মায়ের প্রতি ভালোবাসার নিদর্শনস্বরূপ শারমিন সিদ্দিকী লিখেছেন ” মা ”

1055
মায়ের প্রতি ভালোবাসার নিদর্শনস্বরূপ শারমিন সিদ্দিকী লিখেছেন '' মা ''

মা

  শারমিন সিদ্দিকী

“মা” কথাটি ছোট্ট অতি কিন্তু যেন ভাই,
ইহার চেয়ে নাম যে মধুর ত্রিভুবনে নাই।

হ্যাঁ, মা।খুবই ছোট্ট একটি শব্দ। কিন্তু এর গভীরতা ও তাৎপর্য অনেক। যা বলে বা লিখে প্রকাশ করা যাবে না। মা ও সন্তানের মধ্যে এক স্বর্গীয় বন্ধন আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন ।

একজন মানব সন্তান পৃথিবীতে ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর সবাই তাকে দেখতে পায় এবং তার প্রতি মায়া – মমতার সৃষ্টি হয়। কিন্তু একজন মা আরও দশ মাস দশ দিন আগে থেকেই উপলব্ধি করেন তার সন্তানের আগমন। গর্ভে বিন্দু থেকে ধীরে ধীরে সন্তানের বেড়ে ওঠা, নড়া- চড়া আরও কতো কী? সন্তানকে গর্ভে ধারণ করে চলা-ফেরা করা,সংসারের কাজ করা কতোই না কষ্ট। কিন্তু মা শুধু সন্তানের
মঙ্গল চিন্তা করে সব হাসি মুখে মেনে নেয়।

আল্লাহ তা’য়ালার কী রহস্যময় বন্ধন সন্তান ও তার মা।সন্তান মায়ের পেটে থাকা অবস্থায় তার জন্য কোন পৃথক খাবারের প্রয়োজন হয় না। মায়ের খাবারের নির্যাস গুলিই সন্তানের দেহে প্রবেশ করে। একটু গভীর ভাবে চিন্তা করলে আল্লাহ তা’য়ালার এই রহস্যময় সৃষ্টির ভেদ বোঝা খুবই কঠিন। আবার সন্তান ভূমিষ্ঠ হবার পরও সন্তানের খাবার আল্লাহ দুই বতসর পর্যন্ত মায়ের বুকেই দিয়ে দেন।যার পুষ্ট গুণ দুনিয়ার অন্যান্য খাবার থেকে অনেক ঊর্ধ্বে। মায়ের দুধেই শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বিদ্যমান। শিশুদের ছোট- খাটো অসুখ- বিসুখে মায়ের দুধই টোটকা চিকিৎসা হিসেবে কাজ করে।

পরম স্নেহে একজন মা তার সন্তানকে বুকে আগলে রাখে এবং হরেক রকম স্বপ্ন দেখে তার সন্তানকে ঘিরে।

একজন মা তার সন্তানের জন্য আরামের ঘুম ত্যাগ করে সারা রাত জেগে থাকে সন্তানকে সযত্নে রাখতে। রাতে সন্তানকে কোলে নিয়ে খাওয়ানো কাথা-কাপড় বদলানো, গোসল করানো, নানা রকম কাজে মা নিজেকে নিয়োজিত রাখে।আবার ভোর হলেই সংসারের কাজ। আমরা পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের সদস্যরা একজন মাকে মা হিসেবে যতোটা গুরুত্ব দেয়া উচিৎ তা দেই না। বরং মায়ের দোষ-ত্রুটি তুলে ধরার চেষ্টা করি। ফলে আধুনিক যুগের ছেলে -মেয়েরা সন্তান হিসেবে মাকে প্রাধান্য দিতে চান না। তারা আধুনিক যুগে নিজেদের ক্যারিয়ারের জন্য মাকে বৃদ্ধাশ্রমে ঠিকানা করে দেন।

হযরত মুহাম্মদ (স) শৈশবেই মাকে হারান। কিন্তু তিনি স্ত্রী বিবি খাদিজা (র) কে গর্ভাবস্থায় দেখেছেন, যে সন্তান গর্ভে ধারণ করে চলা-ফেরা ও সংসারের কাজ করা কতো কষ্ট। তিনি বলেছেন সন্তানের জান্নাত মায়ের পায়ের নিচে। এর অর্থ এই নয় যে, সরাসরি পায়ের নিচে। ভাবার্থে আমি যেটা বুঝি সেটা হচ্ছে একজন মা তার সন্তানের জান্নাতেরও ঊর্ধ্বে। পবিত্র কুরআনেও মায়ের মর্যাদা উল্লেখযোগ্য। মায়ের প্রতি সন্তানের কর্তব্য বা সন্তানের প্রতি মায়ের হক বিভিন্ন হাদীস শরীফ ও ইসলামিক বইয়ে উল্লেখ করা আছে।

একদিন মুসা (আ) আল্লহকে জিজ্ঞেস করলেন, হে আমার আল্লাহ! আপনি বলুন শেষ বিচারের দিন আমার হাসর কার সাথে হবে? উত্তরে আল্লাহ বললেন, মুসা তোমার হাসর জনৈক কসাইয়ের সাথে হবে। মুসা (আ) আল্লাহর এই কথায় খুব কষ্ট পেলেন। তিনি আল্লাহর কথা মতো সেই কসাইয়ের বাড়িতে গেলেন। বাড়ির সামনে গিয়ে দাড়িয়ে তিনি দেখলেন, কসাই তার মাকে ঘর থেকে কোলে নিয়ে বাহিরে এনে গোসল করিয়ে, কাপড় পড়িয়ে আবার কোলে নিয়ে মায়ের বিছানায় বসালেন। আর কসাইয়ের মা মন খুলে দোয়া করে বললেন হে আল্লাহ! তুমি এই জামানার রাসুল মুসা (আ) এর সাথে আমার ছেলের হাসর দিও।আল্লাহ তার মায়ের দোয়া কবুল করলেন। কসাইয়ের মায়ের প্রতি তার ব্যাবহার দেখে মুসা (আ) এর মনের সব কষ্ট দুর হয়ে গেল।ইসলাম ধর্মে মাকে সব সম্পর্কের থেকে অধিক গুরুত্ব দিয়েছেন।

আমার এখনোও মনে পড়ে —– বরাবরই আমি খাওয়া নিয়ে খুব ঝামেলা করতাম। এটা খাবো না – ওটা খাবো না। নানা রকম মুখোরোচক খাবার ছিল আমার পছন্দ। যা তৈরি করা খুবই ঝামেলা যুক্ত। একদিন রাত তিনটার সময় ওঠে আমি বললাম, আম্মা আমি ভুনা খিচুড়ি আর নারকেল দিয়ে ভুনা হাসের মাংস খাবো।কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে — আমার মুখ দিয়ে কথা গুলো বের করা মাত্র আব্বী হাস ধরে জবাই করল। আর আমার মা সব কেটে গুছিয়ে তখনই রান্না বসিয়ে দিল। সব রান্না শেষে ভোর বেলা আমাকে খেতে দিল।

সত্যিই মায়ের ঋণ কখনো কোন কিছুর বিনিময়েই শোধ করা যাবে না। মায়ের সাথে পৃথিবীর কারো তুলনা নেই। মা শুধু মা ই। আমিও একজন মা। সন্তানের সার্বিক মঙ্গল কামনায় সদা আবেদন আল্লাহর কাছে।

তাই মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা, ভালোবাসা, বিশ্বাস, আস্থা প্রতিটি সন্তানের মনেই যেন আল্লাহ স্থাপন করে দেন।

আসুন সবাই মা কে ভালোবাসি,শ্রদ্ধা করি এবং তার প্রতি বিশেষ যত্নশীল হই।

মায়ের প্রতি ভালোবাসা প্রতিটি মুহূর্তের।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here