সমাজ-সভ্যতার সাম্য দর্শনের লেখক নিলুফার ইয়াসমিন রুবি’র বিশ্লেষণ ধর্মী সমসাময়িক প্রবন্ধ“অবরুদ্ধ পুরুষ-সত্তা: কতিপয়ের_আদিখ্যেতা ভাবনার_উদ্রেক_করে”

340
নিলুফার ইয়াসমিন রুবি’র বিশ্লেষণ ধর্মী সমসাময়িক প্রবন্ধ “অবরুদ্ধ_পুরুষ_সত্তা:কতিপয়ের_আদিখ্যেতা ভাবনার_উদ্রেক_করে”

অবরুদ্ধপুরুষসত্তা:কতিপয়েরআদিখ্যেতা ভাবনারউদ্রেক_করে
নিলুফার ইয়াসমিন রুবি

সম্প্রতি পুরুষকে নিয়ে বড্ড বেশি কু-রুচিকর মন্তব্য হচ্ছে! সত্যিই কি পুরুষ এতো খারাপ?
হে নারী, তুমিই বলো; জীবনে একটি মুহূর্তও কি পুরুষকে ছাড়া চলেছে? পুরুষের সহযোগিতা ছাড়া এগোতে পেরেছো কি এক কদমও?

তাহলে অবক্ষয়ে ধ্বসে যাওয়া গুটি কয়েক পুরুষের জন্য, নৈতিক শিক্ষার অভাবে ভুল পথে চালিত হওয়া তরুণ ছেলেটির জন্য, মাদকে আসক্ত মানসিক রোগীটির জন্য, অপসংস্কৃতির করাল গ্রাসে ধ্বংসপ্রায় যুবকের জন্য গোটা পুরুষ জাতিকে কেনো অপমান করছো?
যে পুরুষ তোমার আরাধ্য, যে পুরুষ তোমার আব্রু, যে পুরুষ তোমার সম্মান, যে ছেলে সন্তানটি তোমার গর্ব,
তাকে বাঁকা নজরে দেখো না। তাহলে, পৃথিবীতে ভালবাসার মতো, শ্রদ্ধা করার মতো, মাথার উপরে ঝুলে থাকা নির্ভরতার ছাদের মতো আর কোনো অবলম্বন থাকবে না! থেমে যাবে পৃথিবীর গতি, এতে করে আমরা নারীরাও তখন বড্ড বেশি একা হয়ে পড়বো।
নারীর প্রতি পুরুষের স্নেহ-মমতা, অসীম ক্ষমতা, শাসন-বারণ, প্রেম-ভালোবাসা নারীকেই সমৃদ্ধ করে চলেছে যুগে যুগে। দায়িত্বশীল স্বামী বা সন্তান না থাকলে আমরা নারীরা আপন মর্যাদা হারাতে বাধ্য।
মনে রাখতে হবে, পুরুষ মানেই খারাপ নয়, পুরুষ মানেই ধর্ষক নয়, পুরুষ মানেই নৃশংস নয়। গুটিকয়েক বিভ্রান্ত ও বিকৃত পুরুষ ছাড়া অধিকাংশ পুরুষই নারীর মাথার তাজ, তাকে অসম্মান? ইমহি, কক্ষনো নয়।
একবার ভাবোতো, তুমি যাকে ভালোবেসে হৃদয় স্থাপন করেছো, আদৌ কি তাকে টেনে নর্দমায় নামাতে পারবে? তাতে কি প্রেয়সীর আপন মর্যাদাটুকু অক্ষুণ্ন থাকবে?
বস্তুত, গুটিকয়েক পুরুষ ধর্ষণের সঙ্গে যুক্ত, কয়েকজন পুরুষ হয়তো আগ্রাসী ভাবনার সাথে জড়িত, মাত্র হাতেগোনা কতিপয় পুরুষ হয়তো নিগ্রহ-নিপীড়ন পছন্দ করে। এই সামান্য কয়েকজন বিকৃত মস্তিষ্কের পুরুষই হয়তো গোটা পুরুষ জাতিকে কলঙ্কিত করে চলেছে। গুটি কয়েকের এই অপকর্মের জন্য গোটা পুরুষ সমাজকে অপমান কাম্য নয়।
এসো, সমাজের এই অবক্ষয় থেকে সমাজকে রক্ষা করি, নারী-পুরুষ মিলে সমাজকে সুন্দর করে গড়ে তুলি।
এসো পরিবারে মনোযোগ দেই, খেয়াল করে দেখো, তোমার আদরের ছেলে সন্তানটি ক্রমাগত যুবক হয়ে উঠছে, তার ভেতরেও নবচেতনা জন্ম নিচ্ছে, উত্তাল তারুণ্য পাড়ি দিয়ে পূর্ণ যুবকে পরিণত হচ্ছে দিনে দিনে। হয়তো ইতিমধ্যেই তার ভেতরে দেখা যাচ্ছে কিছু প্রাকৃতিক পরিবর্তন। এই পরিবর্তনে কি তোমার আমার হাত আছে বলো? কাজেই এই পরিবর্তনকে স্বাগত জানিয়ে সৌম্য-সুন্দর ও লজিক্যাল পদ্ধতিতে সমাজ ও সংসার গড়ে তুলতে পারলেই সভ্যতা বিকশিত হবে।
আর এই কাজটি তাকে বাঁধা দিয়ে নয়, তাকে ভালো-মন্দের বিশ্লেষণ করৈ, ন্যায়-অন্যায়ের পার্থক্য করতে ও বুঝতে শিখিয়ে গড়ে তুলি স্বাস্থ্যকর ও সুন্দর পরিবার। দিকে দিকে ছড়িয়ে দেই সেই লজিক্যাল সাকসেসনেস।
মানুষ জানুক ‘বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর’। কাজী নজরুলের এই মহান বাণীর আলোকে মানুষ মূল্যায়ন করতে শিখুক নারীর কতো ক্ষমতা, নারীর কতোটা শক্তি; নারীর স্নেহ, মায়া-মমতা, প্রেম-ভালোবাসা, সৌন্দর্য-সুষমা, মেধা-প্রতিভা সত্যিই অনাবিল শৈল্পিক আমেজে ভরপুর।
কাজেই, নারীকেই তার নিজস্ব শ্রম ও অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে নিজেকেই অবস্থান তৈরি করতে হবে। তবেই দেখবে, পুরুষেরা ধর্ষণের দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে সেই নারীকে দেখবে না বরং বসাবে সম্মানের আসনে।
মনে রাখতে হবে, তোমার আমার পরীর মতো কন্যাসন্তানটিকেও আগলে রাখার সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য আশ্রয়স্থল তার পিতা। স্ত্রী হিসাবে নিরাপত্তা দেবার মতো সবচেয়ে দায়িত্বশীল ব্যক্তি তার স্বামী। দাবি-আবদার আর খুনসুটিতে বোনের শখ পূরণের আস্থাবান ব্যক্তির নাম ভাই।
কাজেই সমস্বরে বলতেই হয়.. পুরুষ মানেই ধর্ষক নয় বরং পুরুষ পুত্র, পুরুষ ভাই, পুরুষ স্বামী, পুরুষ বাবা, পুরুষ অভিভাবক, পুরুষ ভালোবাসা, পুরুষ নির্ভরতা ও আশ্রয়..
এসো তবে আগলে রাখি
বুকের প্রিয় পাখি,
যার সাথে হয় সকাল-বিকাল
তীব্র মাখামাখি।
আগলে রাখি খাঁচার পাখি
ময়না ও টুনটুনি,
যার কারণে স্বপ্নজয়ের
প্রতিধ্বনি শুনি।
আয়োজনে ক্ষণে ক্ষণে
নিত্য আনাগোনা
আরাধ্য সে ভালোবাসার
স্বপ্ন দিয়ে বোনা।

তোমার-আমার এক জীবনের
সকল কাঁদা হাসায়,
আগলে রাখি মনের মানুষ
কেবল ভালোবাসায়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here