সমাজ বিশ্লেষক-মোঃ সরওয়ারুজ্জামান মনা বিশ্বাস এর বিশ্লেষণ ধর্মী লেখা “”ব্যাক্তি, সমাজ ও দেশকে বদলাতে আদর্শিক জাতীয় রাজনৈতিক নেতৃত্বের বিকল্প নাই।”

719
সমাজ বিশ্লেষক-মোঃ সরওয়ারুজ্জামান মনা বিশ্বাস

” ব্যাক্তি, সমাজ ও দেশকে বদলাতে আদর্শিক জাতীয় রাজনৈতিক নেতৃত্বের বিকল্প নাই।”

মোঃ সরওয়ারুজ্জামান মনা বিশ্বাস।

গত ১৮/০২/২০ তারিখে আমার টাইম লাইনে “রাজনীতিবিদদের মালিকানাবোধ কি এবং তা থাকা কেন জরুরী” নামের একটি লেখা পোষ্ট করেছিলাম। পোষ্টে যারা লাইক দিয়েছেন এবং মুল্যবান আলোচনা রেখে মন্তব্য করেছেন তাঁদের সবাইকে জানাই অশেষ ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা। মন্তব্যকারীগনের মধ্যে কেউ একজন কিছু গুরুত্বপুর্ন বিষয় আলোচনা করেছেন। আলোচনার বিষয় সমুহ আমার চিন্তাধারাকে নাড়া দিয়েছে, বিষয়টা নিয়ে খুব বেশী দ্বিমত না করলেও তা আলোচনার দাবী রাখে। তিনি মন্তব্যে বলতে চেয়েছেন, রাজনৈতিক নেতৃত্ব দ্বারা নয়, সমাজে বসবাসরত মানুষ যখন নিজেকে বদলাবে তখন সমাজ বদলাবে দেশ বদলাবে। এ কথা অস্বীকার করার নয়। তবে সমাজে মানুষ নিজে নিজে বদলায় না বা নিজেকে বদলাতে পারে না। হ্যাঁ ব্যাক্তি মানুষ বদলায় কোন আদর্শকে সামনে রেখে, তাকে অনুসরন, অনুকরন করে এবং আদর্শ মানুষটির সান্নিধ্যে এবং নেতৃত্বে । মানুষ শিক্ষিত হতে হলে যেমন শিক্ষকের প্রয়োজন তেমন আদর্শ নাগরিক হতে হলেও আদর্শবান ব্যাক্তি বা নেতৃত্বের সান্নিধ্য প্রয়োজন। আবার ব্যাক্তি যদি আদর্বান হিসাবে গড়ে না উঠে তাহলে তো সমাজ পরিবর্তন বা আদর্শিক সমাজ বা রাষ্ট্র ব্যাবস্থা গড়ে উঠতে পারে না। সমাজে আদর্শবান মানুষ যে নাই তা নয় তবে সামাজিক অবস্থার কারনে তাঁরা দৃশ্যমান নয় আবার তাদের মানুষ এবং সমাজ পরিবর্তনে ভুমিকা রাখার সুযোগও নাই। সেই ক্ষেত্রে জাতীয় আদর্শিক রাজনৈতিক নেতৃত্ব যদি সদিচ্ছা পোষন করেন এবং ভুমিকা রাখেন তাহলেই সম্ভব। ইতিহাসে তার বহু উদাহরন আছে।যেমন ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক আমাদের মহান রাসুল (সাঃ) যখন  ধুলির ধরায় তশরীফ এনেছিলেন তখন আরবীয় যুগকে আইয়ামে জাহেলিয়াতের যুগ বলা হত। কিন্ত ঐ যুগের মানুষই যখন রাসুল সাঃ এর পরশময় সান্নিধ্যে এসেছেন, তাঁর নির্দেশে ধর্ম কর্ম প্রতিপালন করেছেন, তখন ধীরে ধীরে তারাও সভ্য হয়েছেন। পর্যায়ক্রমে সমগ্র আরব জাতিই সভ্য জাতিতে পরিনত হয়েছে। আবার রাসুল সাঃ ওফাতের পরে কারবালার মর্মন্তুদ ঘটনার মাধ্যমে দুরাচার এজিদ এবং তার উত্তরসুরী উমাইয়া ও আব্বাসীয় বংশের খলিফাগন ৫৯৭ বৎসর ইসলামী খেলাফত পরিচালনা করে ইসলামকে তার আদর্শের জায়গায় রাখতে পারে নাই। তাঁরা তো মুসলমান ছিলেন, কোরআন পাঠ করতেন, নামাজ, রোজা, হজ্ব, জাকাত আদায় করেছেন তাহলে তাঁরা রাসুলের আদর্শের ইসলাম ধরে রাখতে পারেন নাই কেন? কারন নেতৃত্বের আদর্শচ্যুতি ছিল। সেই ধারাবাহিকতা এখনও চলছে। এজিদ এবং তাঁর উত্তরসুরীগন যেমন আদর্শবাদী ছিলেন না তেমনি অন্য কোন আদর্শবান ব্যাক্তিও তাঁদের সামনে ছিলেন না। যাঁরা ছিল তাদের বিতাড়িত করে বনে জঙ্গলে যেতে বাধ্য করেছিলেন।

আদর্শবান এবং যোগ্য নেতৃত্বের অভাবে আজকে বাংলাদেশ, আরব জাহান সহ ইসলামী বিশ্বে ইসলামের অবস্থা কোথায় গিয়ে দাঁড়াচ্ছে? যদিও আমি বিশ্বাস করি সমাজে রাসুল সাঃ এর আদর্শ ধারনকারী মুমেন মুসলমান এখনও আছে। তাদের কি সাধ্য আছে সেই ইসলাম নিয়ে কথা বলা। কোন সময় সাহস নিয়ে রাসুল সাঃ এর আদর্শের ইসলামের কথা বললেই তাঁদেরকে তথাকথিত মুসলমানগন মোনাফেক, কাফের এবং আল্লাহ ও রাসুল সাঃ এর দুশমন বলে গালিগালাজ করতে থাকেন আর তাঁরাও গলা নিচু করে ঘরে ঢুকে পড়েন। মন্তব্যের আলোচনায় সমাজের সুশীল আর গন্যমান্য ব্যাক্তিদের মানুষ আর সমাজ বদলানোর কথা বলেছেন। কিন্তু তাঁরা কোন উদ্যোগ কিংবা ভুমিকা নিলেও তথাকথিত রাজনৈতিক নেতা কর্মি আর সমাজপতিদের গালিগালাজ আর চাপে রাসুল সাঃ এর প্রকৃত উত্তরসুরী মুসলমানদের মত নিশ্চুপ হতে বাধ্য হন। সুতরাং রাসুল সাঃ এর আদর্শের ধারক আর লালনকারী মুসলমানের নেতৃত্বের অভাবে যেমন ইসলাম বিকশিত হয় নাই, তার সুশীতল ছায়ায় বিশ্ব মানবতাকে আশ্রয় দিতে পারে নাই তেমনি আদর্শিক রাজনৈতিক নেতৃত্বের অভাবে আজকের সমাজ ও রাষ্ট্র বিকশিত হয়ে সভ্যতার চুড়ায় পৌঁছাতে পারে নাই।

আদর্শিক এবং যোগ্য রাজনৈতিক নেতৃত্বে একটা দেশ, সমাজ যে উন্নয়ন, সভ্যতা আর সমৃদ্ধির উচ্চ স্থানে পৌঁছায় তারও প্রচুর উদাহরন আছে। যেমন সিঙ্গাপুরের লু কুন ইউ, মালয়েশিয়ার মাহাতির মহম্মদ, ফ্রান্সের চার্লস ডি গুল, রাশিয়ার লেনিন, চীনের মাও সে তুঙ, আলবেনিয়ার এনভার হোজা সহ অনেক নেতাই তাদের আদর্শ আর নেতৃত্বের গুনাবলী দিয়ে ইতিহাসে অবস্থান করে নিয়েছেন। আজকে সমাজপ্রমিক, দেশপ্রমিক কোন মানুষ যদি চলমান সামাজিক অনাচার, ঘুষদর্নীতি, মাদক আর সামাজিক অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে ভুমিকা রাখতে যায় তাহলে সে কতক্ষন টিকে থাকবে? বলা যায় টিকে তো থাকবেই না বরং উল্টো মাদক, খুন কিংবা তথাকথিত গায়েবী মামলার আসামী হয়ে নির্ঘাত জেলে যেতে হবে। সুতরাং জাতীয় নেতৃত্ব যদি দেশ, জাতি এবং জনগনকে বদলিয়ে আদর্শিক জায়গায় নিয়ে যাওয়ার অভিপ্রায় কিংবা আকাংখা লালন করে পরিকল্পনা এবং কর্মসুচী না নেন তাহলে অন্য কোন ভাবে সমাজ ও দেশকে সভ্যতার দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব বলে মনে হয় না। আমাদের যাদের পাকিস্থান আমলে জন্ম হয়েছে এবং সেই সমাজ, সংস্কৃতিতে বড় হয়ে অদ্যাবধি বেঁচে থেকে বর্তমান সমাজকে কাছ থেকে দেখছি কেবল তারাই অনুমান করতে পারি, রাজনৈতিক নেতৃত্বের উপেক্ষা, অবহেলা আর দুরদর্শিতার অভাবে সামাজিক অবক্ষয় কোন পর্যায়ে পৌঁছাতে পারে।
লেখকঃ কলামিষ্ট ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক।
মেইলঃ[email protected]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here