সারাবিশ্বে আমেরিকার মুড়লিপনা
হাসানুজ্জামান
বিশ্বে এখন একক আধিপত্য সৃষ্ঠি করে বসেছে যুক্তরাষ্ট্র। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের ভাঙ্গনের পরে তাদের কর্তৃত্ব এখন সর্ব মহলে। বিশ^ রাজনীতি এখন নিয়ন্ত্রণ করছে আমেরিকা। নিজেদের স্বার্থের কারণে নানা অজুহাত তৈরী করে স্বাধীন রাষ্ট্রে হামলা করতে কুন্ঠিত নয় তারা। ইতোপূর্বে তারা বেশ কয়েকটি এমন ঘটনা ঘটিয়েছে। আবার স্বার্থ ফুরিয়ে গেলে সেখান থেকে দ্রুত সরে যেতেও দেখা গেছে।
১৯৯৬ সালে আফগানিস্থানের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসে ‘মুসলিম সরিয়া আইনের’ প্রবর্তক তালেবান। সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে দীর্ঘ লড়াইয়ের পর তাদের এই ক্ষমতায় আসা। এই সময় পাহাড়-পর্বতে ঘেরা আফগানিস্থানে ওসামা বিন লাদেনের নেতৃত্বে ‘ আল-কায়েদা’ নামক একটি মুসলিম জঙ্গি সংগঠনের আত্বপ্রকাশ ঘটে বলে অভিযোগ ওঠে। আমেরিকার বিরুদ্ধে নানা সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের আলোচনা জোরালো হতে থাকে এই সংগঠনের বিরুদ্ধে। এমন কি তালেবান ‘আল- কায়েদা’ সংগঠনকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছে বলে কথা শোনা যায়। এই সকল অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্র ২০০১ সালে তালেবান সরকারকে হঠাতে আফগানিস্থানে হামলা করে । এই হামলায় তালেবান সরকার টিকতে না পেরে পালিয়ে গিয়ে পাহাড়-পর্বতের গুহায় গিয়ে আশ্রয় নেয়। দীর্ঘ বিশ বছর পর আফগানিস্থান থেকে আমেরিকা সৈন্য প্রত্যাহার করে নিলে তালেবানরা পুনরায় ক্ষমতায় ফিরে আসে। এক সময় পাকিস্থানে লুকিয়ে থাকা ওসামা বিন লাদেন গ্রেফতার হয়ে ঘটনাস্থলেই নিহত হয়।
অপরদিকে ২০০২ সালে আমেরিকা মুসলিম রাষ্ট্র ইরাকের সাদ্দাম সরকারের বিরুদ্ধে বিনা অনুমতিতে পারমানবিক বোমা তৈরীর অভিযোগ নিয়ে আসে। এই অভিযোগে ২০০৩ সালে আমেরিকার নেতৃত্বে বহুজাতিক বাহিনী ইরাকের উপর আক্রমণ করে। এক মাসের মধ্যেই আমেরিকা সাদ্দাম সরকারকে ধরাশায়ি করে। কিন্তু যুদ্ধ পরবর্তীতে অনেক খোঁজ খবর নিয়েও ইরাকে কোন পারমানবিক অস্ত্রের সন্ধান পায়নি। এ ঘটনায় বিশে^র শান্তিপ্রিয় মানুষের কাছে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জজ ডব্লিউ বুশ মিথ্যুক প্রমাণিত হয়। এ দিকে ইরাকের উপর বর্বরোচিত এই ঘটনায় বিশে^র শান্তিপ্রিয় মানুষ বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। আমেরিকার হটকারিতার বিরুদ্ধে ইতালীর রোমে প্রায় ত্রিশ লক্ষ মানুষের শান্তি মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় সারা বিশে^ আমেরিকার বিরুদ্ধে অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সভায় প্রায় ৪ কোটি মানুষ অংশ গ্রহণ করে।
আডলফ হিটলারের আগ্রাসী বৈদেশিক নীতির কারণে বিশে^র বেশ কয়েকটি রাষ্ট্রের মধ্যে অসন্তোষ জমতে থাকে। ফলে ১৯৩৯ সালে বৃটেন ও ফ্রান্স এক সাথে হয়ে জার্মানের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ঘোষণা দেয়। এ ভাবেই দ্বিতীয় বিশ^যুদ্ধ শুরু হয়। এই যুদ্ধে যোদ্ধাসহ প্রায় ৮ কোটি মানুষ মারা যায়। ১৯৪৫ সালে জার্মানী ও জাপানের আত্বসমর্পণের মধ্যদিয়ে দ্বিতীয় বিশ^যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে। তবে বৈশি^ক পরাক্রমশালী রাষ্ট্র হিসাবে যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের আত্বপ্রকাশ ঘটে।
ইসরাইল ও প্যালেস্টাইনের মধ্যে জাতিগত সংঘাত শুরু হয় অনেক আগে থেকে। ১৯৪৮ সালের ১২ মে ইসরাইল নিজেরাই স্বাধীন রাষ্ট্র ঘোষণাকরে। ইসরাইলের এই ঘোষণাকে আমেরিকা প্রথম স্বীকৃতি দিলেও প্যালেস্টাইনের ব্যাপারে তারা আজ অবধি কোন পদক্ষেপ নেয়নি। দ্বিতীয় বিশ^যুদ্ধের পর পরই ১৯৫৫ সালের ১ লা নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণ কোরিয়া , ফিলিপাইন, অস্ট্রেলিয়া ও থাইল্যান্ডের নেতৃত্বে সামরিক বাহিনী দক্ষিণ ভিয়েতনামকে আক্রমণ করে অপরদিকে সোভিয়েত ইউনিয়ন, চীনের নেতৃত্বে একদল সামরিক বাহিনী উত্তর ভিয়েতনামকে আক্রমণ করে। ১৯ বছর ধরে এই যুদ্ধ চলে। ১৯৭৩ সালে পরাক্রমশালী রাষ্ট্রগুলো যুদ্ধ সমাপ্তি করে চলে গেলে উত্তর ভিয়েতনাম এবং দক্ষিণ ভিয়েতনাম একইরাষ্ট্রে পরিণত হয়।
রাষ্ট্রপতি মিখাইল গর্বাচেভ সোভিয়েত ইউনিয়কে আধুনিক রাষ্ট্র র্নিমাণ কল্পে গ্লাসনস্ত( স্বচ্ছতা) ও পেরেস্ত্রোইকা( পূর্নগঠন)নীতি গ্রহণ করে। ফলে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভাঙ্গনের মুখে পড়ে। তারপর থেকেই সোভিয়েত ইউনিয়ন আর শক্তভাবে দাঁড়াতে পারেনি। পরাক্রমশালী সোভিয়েত ইউনিয়নের ভাঙ্গনের পর আমেরিকা বিশ^ রাজনীতিতে একক আধিপত্য তৈরী করে। তারা পুরো বিশে^ এখন ক্ষমতার দাপটদেখিয়ে বেড়াচ্ছে। মিথ্যা অভিযোগে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র ইরাকের বিরুদ্ধে লড়াই করে ইরাককে ধ্বংস করে দিয়েছে। আবার ‘ মুসলিম শরিয়া আইনের’প্রবর্তক তালেবানদের পুনরায় ক্ষমতায় ফিরিয়ে নিয়ে এসেছে।একদিকে ইসরাইলকে স্বীকৃতি দিয়ে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যদা দিয়েছে অপরদিকে প্যালেস্টাইনকে অন্ধকার গর্তে ফেলে রেখেছে। ভিয়েতনামের জনগণের উপর দীর্ঘ ১৯ বছর ধরে স্টিমরোলার চালিয়েছে,হত্যাকরেছে সাধারণ শান্তিপ্রিয় মানুষকে। যুক্তরাষ্ট্রের বিশ^ব্যাপিএই অশুভ রাজনীতি থেকে তৃতীয় বিশ্বের মানুষ কিভাবে, কখন মুক্তি পাবে তার কোন সূত্র এখনও আবিস্কার হয়নি।
লেখকঃ গবেষক ও প্রাবন্ধিক।