়ুর পরিবর্তনকে মানুষের অপকর্মের ফল হিসাবে মানুষের প্রতি প্রকৃতির প্রতিশোধমূলক শিক্ষা হিসেবে গণ্য করছে। এই শিক্ষা একদিকে মানুষকে তার দুর্নীতি, কুচিন্তা, অপকর্ম, শোষন ও দমন নীতি, দখলদারী, বর্ণবাদ, যুদ্ধ নীতি, আগ্রাসন থেকে বিরতি এবং মানুষের বহিঃমুখি ব্যাস্ততা থেকে ঘরমুখি করে নিজ নিজ ঘরে থাকতে অভ্যস্ত করছে; অন্যদিকে করোনাকে প্রকৃতির নিজস্ব বিনির্মান, পুনর্গঠন ও পুনর্যোজনের জন্য প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি হিসেবে ব্যবহার করছে। অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের ন্যায় করোনার আগমন ও বিকিরণ প্রকৃতির একটি প্রযুক্তি বা কৌশল – যাহা দ্বারা প্রকৃতি তার দুইটা উদ্দেশ্যই হাসিল করছে।
বোধহয়, করোনার আগমন ও বিকিরণে উদ্ভূত পরিস্থিতি মানবজাতির প্রকৃতি বিরোধী মনমানসিকতা ও জীবনধারার আমূল পরিবর্তন ঘটানোর নিমিত্তে একটি প্র্যাকটিকাল প্রশিক্ষণ। মানুষ করোনা পরবর্তি নতুন পৃথিবীতে সদ্যপ্রাপ্ত শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণের আলোকে সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও পরিবেশিক উন্নয়ন করলে তা হবে টেকসই । করোনা আরও প্রমাণ করলো যে প্রকৃতির শক্তি ও কলাকৌশলের কাছে মানুষের কলাকৌশল ও প্রযুক্তি কত নগণ্য, দুর্বল, অসহায়, অসার এবং অকেজো। মানুষ এবার তাঁর দৌরাত্ম্যের সীমা বুঝতে পেরেছে। সীমালংঘনকারীকে সৃষ্টিকর্তা পছন্দ করেননা-এই ধর্মীয় বাণী অনেক ধর্মহীনরাও এখন বিশ্বাস করে। বাংলাদেশের জনগণ এই ধর্ম বাণী পালনে ব্রতী হয়ে প্রাকৃতিক সম্পদের দায়িত্বশীল ব্যবহার এবং সহজ সরল জীবন যাপণের মাধ্যমে সুখ শান্তিপুর্ন স্বনির্ভর সোনার বাংলার পুনঃআবির্ভাব ঘটাতে সক্ষম হবে, যাহার রূপরেখা ১৯৬০ এর দশকেও বিদ্যমান ছিল। রূপরেখাটি নিম্নরূপঃ
নদী ভরা জল মাঠ ভরা ফসল
পুকুর ভরা মাছ গোয়াল ভরা গরু
বাড়ী ভরা গাছ পাখির কলতান
শিশুর কোলাহল বাউলের ও মাঝির গান
রাতে বন্য প্রানী ও ভূতের ভয়
উপসংহারে বলা যায় যে করোনার আগমন ও বিকিরণ বিশ্ববাসীকে যে সকল ধর্মীয় বিধান ও প্রকৃতির নিয়মাবলিপুষ্ট একটি জীবন যাপন পদ্ধতি পালনে অভ্যস্ত করছে; সেগুলির প্রয়োগ টেকসই উন্নয়ন বাস্তবায়ন দ্রুততর করবে।
মোঃ আমজাদ হোসেন
এসডিজি কোঅর্ডিনেটর (বাংলাদেশ চ্যাপটার)
কার্টিন ইউনিভার্সিটি সাস্টেইনিবিলিটি পলিসি ইন্সটিটিউট
কার্টিন বিশ্ববিদ্যালয়, পশ্চিম অস্ট্রেলিয়া।
ফোন + ৬১ ৮৯৪৯৪ ২১২৪ (বাসা, অষ্ট্রেলিয়া)
Email: a.hossain@curtin.edu.au
নিবার্হী পরিচালক
এসডিজি অ্যাকশন রিসার্চ সেন্টার
সিমেক ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি, উত্তরা, ঢাকা, বাংলাদেশ।