প্রফেসর ড.মোছা.ফেরদৌসী বেগমের সমকালীন ভাবনার বিশ্লেষণধর্মী লেখা “প্রজম্ম ভাবনা’’

284
ড.মোছা.ফেরদৌসী বেগমের সমকালীন ভাবনার বিশ্লেষণধর্মী লেখা “প্রজম্ম ভাবনা’’

প্রজম্ম ভাবনা
ড. মোছা. ফেরদৌসী বেগম
প্রফেসর, উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগ।

এক জীবনে কত কিছুই যে শিখতে হয়। যতই শিখি সময় তার চেয়ে এগিয়ে যায়। বলে যায় তুমি দৌড়াও না হলে পিছয়ে যাবে। ছোট বেলায় কত কষ্ট করে লেখা শিখেছিলাম। এখন দেখি কষ্টে শেখা হাতে লেখার চেয়ে প্রিন্টেড লেখার কদর বেশি। একটি ইনফরমেশন এর জন্য, একটা ক্লাস নেওয়ার জন্য লাইব্রেরীর কত বই ঘেটেছি। এখন গুগল সার্চ দিলে কত দ্রুত তথ্য পেয়ে যাই। চারিদিকের সবকিছুই কত দ্রুত পাল্টে যাচ্ছে। চেনা মানুষগুলো পাল্টে যাচ্ছে। কেমন যেন একটা চাপা অস্হিরতা। একদিক প্রযুক্তির আকাশচুম্বী উন্নয়ন অন্যদিকে বাড়ছে তীব্র ধনবৈষম্য। ধনী রাষ্ট্র সামরিক বাজেট বাড়াচ্ছে অন্যদিকে বাড়ছে চরম নিরাপত্তাহীনতা। বেড়ে চলেছে সাম্প্রদায়িকতা। আর এর সংগে যুক্ত হয়েছে অতিমারী। যত কিছুই বলি অতিমারীর পূর্বজীবন এবং পরবর্তী জীবন কখনই এক হবেনা৷ খাদ্য শিক্ষা, অর্থনীতিসহ অনেক ক্ষেত্রেই সংকট তৈরী হবে। এসব নিয়ে বাড়ছে উদ্বিগ্নতা।

সময়ের সাথে সাথে অনেক কিছুর পরিবর্তন হয়। প্রতিনিয়ত মানুষের পরিবেশ, কর্মক্ষেত্র, মন, মানসিকতা, চিন্তাভাবনা, চেতনা সবকিছুর পরিবর্ত ন ঘটছে। আদি মানুষের অন্ন আর বাসস্হানের চিন্তাই মূখ্যছিলো তাই ভাবনার বিকাশ কম ছিলো। পরবর্তীতে সভ্য মানুষের সৃষ্টি হয়েছে, জ্ঞান বিজ্ঞানের সৃষ্টি হয়েছে, প্রযুক্তিগত উন্নয়ন ঘটেছে, চিন্তা ভাবনার উৎকর্ষতা বৃদ্ধি পেয়েছে।। প্রজম্ম থেকে প্রজম্মের ভাবনাগুলোও হচ্ছে ভিন্নতর ।
ধরা যাক মানুষের জন্ম দুই লক্ষ বছর আগে। সেই হিসেবে মানব জাতি ৮০০০তম জৈবিক প্রজম্ম অতিক্রম করছে। প্রতিটি প্রজম্মই কিন্তু একটি নির্দিষ্ট ভাবধারায় বেড়ে উঠেছে বা উঠছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও তার পরবর্তী সময় থেকে প্রজম্মগুলোর নির্দিষ্ট নাম দেওয়া হয়েছে । যেমন – দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধকালীন সময়ে যারা জম্মগ্রহন করেছিলেন বিশেষ করে যারা মিত্রবাহিনীতে অংশগ্রহন করেছিলেন সেই প্রজন্মকে বলা হয় ‘গ্রেটেস্ট প্রজম্ম’ । এর পরবর্তী ১৯৪৬- ১৯৬৪ এর মধ্যে জম্ম নেওয়া প্রজম্মকে বলা হয় ‘বেবি বুমারস’৷ সবচেয়ে সমালোচিত এ প্রজম্মের বয়স এখন ৫২- ৭০ বছর।
১৯৬৫ থেকে১৯৮৪ এর মধ্য জম্ম নেওয়া প্রজম্মকে বলে ‘প্রজম্ম এক্স’। এদের মধ্যে অনিশ্চয়তা বেশি ছিলো। আবার ১৯৭০ থেকে ২০০০ সালের আগে জম্ম নেওয়া প্রজম্মকে বলে ‘ প্রজম্ম ওয়াই’। ডিজিটাল যুগের প্রজম্ম যাদের জম্ম ১৯৮২ থেকে ২০০৪ এর মধ্যে তাদেরকে বলে’ মিলেনিয়াস’ ৷ এরা মানবিক গুণাবলী অর্জনে যত্নশীল আবার ডিজিটাল জ্ঞানের ধারক। এদের মধ্যে সনাতন ও ডিজিটাল দুটো ধারার টানপোড়ন আছে। এর পরবর্তী প্রজম্মকে বলে ‘ “ইনফরমেশন জেনারেশন বা আইজেন’।এদের জন্ম ১৯৯৯ থেকে ২০১২। এদেরকে নেট জেন, জেন টেক, ডিজিটাল নেটিভসও বলা হয়। এরা বড় হচ্ছে স্মার্ট ফোন, ইটারনেট, সোশ্যাল মিডিয়ার সাথে।
আইজেন প্রজম্ম হলো সত্যিকারের ডিজিটাল প্রজম্ম। এরা প্রযুক্তিতে আসক্ত। এদের মধ্যে টানপোড়ন কম। আগের প্রজম্মের থেকে এ প্রজম্মের তরুন – কিশোরদের মাঝে চিন্তা ধারা বা কাজ কর্মে অনেক ফারাক। এ প্রজম্ম প্রিন্টেড বই কম পড়ে , সেলে বন্দী, স্ক্রীনে আসক্ত, অনলাইন গেমে আসক্ত, রাত জাগে, ঘুমায় কম। অনলাইন ভিত্তিক সৃষ্টিশীল কাজে আগ্রহ তবে এদের মাঝে মূল্যবোধের চর্চা বা অণুশীলন কম। কিছুটা আত্মকেন্দ্রিক ও আশাবাদী। চিন্তা ও কাজে মিলেনিয়াসদের চেয়েও ফাস্ট। পড়াশোনায় কিছুটা অমনোযোগী। তবে অনলাইন পড়াশোনায় আগ্রহী। মনে রাখে কম কিন্ত যুগানুযায়ী অনেক তথ্য জানে। এরা বিভিন্ন তথ্য, তথ্যের উৎস, ক্রস রেফারেন্স, ভার্চুয়াল ও অফ লাইন উভয় জীবনেই স্বচ্ছন্দময়। জীবনের প্রয়োজনেই এদেরকে অনেক ফাস্ট হতে হবে না হলে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাযুক্ত যন্ত্রনির্ভর আাগামী পৃথিবীর সংগে অভিযোজিত হতে বেশ বেগ পেতে হবে। হয়তো এর পরবর্তী প্রজম্ম পুরোটাই ভার্চুয়াল জগতকেন্দ্রিক হবে। যন্ত্র আর মানুষের, মানবিকতা আর যান্ত্রিকতার দ্বন্দ্বে কে হেরে যাবে কে জিতবে ভবিষ্যৎই জানে।

সময়ের প্রয়োজনে অভিভাবদের বিশেষ করে যাদের সন্তানরা তরুন বা কিশোর তদেরকে বিষয়টা বুঝতে হবে। বিশেষ করে সন্তানের মনস্তাত্ত্বিক বিষয়গুলোকে। না হলে সন্তান ও অভিভাবকদের মাঝে দূরত্ব বাড়বে সেটা কাম্য নয়। আবার শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীদের মাঝেও একই সংকট বাড়বে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিশেষ করে প্রযুক্তিগত দক্ষতার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা এগিয়ে যাবে। ভারসাম্য রক্ষার্থে শিক্ষকদেরকেও স্বপ্রণোদিত হয়ে প্রশিক্ষন নিতে হবে নাহলে তাল সামলানো যাবে না। এটা সত্য যে ছাত্রছাত্রীরা এখন আর ঐ চক ডাস্টার নির্ভর ক্লাসে মনযোগ রাখতে পারছেনা। তাদেরকে ব্লেন্ডেড মেথোডে আনতে হবে। আমি অনলাইন অফলাইন ক্লাসের কথা বলছি না। বোর্ডভিত্তিক লেকচারের পাশাপাশি পড়াশোনাকে আনন্দময় করতে ও পাঠে মনযোগ বাড়াতে প্রজেক্টর-স্লাইড ভিত্তিক ক্লাসও নিতে হবে। তারপরও চিন্তা ভাবনা, কাজকর্মে প্রজম্ম গ্যাপ থেকেই যাবে। এ যেন সময়কে রশি দিয়ে বাঁধার চেষ্টা। ভালো থাকুক আগামী প্রজম্ম, বেড়ে উঠুক সুষ্ঠ ধারায়। জগতের কল্যান হোক।

(তথ্য সূত্রঃ ইনটারনেট)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here