সমাজ বিশ্লেষক- হামিদা আনজুমান এর বিশ্লেষণ ধর্মী অসাধারণ লেখা “আন্তর্জাতিক নারী দিবস” নারীর জন্য অবমাননার নাকি অনুপ্রেরণার?

535
হামিদা আনজুমান এর বিশ্লেষণ ধর্মী অসাধারণ লেখা “আন্তর্জাতিক নারী দিবস" নারীর জন্য অবমাননার নাকি অনুপ্রেরণার?

“আন্তর্জাতিক নারী দিবস” নারীর জন্য অবমাননার নাকি অনুপ্রেরণার?

হামিদা আনজুমান

অনলাইন দুনিয়া এবং বাস্তবে ও দেখি অনেক নারীদের মধ্যে ৮ ই মার্চ তথা আন্তর্জাতিক নারী দিবস নিয়ে রয়েছে দ্বিধা- দ্বন্দ এবং ভুল ধারনা। তারা মনে করেন নারী যে চিরকাল দুর্বল এবং পুরুষের সমান নয় কিংবা পুরুষের সাথে সমান অধিকারের মানুষ নয় এটা বুঝানোর জন্যই এই দিবস। এবং তারা এই দিনটিতে লজ্জাবোধ ও করেন।
আমার ভাবনা তা নয়।আমি তা মনে ও করি না…
বাংলাদেশের শিক্ষিত নারীদের মধ্যে কত শতাংশ আন্তর্জাতিক নারী দিবস সম্পর্কে জানেন বা সচেতন এ ব্যাপারে সমীক্ষা হলে, ফলাফল আমাদের জন্য মোটেও সন্তোষজনক হবে না।
আন্তর্জাতিক নারী দিবসের রয়েছে অনন্য এক ইতিহাস।১৮৫৭ সালের ৮ মার্চ আমেরিকার নিউইয়র্ক শহরে একটি সূচ কারখানার মহিলা শ্রমিকগণ কর্মক্ষেত্রে মানবেতর জীবন ও ১২ ঘন্টা কর্মদিবসের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেন। তাদের উপর নেমে আসে পুলিশি নির্যাতন । ১৮৬০ সালে ঐ কারাখানার মহিলা শ্রমিকেরা ‘‘মহিলা শ্রমিক ইউনিয়ন’’ গঠন করেন আর সাংগঠনিক ভাবে আন্দোলন চালিয়ে যেতে থাকেন । ১৯০৮সালে ১৫০০০ নারী কর্ম ঘন্টা,ভাল বেতন ও ভোট দেওয়ার অধিকার দাবি নিয়ে নিউ ইয়র্ক সিটিতে মিছিল করে।
তারপর ১৯১০ সালের ৮ মার্চ কোপেনহেগেন শহরে অনুষ্ঠিত এক আর্ন্তজাতিক নারী সম্মেলনে জার্মানির মহিলা নেত্রী ক্লারা জেটকিন ৮ মার্চকে ‘‘আর্ন্তজাতিক নারী দিবস’’ঘোষণা করেছিলেন। আন্তর্জাতিক নারী সন্মেলনেই এই দিবসটি প্রচলন ও প্রসারের সিদ্বান্ত হয় যেখানে বিশ্বের প্রায় সকল দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারী অধিকার নিয়ে কাজ করা নারীরাই উপস্থিত ছিলেন।
১৯১১ সালে বিপুল উৎসাহ ও উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে ৮ মার্চ ‘‘আর্ন্তজাতিক নারী দিবস’’পালন করা হয়। ১৯৮৫ সালে ৮ মার্চকে জাতিসংঘ আর্ন্তজাতিক নারী দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। বাংলাদেশে প্রথমবারের মত ১৯৯১ সালে এই দিবসটি পালন করা হয় ।
ইতিহাস বলছে, এই দিনটিতে ই কর্মক্ষেত্রে বিভিন্ন বৈষম্যের শিকার নারীরা রুখে দাঁড়িয়েছিলেন। সেই ইতিহাস গৌরব এবং অনুপ্রেরণার। তা অবমাননা বয়ে আনবে কেন?
বর্তমান বিশ্বের এবং আমাদের দেশ ও সমাজ বাস্তবতায় ও এর প্রয়োজন কে আমরা অস্বীকার করতে পারি না, যখন প্রতি পদে পদে পড়াশুনা জানা /না জানা, কর্মজীবী / গৃহী, ঘরের বাইরে/ভেতরে সকল বয়সি নারীরা প্রতিনিয়ত নানান বৈষম্যের মধ্যে দিন যাপন করছে। নারী দিবসের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হলো নারীর মজুরীবিহিন কাজের স্বীকৃতি,পরিবেশ সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনায় নারীর ভূমিকা, নারীর অধিকারকে মানবাধিকাররুপে ঘোষণা, উন্নয়নের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে নারীর ক্ষমতায়ন, স্বীকৃতি। আরো রয়েছে, সারাবিশ্বে নারী নির্যাতন ও নিপীড়ন বন্ধ করা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, প্রজনন প্রভৃতি ক্ষেত্রে নারীর জন্য বিদ্যমান বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা দূর করাসহ সকল ক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা।
যদি মনে হয় যে, নারী দিবস মানেই নারীর অবমাননা তাহলে তো বালিকা বিদ্যালয়, মহিলা কলেজ, মহিলা বিশ্ববিদ্যালয়, মহিলা সমিত, নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়, কন্যাশিশু দের রক্ষার জন্য কন্যাশিশু দিবস, কন্যাশিশু বর্ষ, নারী নির্যাতন সেল, জাতিসংঘ আন্তর্জাতিক নারী সংস্থা…. এসবকিছুই অবমাননাকর এবং এগুলোর প্রয়োজন নেই।

তাছাড়া,এই একটি দিনে যদি আমরা নারীরা মা, বোন, বন্ধু, সহকর্মী, সহমর্মী, প্রতিবেশী সব নারীকে একটু বেশি ভালোবাসি কিংবা শুভেচ্ছা জানাই, ভালোবাসা পাই তাতেই বা ক্ষতি কি?
যেদিন নারীরা সকল বৈষম্য আর নিপীরণ মুক্ত হবে আমরা না হয় সেদিন আন্তর্জাতিক নারী দিবসটিকে জাদুঘরে পাঠিয়ে দেবো।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here